রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

দুই দলেই অনেক প্রার্থী

মো. রফিকুল আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

দুই দলেই অনেক প্রার্থী

চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি সংসদীয় আসনেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর ছড়াছড়ি। তবে বিএনপিও পিছিয়ে নেই। এ দলটিরও সম্ভাব্য প্রার্থী অনেক। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হিসেবে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় নিজের ও দলীয় প্রধানের ছবিসহ বড় বড় পোস্টার-ব্যানার রাস্তার মোড়ে মোড়ে ঝুলিয়ে বিভিন্ন দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে দোয়া চাইছেন। অনেকেই দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকায় পথসভা ও উঠান বৈঠক করছেন। এ ছাড়া দলীয় মনোনয়ন পেতে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।

ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মাঠে নেমে প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। তবে তারা বলছেন, দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করবেন। আবার মনোনয়ন না পেলে একাধিক ব্যক্তি বিদ্রোহী প্রার্থীও হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) : জেলার সবচেয়ে বড় আসন এটি। ১৯৭০ সালে ও ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ  এবং ১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. মঈন উদ্দিন আহম্মেদ মন্টু। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির হয়ে এ আসনে জয়ী হন মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক শাহজাহান মিঞা। এরপর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। পরে একই বছরের ১২ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আবারও জয়ী হন তিনি। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সর্বশেষ নির্বাচিত হন অধ্যাপক শাহজাহান মিঞা। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে এই আসনটি পুনরুদ্ধার করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আলহাজ এনামুল হক। আওয়ামী লীগ সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে এই আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন কানসাট বিদ্যুৎ আন্দোলনের নেতা মো. গোলাম রাব্বানী। কিন্তু ২০১৮ সালে তিনি মনোনয়নবঞ্চিত হলে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রয়াত এমপি ডা. মঈন উদ্দিন আহম্মেদ মন্টুর ছেলে ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল নির্বাচিত হন।

এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, জিকে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাবেক সচিব জিল্লার রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য মো. গোলাম রাব্বানী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আলহাজ এনামুল হক ও সাবেক ছাত্রনেতা প্রকৌশলী মাহ্তাব উদ্দিন।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা হচ্ছেন- বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত ও বিএনপি নেতা বেলাল-ই-বাকি ইদ্রিশী। এ ছাড়া জাসদের প্রার্থী হিসেবে মো. আজিজুর রহমান আজিজ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জামায়াত নেতা মাওলানা কেরামত আলীর নাম আলোচনায় রয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর) : স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন এই আসনটি ছিল বিএনপির দখলে। ২০০৮ সালে তা ফিরে আসে আওয়ামী লীগের ঘরে। তখন এই আসনে নির্বাচিত হন মুহা. জিয়াউর রহমান। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুহা. গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আমিনুল ইসলাম নির্বাচিত হন। তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগ করায় সদ্য অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মুহা. জিয়াউর রহমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তিন উপজেলার ও দুই পৌরসভার বিশাল এলাকাজুড়ে বিভিন্ন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এখন সরব হয়ে উঠেছেন। জামায়াতের তৎপরতা চোখে না পড়লেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের বাইরে থাকা আরেক বড় দল বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে তৃণমূল পর্যায়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এই আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হচ্ছেন- সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্য মুহা. জিয়াউর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য মুহা. গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস, সদ্য উপনির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম বাচ্চু, রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার, গোমস্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হুমায়ূন রেজা, নাচোল উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল কাদের, যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. আনোয়রুল ইসলাম আনোয়ার এবং যুবলীগ নেতা রফিকুল আলম সৈকত জোয়ার্দার।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন, সাবেক সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম, জেলা মহিলা দলের নেত্রী মাসউদা আফরোজা হক শুচি, গোমস্তাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বাইরুল ইসলাম। জাতীয় পার্টির আবদুর রাজ্জাক, বিএনএফের নবিউল ইসলাম এবং জাকের পার্টির গোলাম মোস্তফা নিজ নিজ দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) : চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি সংসদীয় আসনের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনটি গুরুত্বপূর্ণ। বিগত এক দশকের জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রায় কাছাকাছি অবস্থান আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের। জেলার রাজনৈতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু এ আসনে তিন দলেরই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আসনটি সদর উপজেলা ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনে দীর্ঘ ৩৫ বছর আওয়ামী লীগ নির্বাচনে ভালো অবস্থানে থাকতে পারেনি। আওয়ামী লীগের জন্য অনুন্নত এলাকা হিসেবেই পরিচিত ছিল এ আসন। এখানে ২০০১ সালে বিএনপি প্রার্থী হারুন-অর-রশিদ নির্বাচিত হন। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জাতায়াতের এই শিবিরে আঘাত হানেন বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে আসা আবদুল ওদুদ। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনরায় নির্বাচিত হন আবদুল ওদুদ। আওয়ামী লীগের অবস্থান ভোটের হিসাবের আগের চেয়ে অনেক সুসংহত হলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে অনেক। রয়েছে নতুন-পুরনো দ্বন্দ্ব। এর মধ্যেই এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হচ্ছেন, সদ্য উপনির্বাচনে বিজয়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল ওদুদ, জেলা সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. রুহুল আমিন ও ডা. গোলাম রাব্বানী এবং জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এরফান আলী। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা হচ্ছেন, সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. হারুনুর রশিদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া, সদস্য সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি সাবেক যুবদল নেতা মো. আবদুল ওয়াহেদ এবং যুবদল নেতা ওবায়েদ পাঠান। জাসদের মো. মনিরুজ্জামান মনির ও বিএনএফের কামরুজ্জামান খানও রয়েছেন আলোচনায়। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জামায়াত নেতা নুরুল ইসলাম বুলবুল ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. লতিফুর রহমানের নামও শোনা যাচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর