মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

উৎকণ্ঠা স্কুল-কলেজে যৌন হয়রানিতে

হচ্ছে নির্দেশিকা, থাকবে পাঁচ সদস্যের কমিটি, অঙ্গীকারনামা দিতে হবে শিক্ষকদেরও, অঙ্গীকারের ব্যত্যয় হলে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা

আকতারুজ্জামান

উৎকণ্ঠা স্কুল-কলেজে যৌন হয়রানিতে

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) অধীন সব স্কুল-কলেজ ও দফতরে যৌন হয়রানি রোধে আসছে নির্দেশিকা। এমন অপরাধ প্রতিরোধে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে গঠন করা হবে পাঁচ সদস্যের কমিটি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদান করার ক্ষেত্রে ‘যৌন নির্যাতন করবেন না’ এমন অঙ্গীকারনামা দিতে হবে শিক্ষকদেরও। এই অঙ্গীকারের ব্যত্যয় হলে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছাত্র-ছাত্রী, নারীদের যৌন হয়রানিমুক্ত সুস্থ ও মানবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ নিয়েছে মাউশি অধিদফতর। শিগগিরই এ নির্দেশিকা চূড়ান্ত করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।

নির্দেশিকার খসড়া থেকে জানা যায়, যৌন নিপীড়নের অভিযোগ গ্রহণ, তদন্ত পরিচালনা ও সুপারিশ করতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান একটি কমিটি গঠন করবে। কমপক্ষে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির বেশির ভাগ সদস্য হবেন নারী। সম্ভব হলে কমিটির প্রধান করতে হবে নারীকে। এই কমিটির দুজন সদস্য অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নিতে হবে, যারা জেন্ডার বিষয়ে ও যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে কাজ করেন। কমিটির কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযুক্ত সদস্যকে বাদ দিয়ে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটির পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি যৌন হয়রানি সুরক্ষা কমিটি গঠন করবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি অভিযোগ বাক্সও স্থাপন করা হবে।

নির্দেশিকার তথ্যমতে, স্কুল-কলেজে শিক্ষকদের চাকরিতে যোগদানের সময় ১৫০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকার করতে হবে। অঙ্গীকারে বলতে হবে- ‘যৌন নির্যাতন করব না, প্রতিরোধে কাজ করব; দেশ ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থবিরোধী কোনো কাজ করব না; যৌতুকের বিরুদ্ধে কাজ করব’। এসব অঙ্গীকারে ব্যত্যয় করলে ফৌজদারি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে খসড়ায়। আরও বলা হয়েছে, যৌন হয়রানি সংক্রান্ত কোনো ঘটনা সংঘটিত হওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটির কাছে অভিযোগ করতে হবে। ৩০ কার্যদিবস পার হওয়ার পরও যদি অভিযোগ গ্রহণের যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে তাহলেও অভিযোগ গ্রহণ করতে হবে। অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিচয় গোপন রাখতে হবে। অভিযোগ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করবে এ কমিটি। তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে (ছাত্র ব্যতিরেকে) সাময়িকভাবে বরখাস্ত ও শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ক্লাস থেকে বিরত রাখতে হবে। অভিযোগের প্রতিবেদন পাওয়ার ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অভিযোগ দণ্ডবিধি বা দেশের প্রচলিত কোনো আইন অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য হলে অভিযোগকারী আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবে।

যৌন হয়রানির শিকার ব্যক্তি ন্যায়বিচার পাননি মনে করলে ১৫ দিনের মধ্যে আঞ্চলিক পরিচালক (কলেজ) অথবা উপ-পরিচালক (মাধ্যমিক) বরাবর আপিল করবেন। আপিলের ১৫ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হবে। অভিযোগকারী কোথাও ন্যায়বিচার না পেলে তিনি সরাসরি মহাপরিচালক বরাবর নির্ধারিত ফরমে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ গতকাল প্রতিবেদককে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন ও হয়রানি প্রতিরোধে নানা ব্যবস্থা নিচ্ছি, এরই অংশ হিসেবে যৌন হয়রানি হতে সুরক্ষা প্রদানসংক্রান্ত নির্দেশিকা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, শিগগিরই এটি চূড়ান্ত করে অধিদফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দফতরকে জানানো হবে। প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রী অথবা অন্য কেউ যৌন হয়রানির শিকার হলে দ্রুত কমিটির কাছে অভিযোগ করতে হবে। যৌন নিপীড়ন বা নির্যাতনের মতো অপরাধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বরদাশত করা হবে না।

 

সর্বশেষ খবর