শিরোনাম
শনিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

শীতের রোগে ভুগছে মানুষ

দুই মাসে মারা গেছেন ৮১ জন সবচেয়ে ঝুঁকিতে শিশুরা, বাড়ছে আগুনে পোড়া রোগী

জয়শ্রী ভাদুড়ী

শীতের রোগে ভুগছে মানুষ

শীতের তীব্রতা বাড়ায় নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের রোগসহ শীতকালীন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত বাড়ছে। গত দুই মাসে মারা গেছেন ৮১ জন। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে শীতকালীন রোগে আক্রান্তের হার বেশি। আক্রান্ত হয়ে দেরিতে হাসপাতালে যাওয়ায় জটিলতা ও মৃত্যু বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ঢাকার বাইরে থেকে যেসব রোগী আসছে তাদের অবস্থা বেশ জটিল। অভিভাবকদের অবহেলার কারণে ঢাকার অনেক রোগীর পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পর হাসপাতালে আসছে। ফলে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। এ ছাড়া অন্য রোগে আক্রান্ত রোগীর নিউমোনিয়া বা শীতকালীন রোগ হলেও মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। গত রবিবার আমাদের হাসপাতালে নিউমোনিয়ায় এক শিশু রোগী মারা গেছে, যার কিডনির সমস্যা ছিল। তাই অন্য রোগ থাকলে তাদের শীতকালীন রোগগুলো যাতে না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ১৪ নভেম্বর থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শীতে শ্বাসতন্ত্রের রোগ ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৮৬ হাজার ২৯৫ জন, মারা গেছেন ৮১ জন। এর মধ্যে ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯০২ জন, মারা গেছেন তিনজন।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে কথা হয় ছয় মাস বয়সী রিয়ার বাবা-মায়ের সঙ্গে। রিয়ার বাবা রাইসুল ইসলাম বলেন, ‘চার দিন আগে শিশুর ডায়রিয়া নিয়ে মহাখালী আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। ডায়রিয়া ভালো হয়েছে কিন্তু দুই দিন আগে থেকে জ্বর আসে। সকালে ১০৪ ডিগ্রি জ্বর ছিল এবং শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছিল। একটা সাপোজিটরি দিয়ে মেয়েকে নিয়ে আসি এই হাসপাতালে। ডাক্তার দেখেছেন, টেস্ট দিয়েছেন, এখনো টেস্টের রিপোর্ট আসেনি।’

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ইনস্টিটিউটে প্রতিদিন নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে গড়ে ২০টি শিশু ভর্তি হচ্ছে। এ ছাড়া ডায়রিয়া, অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। শিশু হাসপাতালের মতো ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১০টি শিশু নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। শীতে নিউমোনিয়ার পাশাপাশি ডায়রিয়া বেড়েছে। আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে প্রতিদিন ডায়রিয়া নিয়ে ৩৫০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। তার মধ্যে ৬০%-৭০% শিশু রোগী, যার বেশির ভাগই পাঁচ বছরের কম বয়সী। চিকিৎসকরা বলেন, দুই মাসের কম বয়সী শিশুদের শ্বাস নেওয়ার হার মিনিটে ৬০ বারের বেশি, দুই মাস থেকে ১২ মাস বয়সী শিশুদের মিনিটে ৫০ বারের বেশি এবং ১২ মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুর মিনিটে ৪০ বারের বেশি শ্বাস-প্রশ্বাস নিলে তাকে শ্বাসকষ্ট বলা হয়। এর সঙ্গে শিশুর বুকের পাঁজরের নিচের অংশ দেবে গেলে, জ্বর থাকলে, শ্বাস নেওয়ার সময় কোনো শব্দ হলে, বমি হলে তা নিউমোনিয়ার লক্ষণ। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। ঠান্ডা, কাশি হলেই শিশুকে ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাওয়ানো যাবে না। শীত জেঁকে বসতেই শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে বাড়ছে আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগীর সংখ্যা। বেশির ভাগ রোগীই গরম পানি পড়ে আহত হচ্ছে। এর মধ্যে বড় অংশ শিশু। হাসপাতালে শয্যা ফাঁকা না থাকায় অনেক রোগীকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। রোগীর চাপ সামাল দিতে গত বৃহস্পতিবার ১৪টি আইসিইউ শয্যা চালু করেছে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট। হাসপাতালের আবাসিক সার্জন এস এম আইউব হোসেন বলেন, প্রতিদিন হাসপাতালে ৭০-৮০ জন রোগী আসছে। অধিকাংশই গরম পানি শরীরে পড়ে আহত হয়েছে। আহতদের বড় অংশ শিশু। শীত এলেই হাসপাতালে আগুনে পুড়ে আহত হওয়া রোগী বাড়তে থাকে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর