বুধবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

খুলনায় ১ লাখ টাকা বিক্রি হয় ৭০ হাজারে!

জাল টাকা তৈরির কারখানা

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

‘সাধারণভাবে দেখে এই জাল টাকা চেনার উপায় নেই। নোটে হলোগ্রাফিক নিরাপত্তা সুতা, জলছাপ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম-সবই প্রায় আসল নোটের মতো। ১ লাখ টাকার জাল নোট বিক্রি হয় ৭০ হাজার টাকায়। এক্ষেত্রে এজেন্টদের দেওয়া হতো ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। দেশের বিভিন্ন স্থানে আলাদা এজেন্টের মাধ্যমে এই জাল নোট বিক্রি হতো। ৫০ টাকা, ১০০ টাকা, ৫০০ টাকা ও ১০০০ টাকার জাল নোট তৈরি করা হতো কারখানায়।’ খুলনার ফুলতলা দামোদর সাহাপাড়া এলাকায় জাল নোট ছাপানোর সরঞ্জামসহ কারখানার সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব-৬। এখান থেকে জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামাদি- ২টি প্রিন্টার, লেমিনেটিং মেশিন, জাল টাকা তৈরির ডাইস, আঠা, হেয়ার ড্রায়ার, জলছাপ সংবলিত কাগজ ৩০০ পিস, বিভিন্ন রঙের তরল, জাল টাকা তৈরির দুই কার্টন সাদা কাগজ উদ্ধার হয়েছে। এ সময় ১৪ লাখ ৮৩ হাজার জাল টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত মো. সাইফুল জামান ও জাহিদুল ইসলাম নামে দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। প্রায় ২০ কোটি টাকার জাল নোট তৈরির পরিকল্পনা করেছিল চক্রটি। গত ছয় মাস ধরে চক্রটি জাল নোট তৈরি করছিল। পরে ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এজেন্টদের মাধ্যমে এই জাল নোট সরবরাহ করা হতো।

গতকাল খুলনার লবণচরায় র‌্যাব কার্যালয়ে প্রেসব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৬-এর পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মোসতাক আহমেদ। তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার সন্ধ্যায় খুলনার আড়ংঘাটা দক্ষিণপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে জাল টাকা তৈরি চক্রের মূলহোতা সাইফুল জামান ও চক্রের সদস্য জাহিদুল ইসলামকে ১০ লাখ জাল টাকাসহ গ্রেফতার করা হয়। তারা ওই টাকা প্রতি লাখে ৩০ হাজার টাকা কমিশনে বিক্রির চেষ্টা করছিল। পরে তাদের স্বীকারোক্তিতে ফুলতলা দামোদর সাহাপাড়া এলাকা থেকে জাল টাকা তৈরির কারখানার সন্ধান পায় র‌্যাব। র‌্যাব-৬-এর পরিচালক জানান, কারখানা যেন একটা এলাহি ব্যাপার। কারখানা থেকে প্রিন্টার, লেমিনেটিং মেশিন, জাল টাকা তৈরি ডাইস, কেমিক্যাল, জল ছাপ সংবলিত কাগজসহ ৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকা উদ্ধার হয়।

র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, এই চক্রের আরও কয়েকজনের সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। এর মধ্যে জাল টাকা তৈরির মূল কারিগর জুয়েল ও তার স্ত্রী পলাতক রয়েছে। জুয়েল অন্য আরেকটি চক্রের সঙ্গে যুক্ত ঢাকা বা মুন্সীগঞ্জের কোনো একটি স্থানে টাকা তৈরির প্রশিক্ষণ নেয়। পরে ফুলতলায় এসে ছয় থেকে সাত মাস ধরে জাল নোট ছাপানোর কাজ করছিল। জাল নোট ছাপানোর সঙ্গে আলাদাভাবে কয়েকটি চক্র জড়িত। চক্রের সবাইকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন শীতকালীন মেলা, বাণিজ্য মেলা ও কোরবানির সময় পশুর হাটকে টার্গেট করে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। উদ্ধার করা জাল টাকা, অন্যান্য আলামত ও গ্রেফতার আসামিদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর