সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

গাড়ির চাপ কমাতে ইনার রিং রোড

হাসান ইমন

গাড়ির চাপ কমাতে ইনার রিং রোড

এক প্রান্তের মানুষের অন্য প্রান্তে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে রাজধানীতে নির্মিত হচ্ছে বৃত্তাকার ইনার রিং রোড। এই রোডটি হবে আবদুল্লাহপুর থেকে বিরুলিয়া হয়ে গাবতলী-তেঘুরিয়া হয়ে চাষাঢ়া-ডেমরা হয়ে বেরাইদ-পূর্বাচল হয়ে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত বৃত্তাকার। রোডটি বাস্তবায়িত হলে শহরের এক প্রান্তের মানুষকে অন্য প্রান্তে যেতে রাজধানীতে ঢুকতে হবে না। তারা এই ইনার রোড হয়ে যেতে পারবেন। এতে রাজধানীর সড়কে গাড়ির চাপ অনেকটা কমে আসবে, একই সঙ্গে কমবে যানজট। জানা গেছে, প্রকল্পটি মূলত দুই ভাগে বাস্তবায়িত হবে। প্রথম অংশের অন্তর্ভুক্ত শহরের ২৫ কিলোমিটার রাস্তা বাস্তবায়ন করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ইস্টার্ন বাইপাস-ডেমরা থেকে শুরু করে বেরাইদ, পূর্বাচল এবং তেরমুখ হয়ে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত দীর্ঘ হবে এ রাস্তা। বাকি ৬০ কিলোমিটার পথ দ্বিতীয় অংশের অন্তর্ভুক্ত। আবদুল্লাহপুর রেলগেট-ধুর-বিরুলিয়া-গাবতলী-সোয়ারীঘাট-বাবুবাজার-কদমতলী-তেঘরিয়া-পোস্তগোলা-চাষাঢ়া-শিমরাইল-ডেমরা রুটজুড়ে থাকবে এ প্রকল্প। এই ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৩ কিমি বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন কাজ চলছে। আর বাকি ৪৭ কিলোমিটারের মধ্যে ২৫ কিলোমিটার জিওবি অর্থায়নে করার জন্য সওজ উদ্যোগ নিয়েছে। ২২ কিমি সড়কের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সংস্থাটি। তবে প্রকল্পটি এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) কাছে অর্থায়নের জন্য প্রস্তাব করেছিল সওজ। কিন্তু চীনের ব্যাংকটি অর্থায়ন না করায় সওজ নিজেই জিওবি অর্থায়নে কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে।

এ বিষয়ে সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজধানীর ভিতর ৮৫ কিলোমিটার বৃত্তাকার ইনার রিং রোড নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। এর মধ্যে ২৫ কিমি সড়ক পানি উন্নয়ন বোর্ড বাস্তবায়ন করবে। বাকি ৬০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১৩ কিলোমিটার বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে। বাকি ৪৭ কিলোমিটারের মধ্যে ২৫ কিলোমিটার সড়ক জিওবি অর্থায়নে ৩ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে সওজের হেড অফিসে পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছে। আর বাকি ২২ কিলোমিটার সড়কের জন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘টার্গেট অনুযায়ী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে সওজ দায়িত্বপ্রাপ্ত অংশের কাজ সম্পন্ন করতে পারবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহরের গাড়ির চাপ কমার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নতি এবং শহরের বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবে।’

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, বিদ্যমান বেড়িবাঁধ সড়কটি দুই লেনের। এ সড়কে আরও আটটি লেন বাড়ানো হবে। বর্ধিত ৮ লেনসহ ঢাকা রিং রোড হবে ১০ লেনের। বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর নতুন করে দুটি ব্রিজ নির্মিত হবে। এগুলো হবে ৮ লেন-বিশিষ্ট। পোস্তগোলা ব্রিজে অতিরিক্ত ৬ লেন যুক্ত করা হবে। এসব ব্রিজ নির্মাণে ব্যয় হবে অন্তত ২ হাজার কোটি টাকা। রিং রোডে বিরতিহীন চলাচল নিশ্চিত করতে গাবতলী, হাজারীবাগ, কদমতলী এবং চাষাঢ়ায় ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। আর বিরুলিয়া, বছিলা, পঞ্চবটি ও হাজীগঞ্জে ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। একই সঙ্গে পোস্তগোলা অংশে একটি ইউলুপ নির্মাণের চিন্তা করছে সওজ। আর প্রথম পর্বে ধউর থেকে গাবতলী এবং পোস্তাগোলা থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়ন করা হচ্ছে। এ কাজ বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় চিন্তা করা হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা। এর জন্য ১৫ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় দুটি ৮ লেনের সেতু এবং ৯টি ওভারপাস, ফ্লাইওভার ও ইউলুপ নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়াও ২৯টি আন্ডারপাস, ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ফুটপাত, ৬টি স্লুইসগেট এবং ৮৬ কিলোমিটার ড্রেন-কাম-ফুটপাত তৈরি করা হবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সামসুল হক বলেন, ‘রিং রোড হলে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় প্রবেশকারীরা যার যার সুবিধা মতো রিং রোড ব্যবহার করে সেখানে চলে যাবেন। যে লোক উত্তরা যাবেন, তার পোস্তগোলা ব্রিজ দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তিনি বছিলা বা গাবতলী এলাকা দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে বেড়িবাঁধ সড়ক ব্যবহার করে সে এলাকায় চলে যেতে পারবেন। অন্যান্য এলাকার যাত্রীরাও একইভাবে রিং রোডের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। রিং রোড বাস্তবায়নের প্রতি সরকারকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকার পাশে রিং রোড প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকার ট্রাফিকগুলো বিভাজন হয়ে যাবে। শহরে গাড়ির চাপ কমবে, যানজট কমবে এবং সড়কে গাড়ির গতি বাড়বে। প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন চান এই বিশেষজ্ঞ।

সর্বশেষ খবর