রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

নকল কোর্ট ফি ঠেকাতে সব আদালতে ডিভাইস

পাঠানো হয়েছে ১১০০ ইউভি লাইট ডিটেক্টর প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বিচারকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

উচ্চ আদালত থেকে শুরু করে নিম্ন আদালত, সব জায়গায়ই ছড়িয়ে পড়েছে নকল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফির ব্যবহার। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে একটি চক্র এই নকল কোর্ট ফি সরবরাহ করে আসছে। ফলে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। তাই এবার নকল কোর্ট ফি ও স্ট্যাম্প ঠেকাতে সব আদালতে বিশেষ ধরনের ডিভাইস বসানো হচ্ছে। এরই মধ্যে ১ হাজার ১০০ ইউভি লাইট ডিটেক্টর পাঠানো হয়েছে সারা দেশের আদালতগুলোতে। একই সঙ্গে এসব ডিভাইস ব্যবহার সহজ করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে অধস্তন আদালতের বিচারকদের। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ৩৪ ধরনের মামলায় কোর্ট ফির প্রয়োজন পড়ে। এই কোর্ট ফি ছাড়া মামলা বা আবেদন দাখিল করার সুযোগ নেই। ১৫০ টাকার কোর্ট ফি থেকে মামলাভেদে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকার কোর্ট ফির প্রয়োজন পড়ে এসব মামলায়। দেশের বিভিন্ন সরকারি নথিতে কোর্ট ফি লাগানোর প্রয়োজন পড়ে। ২ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা মূল্যমানের কোর্ট ফি চালু আছে। এই কোর্ট ফি বিক্রি করে সরকারের প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়। এ সুযোগে একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তি নকল কোর্ট ফি ছাপিয়ে অল্প টাকায় বিক্রি করে। মাঝেমধ্যে এ চক্রের সদস্যরা ধরাও পড়ে। কিন্তু এতে থামছে না তাদের এই নকল কোর্ট ফি ছাপানো।

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নকল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি শনাক্তকরণে সারা দেশের আদালতগুলোতে আমরা ১ হাজার ১০০ ডিভাইস পাঠিয়েছি। প্রয়োজনে আরও ডিভাইস পাঠানো হবে। এসব ডিভাইস সঠিকভাবে ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট বিচারকদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, কোর্ট ফির মাধ্যমে সরকার যেমন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাচ্ছে, অন্যদিকে নকল কোর্ট ফির কারণে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিতও হচ্ছে। তাই প্রধান বিচারপতির নির্দেশে নকল কোর্ট ফি ও স্ট্যাম্প শনাক্তকরণে আদালতে ডিভাইস বসানো হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানায়, নকল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি শনাক্তকরণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সুপ্রিম কোর্ট, বাংলাদেশ ডাক বিভাগ, সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন বাংলাদেশ লিমিটেড, ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট ও পেমেন্ট সিস্টেম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে নকল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি ঠেকাতে কিছু স্বল্পমেয়াদি ও কিছু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের সব আদালতে ইউভি লাইট ডিটেক্টর ডিভাইস বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব ডিভাইস ব্যবহারের জন্য বিচারকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও প্রদান করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সংশ্লিষ্ট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরাও উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, মে মাসে হাই কোর্ট বিভাগের ২১টি নথি পরীক্ষা করে ২০টিতেই নকল কোর্ট ফি পাওয়ার পর টনক নড়ে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের। এরপর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির সঙ্গে তাৎক্ষণিক বৈঠক করেন। বৈঠকের সুপারিশ অনুযায়ী পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি বিশেষজ্ঞ টিম ডেকে আদালত চত্বরে অভিযান চালায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। অভিযানে জাল কোর্ট ফিসহ দুজন ভেন্ডর (স্ট্যাম্প বিক্রেতা এজেন্সির মালিক) ও একজন কোর্ট ফি সরবরাহকারীকে হাতেনাতে আটক করা হয়। পরে দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে আরও নয়জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।

 

সর্বশেষ খবর