শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

থমকে আছে জেট এ-১ পাইপলাইন প্রকল্প

শাহজালালে পাইপলাইনে তেল সরবরাহে আরও দেরি - ঠিকাদারি সংস্থাকে অর্থায়ন বন্ধের নির্দেশ

জিন্নাতুন নূর, রূপগঞ্জ থেকে ফিরে

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে এবং ঝামেলামুক্তভাবে তেল সরবরাহ করতে রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জ ব্রিজ থেকে কুর্মিটোলা এভিয়েশন ডিপো পর্যন্ত ১৬ কি.মি. দৈর্ঘ্যরে পাইপলাইন তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল সরকার। কিন্তু করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুুদ্ধ, ভূমি অধিগ্রহণে অতিরিক্ত সময় ব্যয়সহ নানা কারণে এ প্রকল্পটির কাজের মেয়াদ কয়েকবার বৃদ্ধি করেও কাজ শেষ হয়নি। চলতি ডিসেম্বরে এর কাজ শেষ করার কথা থাকলেও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাজ শেষ হতে আরও ছয় মাস প্রয়োজন। সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয়ে লাগাম টানা যাচ্ছে না। কয়েক মাস ধরে এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে।   

এ অবস্থায় সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন শেষে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের প্রতি বিরক্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। একই সঙ্গে তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হওয়ায় পদ্মা অয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু

সালেহ ইকবালকে প্রকল্পটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অর্থায়ন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজের জ্বালানি তেল সহজে সরবরাহের লক্ষ্যে ‘জেট এ-১ পাইপলাইন ফ্রম পিতলগঞ্জ  (নিয়ার কাঞ্চন ব্রিজ) টু কুর্মিটোলা এভিয়েশন ডিপো ইনক্লুডিং পাম্পিং ফ্যাসিলিটিজ’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ জন্য পিতলগঞ্জ থেকে কুর্মিটোলা এভিয়েশন ডিপো পর্যন্ত স্থাপিত হচ্ছে প্রায় ১৬ কি.মি. দৈর্ঘ্যরে ৮ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। পরে এক বছর পাঁচ মাস বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন এবং পরে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লি. এরই মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে এর ঠিকাদারকে ১১১ কোটি টাকা দিয়েছে।

সরেজমিন প্রকল্প এলাকায় গিয়ে জানা যায়, ভূমি অধিগ্রহণে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের কিছুটা দেরি হয়েছে। এ জন্য প্রকল্পের কাজ শুরু করতেও দেরি হয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্প ব্যয় ২২৮ কোটি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩৯ কোটি টাকা।

প্রকল্পের পরিচালক জিয়াউল হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ৩০০ ফিট রাস্তায় রাজউকের চলমান বর্তমান কাজের জন্য এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আরও সময় লাগছে। এখানে ১০-১২টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ছাড়পত্র আদায়ে সময় লেগেছে। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। এখনো প্রকল্পের অনেক কাজ বাকি রয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এটি বাস্তবায়নে আরও ছয় মাস লাগতে পারে। চট্টগ্রাম থেকে স্যালো ট্যাংকারে শীতলক্ষ্যা নদী হয়ে প্রকল্পের কাছেই যে জেটি হবে সেখানে জেট ফুয়েল নিয়ে আসা হবে। এরপর তা স্টোরেজে সংরক্ষণ করা হবে। তারপর বিমানবন্দর পর্যন্ত মাটির নিচ দিয়ে যাওয়া পাইপলাইনে তেল যাবে। এ লক্ষ্যে মোট ৯ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার তিনটি স্টোরেজ তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়াও পাইপলাইন বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এখন যে জেট ফুয়েল আসছে তা বিমানবন্দর থেকে ৪০ কি.মি. দূরে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল থেকে ট্রাকে করে আনা হয়। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ট্রাকে করে তেল নিয়ে আসার যে ঝামেলা এবং ঝুঁকি তা কমে আসে। একই সঙ্গে বছরে ২৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর