সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

দূতাবাসের চিঠিতে শুল্ক সুবিধাসহ চার প্রস্তাব

বাণিজ্য বাড়াতে সক্রিয় সৌদি মিশন

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরবের সরকারের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে, যে চিঠিতে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা চাওয়া ছাড়াও দেশটির সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।   বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে সৌদি সরকারের দিক থেকেও আগ্রহ রয়েছে উল্লেখ করে দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রীকে যত দ্রুত সম্ভব ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়েও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত চিঠিটি পাঠান। চিঠিতে সৌদি সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য যে ৪টি প্রস্তাব রয়েছে, সেগুলো হলো : সৌদি আরবের কাছে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা চাওয়া (২০১৩ সালে বাংলাদেশ এ ধরনের একটি প্রস্তাব সৌদি সরকারকে দিলেও পরবর্তীতে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রদূত ); (২) দেশটির সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য (এফটিএ) বা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) নিয়ে আলোচনা; (৩) দুই দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়ানোর লক্ষ্যে এফবিসিসিআই ও সৌদি চেম্বারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক চুক্তি (এমওইউ) সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ (২০০৫ সালে যে সমঝোতা চুক্তি হয়েছিল সেটির সংশোধন করা প্রয়োজন বলে মনে করছে দূতাবাস) এবং (৪) দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে আলোচনার প্রস্তাবিত প্ল্যাটফরম ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ (জেডব্লিউজি)-এর কাঠামো ও এর রূপরেখা তৈরি নিয়ে আলোচনা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে গত ১৪ জুন সৌদির পররাষ্ট্রবিষয়ক উপমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টিও তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত জাভেদ পাটোয়ারী। তিনি জানান, সাক্ষাৎকালে দেশটির উপমন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যৌথভাবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। ওই মুহূর্তে ‘বাণিজ্য সম্প্রসারণ’ ইস্যুতে দুই দেশের সরকারের গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন উপমন্ত্রী। এ ছাড়া গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সৌদি সফরের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে। ২০১৯ সালে সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের সরকারি ও  বেসরকারি প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফরের সময় দুই দেশের ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়ে স্বাক্ষরিত বিভিন্ন সমঝোতা স্মারকের পর্যালোচনা করে কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার বিষয়েও তাগিদ দেওয়া হয় চিঠিতে। এসব সফর ও সরকারি পর্যায়ে আলোচনার সূত্র ধরেই সৌদির বাণিজ্যমন্ত্রী ও  দেশটির একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলকে ঢাকা সফরের জন্য আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর বিষয়ে চিঠিতে অনুরোধ জানান বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ওই চিঠির সূত্র ধরে সৌদির বাণিজ্যমন্ত্রীকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে ইতোমধ্যে। শুধু তাই নয়, সৌদিতে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার তৈরি করতে আগামী মাসে একটি বাণিজ্য মেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। সৌদিতে শুল্ক সুবিধার বিষয়ে সচিব জানান, দেশটির কাছে ১৩৭টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধার বিষয়ে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সৌদি সফরে গিয়েও দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে শুল্ক সুবিধার প্রস্তাব তুলে ধরেন। তবে সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা যেহেতু গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের সদস্য সে কারণে পৃথকভাবে কোনো দেশকে শুল্ক সুবিধা দিতে পারে না। এক্ষেত্রে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের অন্য সদস্য দেশগুলো সম্মত হলে এ সুবিধা পেতে কোনো সমস্যা হবে না। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, সৌদি আরব যেহেতু ওই কাউন্সিলের নেতৃস্থানীয় রাষ্ট্র সে কারণে শুল্ক সুবিধার বিষয়ে কাউন্সিলের অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সম্মত করাতে ভূমিকা রাখতে পারে তারা। গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল হচ্ছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত ও বাহরাইনের মতো উপসাগরীয় আরব  দেশগুলোর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোট। বাংলাদেশ এসব দেশের সঙ্গে স্বতন্ত্রভাবেই বাণিজ্য করে থাকে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ  থেকে তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, হিমায়িত মাছ ও ওষুধ আমদানি করে থাকে সৌদি আরব। দুই দেশের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ১৩০ কোটি মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হয়ে থাকে। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে সৌদিতে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৯ কোটি ডলার। এর মধ্যে পোশাক রপ্তানি ছিল ১৪ কোটি মার্কিন ডলার। ২০২টি রপ্তানি গন্তব্যের মধ্যে সৌদি আরব বাংলাদেশের ২৪তম রপ্তানি গন্তব্য।

সর্বশেষ খবর