বায়ুদূূষণে ঢাকার আশপাশেও নেই বিশ্বের কোনো শহর। গতকাল বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় টানা তৃতীয় দিনের মতো শীর্ষস্থানে ছিল ঢাকা। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকালে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) যথাক্রমে ১৯৩ ও ২৩৬ স্কোর নিয়ে ঢাকা ছিল সবচেয়ে দূষিত নগরী। গতকাল সকালে বাতাসের মান আরও অবনতি হয়ে তা ‘বিপজ্জনক’ পর্যায়ে পৌঁছায়। সকাল ৭টায় ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর দাঁড়ায় ৪৪৫-এ। এ সময় প্রতি ঘনমিটার বাতাসে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি পিএম-২.৫ (অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা) ছিল ৪১৭.৬ মাইক্রোগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া নিরাপদ সীমার (বার্ষিক গড়) চেয়ে ৮৩ গুণ বেশি।
বায়ুদূষণ পরিমাপকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা আইকিউ এয়ারের তথ্য অনুসারে, গতকাল সকাল ৯টায় দূষণ কিছুটা কমে একিউআই স্কোর ৩৭০-এ নামলেও ঢাকা ছিল বিশ্বের শীর্ষ দূষিত নগরী। ঢাকার পরে ছিল ভারতের দিল্লি, মুম্বাই ও চীনের বেইজিং।
একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে তাকে ভালো বায়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ৫১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সহনশীল, ১০১ থেকে ১৫০ পর্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর, ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ পর্যন্ত খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১ থেকে দুর্যোগপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। এই অবস্থা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে। ফলে শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভিতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা থেকে গতকাল ভোর ৫টা পর্যন্ত ঢাকার বাতাস ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর।ভোর ৬টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ছিল দুর্যোগপূর্ণ। এরপর দূষণ ধীরে ধীরে কমে সন্ধ্যা ৭ টা ২২ মিনিটে স্কোর দাঁড়ায় ১৯৮-এ।
তখনই ঢাকা ছিল বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত শহর। প্রথম অবস্থানে ছিল চীনের বেইজিং। গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘ব্রিদিং হেভি : নিউ এভিডেন্স অন এয়ার পলিউশন অ্যান্ড হেলথ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণের কারণে বছরে ৭৮ থেকে ৮৮ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। বায়ুদূষণের সংস্পর্শে আসায় উল্লেখযোগ্যভাবে শ্বাসকষ্ট, কাশি, শ্বাসনালীর সংক্রমণ ও বিষণœতার ঝুঁকি বাড়ছে। সংস্থাটি ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সারা দেশের বায়ুমানের ওপর গবেষণা করে এই তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতি বছর বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ এবং ঢাকা দ্বিতীয় দূষিত শহর হিসেবে স্থান পেয়েছে। আর বাংলাদেশে বায়ুদূষণের শীর্ষে আছে ঢাকা। ঢাকার স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণা বলছে, ঢাকায় সবচেয়ে বেশি (৩০ শতাংশ) বায়ুদূষণ হচ্ছে অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজের মাধ্যমে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (২৯ শতাংশ) বায়ূদূষণ হচ্ছে ইটভাটা ও শিল্পকারখানার মাধ্যমে। বায়ুদূষণের তৃতীয় সর্বোচ্চ কারণ যানবাহনের কালো ধোঁয়া।