সোমবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পে আগ্রহ বিদেশিদের

পাঁচ বছরে বিনিয়োগ ৫২ হাজার কোটি টাকা ♦ কর্মসংস্থানের টার্গেট ১ লাখ ♦ নীতিমালা করছে শিল্প মন্ত্রণালয় ♦ প্রকল্প ব্যয়ের অর্ধেক পাওয়া যাবে নমনীয় ঋণ ♦ সর্বোচ্চ ২০ কোটি টাকা দেওয়া হবে সুদ সহায়তা ♦ লভ্যাংশের ওপর তিন বছর করপোরেট কর মওকুফ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পে আগ্রহ বিদেশিদের

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে এখন কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পে গুরুত্ব দিতে যাচ্ছে সরকার। আগামী পাঁচ বছরে এই শিল্পে অন্তত ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার  দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের লক্ষ্য নিয়ে একটি নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। স্থানীয় মুদ্রায় এই বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা। যার মাধ্যমে ১ লাখ মানুষের নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে কৃষিপণ্য এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের সম্ভাবনা ব্যাপক। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে এ দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়ে চলছে। যে কারণে মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হচ্ছে। উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি এখন উন্নয়নশীল বিশ্বের ভোক্তারাও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রীর দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এর ফলে কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি দল বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে এ খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কাঠামো চুক্তিতে কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পে অগ্রাধিকার দিয়েছে। জাপান ও সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্যের বিষয়ে যে আলোচনা শুরু করেছে সেখানেও তারা কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পে বিনিয়োগের বিষয়টিকে ওপরের দিকে রেখেছে। 

বাংলাদেশে প্রাথমিক খাদ্যপণ্য ছাড়াও রান্নার জন্য তৈরি পণ্য উৎপাদনে ছোট-বড় অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। বসুন্ধরা গ্রুপ, স্কয়ার, প্রাণ, আকিজ, এসিআই, ব্র্যাকসহ বেশ কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিজেদের ব্র্যান্ডের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য দেশের বাজারে সরবরাহ ছাড়াও বিদেশে রপ্তানি করছে। কৃষি খাতের এই প্রক্রিয়াজাত পণ্যগুলোকে এখন দেশি-বিদেশি মার্কেটে সরবরাহ করতে এ খাতে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ‘কৃষি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প নীতিমালা-২০২২’ নামে একটি খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে, যেটি খুব শিগগিরই অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ ফয়েজুল আমীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খসড়া নীতিমালাটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। আশা করছি চলতি অর্থবছরের মধ্যেই অনুমোদন পাওয়া যাবে। এর ফলে দেশে কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য শিল্পে নতুন উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন বলেও জানান তিনি।

নীতিমালায় থাকছে যে সুবিধা : খসড়া নীতিমালায় কৃষি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য নতুন ও পুরনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন ধাপের উন্নয়নে নামমাত্র সুদে মূলধন সহায়তা, ঋণের সুদ সহায়তা, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানিতে শুল্ক

 অব্যাহতি, গবেষণায় প্রণোদনা, পরীক্ষাগার তৈরিতে অনুদান, আয়কর মওকুফ, দক্ষ কর্মী তৈরিতে প্রণোদনা সুবিধার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিনিয়োগ করবে তাদের প্রকল্প ব্যয়ের ৫০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকা নমনীয় ঋণ/নামমাত্র সুদে ঋণ আকারে মূলধন সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে নীতিমালায়। পুরনো খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ইউনিটের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং আধুনিকায়নে কেউ যদি বিনিয়োগ করতে চায় তবে প্রকল্প ব্যয়ের ২৫ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকা ঋণ আকারে মূলধন সহায়তা দেওয়া হবে। কৃষি, হর্টিকালচার, দুগ্ধজাত, মাংস জাতীয় পণ্যের কোল্ড চেইন স্থাপনের জন্যও সরকার এ সুবিধা দেবে। 

খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ইউনিট এবং কোল্ড চেইন অবকাঠামোর জন্য স্থায়ী মূলধন বিনিয়োগের শর্তে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি বছর ৫ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত সুদ সহায়তা দেওয়া হবে। কারখানা চালু হওয়ার সাত বছর পর্যন্ত এ সুবিধা বিদ্যমান থাকবে। তবে পিপিসি এবং পিসিসি এর ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা সুদ সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। শিল্প ইউনিটের জন্য আমদানি করা মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি শুল্ক মওকুফ করা হবে। বিদ্যমান শিল্পের রাজস্বের/লভ্যাংশের ওপর করপোরেট আয়কর তিন বছরের জন্য মওকুফ করা হবে। ক্ষুদ্র শিল্পের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার পাঁচ বছর পর্যন্ত ভ্যাট মওকুফ হবে। মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার সাত বছর পর্যন্ত ৭৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ এবং বড় শিল্পের জন্য বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার সাত বছর পর্যন্ত ৫০ শতাংশ ভ্যাট মওকুফের প্রস্তাব করা হয়েছে নীতিমালায়। নীতিমালায় গ্রেডিং এবং প্যাকিংসহ ফল-মূল-সবজি, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, মাছ, হাঁস-মুরগি, ডিম, মাংস ও মাংসজাতপণ্য, ফুল, শস্যদানা প্রক্রিয়াকরণে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ধানের তুষ, তেলবীজ হতে  ভোজ্য তেল তৈরি, ফল ও সবজি থেকে পানীয় (জুস) তৈরির খাতকেও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রুটি, তেলবীজ, নাস্তা, বিস্তুট, ¯œ্যাকস, কোকোসহ কনফেকশনারি প্রক্রিয়াকরণ ছাড়াও নারিকেল তেল পরিশোধন, যবের মন্ড, প্রোটিনজাত খাদ্য, উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার, মায়ের দুধের বিকল্প খাবারও স্থান পেয়েছে নীতিমালায়। একই সঙ্গে গুণগতমান রক্ষার পাশাপাশি হালাল ব্র্যান্ডিংয়ের কৌশল অবলম্বনের কথাও বলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর