বুধবার, ২ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

মুদ্রাস্ফীতিতে হাবুডুবু মার্কিন অর্থনীতি

দ্য ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

লোকসানকে মেনে নিয়েই মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়তে বারবার সুদের হার বাড়াতে হচ্ছে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা-লোকসান সাম্প্রতিক সপ্তাহে বেড়েছে। কারণ এর আগে প্রদত্ত ঋণের বিপরীতে সুদসহ যা আদায় হচ্ছে তা কোনোভাবেই বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সমন্বয়ে সক্ষম হচ্ছে না। বিশ্বখ্যাত এবং সারা বিশ্বে সর্বাধিক প্রচারিত ‘দ্য ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল’ ৩১ অক্টোবর চলমান অর্থনৈতিক অস্থিরতার আলোকে এমন মত ব্যক্ত করেছে। অর্থাৎ আগে কখনো এমন নাজুক পরিস্থিতির অবতারণা না হওয়ায় সবাইকে অসহায় হতে হয়েছে। লোকসানের পরিমাণ প্রতি মুহূর্তে বাড়লেও তা ফেডারেল প্রশাসনের নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হচ্ছে না। কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে নীতি-নির্ধারকদের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করাও হচ্ছে না। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার মুনাফা অর্জনের পর সেই অর্থ ট্রেজারিতে জমা করেছিল। যাতে ফেডারেল তহবিলের ঘাটতি কমেছিল। সে অর্থ ফুরিয়ে গেলে কেন্দ্রীয় সরকারকে উচ্চ সুদে ঋণ নিতে হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে প্রকাশিত প্রতিবেদনে। কেন্দ্রীয় সরকার যদি এভাবে লোকসানের সাগরে হাবুডুবু খেতেই থাকে তবুও কংগ্রেসের শরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজন হবে না। এর পরিবর্তে তারা রিজার্ভের ব্যালেন্স শিটে ‘আইওইউ’ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে। ভবিষ্যতে পরিস্থিতির উন্নতি হলে ধার করা ঋণ পরিশোধ করা যাবে। অর্থাৎ একই কর্তৃপক্ষের অর্থ স্থানান্তর করতে হবে উ™ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে। এর আগেও মন্দাকালে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয় বিভিন্ন দেশে। আর এ ব্যবস্থাটি এমন একটি প্রক্রিয়ার প্রতিরূপ যা শতভাগ ট্যাক্সের মধ্যে থাকে এবং ভবিষ্যতের আয়ের সঙ্গে বর্তমান ক্ষতির পরিমাপ করে- এমন মন্তব্য করেছেন মর্গান স্ট্যানলির চিফ গ্লোবাল ইকোনমিস্ট সেথ কার্পেন্টার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৮.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদের পোর্টফোলিওর বেশির ভাগই সুদ-বহনকারী এবং মর্টগেজ সিকিউরিটির বিপরীতের সম্পদ। ২০০৮ সালের মন্দার প্রাক্কালে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক তার পোর্টফোলিও ছোট রেখেছিল, মাত্র এক ট্রিলিয়ন ডলার। এর প্রধান দায় ছিল বাজারে ছাড়া মুদ্রার ওপর। কেন্দ্রীয় সরকার যদি স্বল্পমেয়াদি সুদের হার কমাতে বা বাড়াতে চায় তবে ক্রমবর্ধমান পরিমাণে রিজার্ভের ওপরে এবং নিচে স্থান্তরিত করতে পারে। সেই সংকটের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার শূন্যে নামিয়েছিল এবং অতিরিক্ত অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্রদানের জন্য বিপুল পরিমাণের বন্ড কিনেছিল। সেটি ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে রিজার্ভ দিয়ে সয়লাব করে। অর্থাৎ জনজীবনে স্বস্তি আনতে অপরিসীম ভূমিকা রেখেছিল। সুদের হারের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে ফেডারেল রিজার্ভ কর্তৃপক্ষ সুদের হার পরিচালনা-পদ্ধতিকে সংশোধন করে। নতুন পদ্ধতিটি ইতোমধ্যেই অন্য অনেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রচলন করেছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকের রিজার্ভের ওপর সুদের হার স্বল্প সময়ের জন্য নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। গত এক দশক ধরে তুলনামূলকভাবে কম স্বল্পমেয়াদি সুদের হার মানে ফেডারেল তার সিকিউরিটিজ থেকে বেশি আয় করেছে, যা রিজার্ভ বা অন্যান্য খাতের ঋণের সুদ হিসেবে পরিশোধ করেছে। সব ব্যয় নির্বাহের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বছর সরকারকে প্রায় ১০৭ বিলিয়ন ডলার ফেরত দিয়েছে। সেন্ট লুইস ফেডারেল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জেমস বুলার্ড সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, গত ১০ বছরে তারা ট্রেজারিতে এক ট্রিলিয়ন ডলারের মতো ফেরত দিয়েছেন। তারা সেই অর্জিত অর্থ রিজার্ভ ব্যাংকে রাখতে পারতেন কিন্তু তা করেননি। তবে এখন সুদের হার ক্রমান্বয়ে বাড়ানো হচ্ছে। তাই পরিস্থিতিও পাল্টাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর