সোমবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

তীব্রতা ও বিস্তৃতি বাড়ছে শৈত্যপ্রবাহের

নিজস্ব প্রতিবেদক

তীব্রতা ও বিস্তৃতি বাড়ছে শৈত্যপ্রবাহের

শীতের তীব্রতা ক্রমেই বাড়ছে। নতুন করে ছয় জেলায় বিস্তৃত হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। গতকাল চার বিভাগের ২৩ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ, যা আজ কিছু এলাকায় প্রশমিত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় ৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হাড় হিম করা ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। কাজে বের হতে পারছে না খেটে খাওয়া মানুষ। ভয়াবহ কষ্টে আছে ছিন্নমূল মানুষ। ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল ঢাকামুখী আটটি ফ্লাইট শাহজালাল বিমানবন্দরে নামতে না পেরে ফিরে যায়। বিলম্বিত হয় আরও সাতটি ফ্লাইট। ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল ও সড়ক যোগাযোগ। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর ভিড়। অধিকাংশই শিশু ও বৃদ্ধ। গতকাল সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া জেলাসহ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগে এখন পর্যন্ত শৈত্যপ্রবাহ বিস্তৃত না হলেও ময়মনসিংহ ও বরিশালে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে রয়েছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে শীতের প্রকোপ অন্য বিভাগগুলোর তুলনায় কিছুটা কম রয়েছে। গতকাল ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, আজ সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে, যা দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। তবে আগামী দুই দিনে রাতের তাপমাত্রা ফের কিছুটা কমতে পারে। সপ্তাহের শেষ দিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে দুই দিন পর গতকাল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কয়েক ঘণ্টার জন্য সূর্যের দেখা মেলে। এতে শীত কিছুটা কমে। তবে সন্ধ্যা নামতেই আকাশ কুয়াশায় ঢাকতে শুরু করে, সেই সঙ্গে শুরু হয় শীতল বাতাস। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন- যশোর : নতুন বছরে যশোর অঞ্চলে শীত-কুয়াশার দাপট ২০১৩ সালকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। ওই বছর জানুয়ারিতে যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল যশোরে রেকর্ড হয় ৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। এক দিনের ব্যবধানে কমেছে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রচ  ঠা া ও কুয়াশার কারণে শহরের বেশির ভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দিনের অনেকটা সময় বন্ধ থাকছে। কাজে যেতে না পেরে বিপাকে পড়েছে নিম্নবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষ। দিনের বেলাতেও হেড লাইট ও ফগ লাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। চুয়াডাঙ্গা : টানা তিন দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। চার দিন ধরে চলছে মৃদু ও মাঝারি শৈতপ্রবাহ। গতকাল জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলাজুড়ে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। হাসপাতালে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। আরও দু-এক দিন শীতের এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান। রাজশাহী : আট দিনের ব্যবধানে রাজশাহীতে কমেছে সাড়ে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। গতকাল সকাল ৭টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহী অঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। চলতি সপ্তাহে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। মাঝে-মধ্যে সূর্যের দেখা মিললেও নেই তাপ। এ কারণে দিনভরই শীতের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে। রংপুর : কয়েকদিন ধরে বয়ে যাওয়া উত্তরের কনকনে ঠা া বাতাসে মানুষের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে। বেড়েছে শীতবস্ত্রের বেচাকেনা। সূর্যের মুখ খুব অল্প সময়ই দেখা যাচ্ছ। গতকাল রংপুরে এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এবার পুরাতন কাপড়ের দাম অনেক বেশি বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতারা। গাইবান্ধা : শীতের তীব্রতা বাড়ায় দুর্ভোগে আছেন হতদরিদ্র পরিবারের লোকজন। শীতের কারণে দিন আনা দিন খাওয়া এসব মানুষ কাজেও যেতে পারছেন না। প্রতিদিনের খাবার জোগাড় করতেই যেখানে হিমশিম অবস্থা। গরম কাপড় কেনার সার্মথ্য তাদের নেই। জেলার সাত উপজেলার ৭ লক্ষাধিক অতিদরিদ্র মানুষের জন্য এবার সরকারিভাবে বিতরণ করা হয়েছে মাত্র ৪১ হাজার ৬৫০টি কম্বল। কম্বল বিতরণে বেসরকারি উদ্যোগও এবার নেই বললেই চলে। ঝিনাইদহ : ভোর থেকেই ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে প্রকৃতি। দুর্ঘটনা এড়াতে সড়ক-মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। পেটের দায়ে শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে কাজে ছুটছেন নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। শীত থেকে বাঁচতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিরাবরণের চেষ্টা করছেন হতদরিদ্র মানুষ। দিনাজপুর : কনকনে শীতল বাতাসে কাহিল হয়ে পড়ছেন ছিন্নমূল মানুষ ও প্রান্তিক চাষিরা। কনকনে ঠা া ও কুয়াশার কারণে বোরো চাষের মাঠ প্রস্তুত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কুয়াশায় নষ্ট হচ্ছে বীজতলার চারা। সদরের চকরামপুর গ্রামের কৃষক গৌতম দাস জানান, তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে এ মৌসুমে এখনো বোরোর চারা রোপণ করতে পারেননি। সময়মতো চারা রোপণ করতে না পারলে বীজতলায় চারা নষ্টের আশঙ্কা রয়েছে।

 কুড়িগ্রাম : গতকাল সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ বছরে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। দুপুরের আগে সূর্যের দেখা মিলছে না। সন্ধ্যা নামতেই জেঁকে বসছে হাড় হিম করা শীত। গরম কাপড়ের অভাবে তীব্র শীতে কষ্টে ভুগছেন ছিন্নমূল ও হতদরিদ্র মানুষ। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন জেলার নদ-নদী বেষ্টিত সাড়ে ৪ শতাধিক চরাঞ্চলের মানুষ। দাউদকান্দি (কুমিল্লা) :  কুমিল্লার দাউদকান্দিতে গত চার দিনের হাড় কাঁপানো শীত ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে দাউদকান্দি-মেঘনা ও তিতাস উপজেলার দিনমজুর, শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ ভয়াবহ কষ্টে আছেন। আবার শীত উপেক্ষা করে কাজের সন্ধ্যানে বেরও হতে পারছেন না।  ফেরি চলাচলে বিঘ্ন : ঘন কুয়াশার কারণে ১২ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর মানিকগঞ্জের আরিচা-কাজিরহাট ও ধাওয়াপাড়া-নাজিরগঞ্জ নৌরুটে গতকাল সকাল ১০টার দিকে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়। কুয়াশার কারণে প্রতিদিনই ফেরি চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। একইভাবে শরীয়তপুরের নরসিংহপুর-চাঁদপুরের হরিণাঘাট নৌরুটেও শনিবার রাত থেকে ছয় ঘণ্টা বন্ধ ছিল ফেরি চলাচল।

সর্বশেষ খবর