সোমবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

পুলিশের ১৩ দাবি

শেষ হলো পুলিশ সপ্তাহ

সাখাওয়াত কাওসার

পুলিশের ১৩ দাবি

দূতাবাসে পুলিশ কর্মকর্তা পদায়ন এবং আইজিপির কাছে বিভাগীয় মামলার আপিলের ক্ষমতাসহ ১৩টি দাবি করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে উত্থাপিত এসব দাবির অনেকগুলোই পুনরায় গতকাল বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সামনে তুলেছে পুলিশ। উত্থাপিত এসব দাবি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের আশ্বাসও মিলেছে। উত্থাপিত দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল বৈষম্য নিরসনে পৃথক পুলিশ বিভাগ গঠন, পুলিশপ্রধানকে ফোর স্টার করা, পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়, পুলিশ সাইবার ব্যুরো, ডিএমপি কমিশনার ও র‌্যাবের ডিজিসহ ১০টি পদ ‘গ্রেড-১’ করা এবং পার্বত্য এলাকার নিরাপত্তায় এপিবিএন ব্যাটালিয়ন গঠন।

জানা গেছে, ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩’-এর শেষ দিন গতকাল সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত রাজারবাগ পুলিশ অডিটরিয়ামে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-সচিবদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের চাহিদা ও সমস্যার কথা তুলে ধরেন। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। এ ছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবসহ পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পুলিশের যৌক্তিক সমস্যা সমাধানে আইন মন্ত্রণালয়ের দরজা সব সময় খোলা রয়েছে। একটা দেশে স্বাধীনভাবে চলার জন্য, সমাজের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য পুলিশের ভূমিকা অপরিহার্য। পুলিশ নিষ্ঠার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।’

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে পুলিশ বাহিনী আজ একটি সম্মানজনক গর্বিত অবস্থানে আসতে পেরেছে। একটি দেশের এগিয়ে যাওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে জনগণকে শান্তিতে রাখা। পুলিশ জনগণের বন্ধু হিসেবে সেভাবে নিজেদের প্রস্তুত ও প্রমাণ করেছে। সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জন করেছে।’

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ বলেন, ‘পুলিশ বাহিনী জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিভিন্ন সময় দেশের রাজনৈতিক সংকটে পুলিশ বাহিনী জনগণের পাশে থেকেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে।’ তিনি বলেন, ‘জঙ্গি দমনে পুলিশ যথেষ্ট সক্ষমতা অর্জন করেছে। হলি আর্টিজান অভিযানে পুলিশ রক্তের বিনিময়ে প্রমাণ করেছে তারা দেশের জন্য অকুতভয়। অনলাইন প্ল্যাটফরমে দেশ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারী সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বাহিনী কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।’

সভাপতির বক্তব্যে আইজিপি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু পুলিশকে জনগণের পুলিশ হিসেবে গড়ে তুলতে বলেছেন। সরকার ও পুলিশ বাহিনী সে লক্ষ্যেই কাজ করছে। আমাদের আজকের প্রস্তাবে যেসব সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির কথা তুলে ধরা হয়েছে, তা জনগণের সেবা বাড়ানোর জন্যই। আমরা জনগণের পুলিশ হিসেবে দেশের জন্য কাজ করতে চাই, সেবা করতে চাই, যাতে দ্রুততম সময়ে মানুষের কাছাকাছি যাওয়া যায়। তাই সরকারের কাছে উত্থাপিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন প্রয়োজন।’

যে দাবিগুলো উঠেছে : শনিবার রাতে সম্মেলনে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নূরুল ইসলামসহ ১১ জন কর্মকর্তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে ১৩টি দাবি তুলে ধরেন। রাত পৌনে ৮টায় শুরু হওয়া সম্মেলন শেষ হয় রাত ১১টায়। জেলার পুলিশ সুপার থেকে বিভিন্ন ইউনিটপ্রধান ও ডিএমপির ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, আইজিপি এবং সিনিয়র সচিব দুজনই গ্রেড-১-এর কর্মকর্তা। তাই বিভাগীয় মামলার আপিল, পদায়ন, বদলির ক্ষমতা আইজিপির কাছে থাকা প্রয়োজন। শনিবার রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, পঞ্চম গ্রেডের পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হলে এর আপিল যাতে আইজিপির কাছে করা যায়, সে ব্যবস্থা হওয়া উচিত। এ ছাড়া পদায়ন, বদলিও আইজিপির নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত। কারণ আইজিপি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব দুজনই গ্রেড-১ পদমর্যাদার কর্মকর্তা। পুলিশের বিশেষ শাখার প্রধান মনিরুল ইসলাম সম্মেলনে বক্তব্যে বলেন, ‘পুলিশ ১৯৮৫ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পুলিশ হেডকোয়ার্টার লিখে আসছে। কিন্তু এরপর পুলিশ অধিদফতর করা হলো। পুলিশের আলাদা ও স্বতন্ত্র বিভাগ হওয়া দরকার। পুলিশের ২৭০ জন এসপির বর্তমানে কোনো গাড়ি নেই। তাদের অপারেশনাল গাড়ি প্রয়োজন।

তিনি বলেন, পুলিশে থাকা সিভিল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবসরকালীন রেশন সুবিধা চালু করা দরকার। বর্তমানে তারা অবসরকালীন কোনো রেশন পান না।

এ ছাড়া বলা হয়, ২০২০ সাল থেকে পুলিশের টিএডিএ ভাতা বন্ধ। তা চালুর আহ্বান জানানো হয়। পুলিশপ্রধানের ফোর স্টারের দাবি জানানো হয়। বর্তমানে থ্রিস্টার পান আইজিপি। পার্শ্ববর্তী সব দেশের আইজিপি ফোর স্টার পান বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানানো হয়। অপরদিকে গ্রেড-১-এর ১০টি পদের কথা বলেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার হয়েও পুলিশপ্রধান ৫ কোটি টাকার বেশি কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এটিকে বাড়িয়ে ৫০ কোটি করার দাবি জানানো হয়। পুলিশের প্রতিটি বিভাগীয় হাসপাতালকে উন্নত হাসপাতালে রূপান্তর করার দাবি জানানো হয় সম্মেলনে। পাশাপাশি রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজে রূপান্তর করে বঙ্গবন্ধু ইউনিভার্সিটি অব পুলিশ অ্যান্ড ক্রিমিনাল জাস্টিস নামে একটি প্রতিষ্ঠান করার অনুরোধ করেন পুলিশ কর্মকর্তারা। দায়িত্ব পালনকালে মৃত্যুবরণকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার ক্ষমতা বিভাগীয় কমিশনারের কাছ থেকে স্থানান্তর করে পুলিশের কাছে দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। এ ছাড়া পুলিশের জন্য একটি স্পোর্টস কমপ্লেক্স স্থাপনেরও অনুরোধ জানানো হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর