জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ছয়টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৮ হাজার ৭৪৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া হবে ৫ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ২ হাজার ৮১০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এনইসি সম্মেলন কক্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান। এদিকে প্রয়োজনীয় গবেষণা পরিচালনার পাশাপাশি চাষযোগ্য সব জমিতে আবাদ করার মাধ্যমে খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়ানোর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী আবারও গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, কোনো চাষযোগ্য ঊর্বর জমি যেন অনাবাদি না থাকে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘কুমিল্লা (ময়নামতি)-ব্রাহ্মণবাড়িয়া (ধরখার) জাতীয় মহাসড়ককে (এন-১০২) চার লেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পসহ মোট ছয়টি প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চার লেন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৭ হাজার ১৮৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৪ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা এবং ভারতীয় ঋণ থেকে ২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে। প্রকল্পটি চলতি বছর জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। প্রকল্পটি কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বুড়িচং, দেবীদ্বার, মুরাদনগর, ব্রাহ্মণপাড়া, কসবা ও আখাউড়া উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে। একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া কয়েকটি অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রয়োজনীয় গবেষণা পরিচালনার পাশাপাশি চাষযোগ্য সব জমিতে আবাদ করার মাধ্যমে খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়ানোর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী আবারও গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
তিনি বলেছেন, কোনো চাষযোগ্য ঊর্বর জমি যেন অনাবাদি না থাকে। প্রধানমন্ত্রী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার নির্দেশনা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। একই সঙ্গে তিনি নিউক্লিয়ার মেডিসিনের বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান, হাসপাতালের ইকুইপমেন্টের যথাযথ ব্যবহার এবং হাসপাতালগুলোতে ডায়ালাইসিস সুবিধা বাড়াতে স্টাফ ও টেকনিশিয়ানদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এ ছাড়া একনেক বৈঠকে সরকারপ্রধান দেশে মাশরুম চাষ বাড়ানোর ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন। মূল্যস্ফীতি সম্পর্কিত এক প্রশ্নে এম এ মান্নান বলেন, ‘আশা করি অক্টোবর থেকে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে যাবে এবং সেই অবস্থা চলতে থাকবে।’ একই সঙ্গে তিনি আমন ও বোরো ধানের ফলন এবার ভালো হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত ছিল কৃষকদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আশা করি মূল্যস্ফীতি আমাদের ওপর আর খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। কেননা আগামী মাস থেকে এটি কমে আসবে।’ তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশ মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে, সেটি অব্যশই অস্বীকার করা যাবে না। যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশে এখন ১০ শতাংশের ওপরে মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এম এ মান্নান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতে থাকায় বাংলাদেশেও সরকার তেলের দাম হ্রাস করেছে। আশা করি আগামীতে সেটি আরও সমন্বয় করা হবে।’ তিনি বলেন, আশার কথা হলো, যুদ্ধের মধ্যেও রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য ও ভোজ্যতেল রপ্তানি শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সরকার সব ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্র সাধন করছে। তিনি জানান, ভারত সফর সফল হওয়ায় একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয়। বৈঠকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ‘বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর জাতীয় মহাসড়কের (এন-৮০৯) বরিশাল (চরকাউয়া) থেকে ভোলা (ইলিশা ফেরিঘাট) হয়ে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত সড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (১ম সংশোধিত)’; ‘চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে শাহ্ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’; ‘ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (ইনমাস) মিটফোর্ড, কুমিল্লা, ফরিদপুর, বরিশাল ও বগুড়া-এর সক্ষমতা বৃদ্ধি’; ‘মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণ’; ‘আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ (বাংলাদেশ অংশ) শীর্ষক প্রকল্পের মেয়াদ চতুর্থবার বৃদ্ধি’।
