শিরোনাম
বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
আগুনে পুড়ল সম্বল

সব হারানোদের কান্না থামছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

সব হারানোদের কান্না থামছে না

সহায়সম্বল সবই হারিয়েছেন নূরজাহান। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে কুনিপাড়া বস্তিতে পুড়ে যাওয়া ঘরের সামনে গতকাল তার আহাজারি -জয়ীতা রায়

রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়ায় রোলিং মিল বস্তিতে আগুনের সব হারিয়ে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে ২ শতাধিক পরিবারের স্বপ্ন। আগুনে পুড়ে গেছে ছয়টি বাড়ির কমপক্ষে ৩ শতাধিক ঘর। এসব অসহায় মানুষের কান্না যেন থামছেই না। স্বল্প আয়ের এসব মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বস্তিতে বসবাস করছিলেন। টিন দিয়ে ঘেরা ছোট ঘরগুলোয় বাসিন্দারা তিল তিল করে গড়ে তোলেন আসবাবপত্র। কিন্তু সোমবার রাতের ভয়াবহ আগুনে চোখের পলকে সব হারিয়ে গেছে। তাদের আর্তনাদে রোলিং মিল বস্তির বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। এদিকে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বাড়িগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সেখানে দেওয়া হয়েছে তিতাস গ্যাস, বিদ্যুৎ ও ওয়াসার বৈধ লাইন। বাসিন্দারা বলছেন, গ্যাসের বৈধ লাইন হলেও প্রায়ই চুলার লিকেজ থেকে ছোট ছোট আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। যে টিনের ভবন থেকে আগুনের সূত্রপাত সেটির দোতলায় কিছুদিন আগেই গ্যাসের চুলায় আগুন লেগেছিল।

যদিও সোমবার রাতে শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে দাবি করেন তারা। কুনিপাড়ার পাশে বটতলা ধরে সরু রাস্তা দিয়ে সামনে এগোলে হাজী শামসুদ্দিন লেন। এই লেনের দুই পাশ দিয়ে ভবনের আদলে ছাদ করে লোহার পাটাতন আর টিন দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল বিশাল দু-তিন তলা বাড়ি, যা রোলিং মিল বস্তি হিসেবে পরিচিত। প্রতিটি বাড়িতে ৫০ থেকে ১০০টি ঘর।

কিন্তু সরু রাস্তা, ঘিঞ্জি ঘর, অপরিকল্পিত গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইনের কারণে প্রতিটি বাড়িই যেন মৃত্যুকূপ। বস্তির বাসিন্দারা জানান, জায়গাটিতে একসময় ঝিল থাকলেও ধীরে ধীরে বাড়িঘর গড়ে ওঠে। এখানকার বেশির ভাগ জায়গার মালিক প্রয়াত হাজী শামসুদ্দিনের সন্তানরা। অনেকে তাদের কাছ থেকে জায়গা ভাড়া নিয়ে বা কিনে নিয়ে বাড়ি তুলেছেন। সোমবার রাত ৮টার দিকে হাজী শামসুদ্দিনের মেজো ছেলের স্ত্রী হালিমার তিন তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার ৩ নম্বর ঘর থেকে আগুন লাগে। এরপর মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আগুন লাগার কিছু সময় পর ফায়ার সার্ভিস এলেও সরু রাস্তার কারণে তারা ভিতরে ঢুকতে পারেনি। একটি ইউনিট কাজ শুরু করলেও কিছুক্ষণ পর জানায় পানি শেষ। এতে আগুন আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে। চারটি বাড়ির দুই শতাধিক ঘর পুড়ে গেছে আক্কাস আলীর। তিনি বলেন, ‘ঢাকার বাইরে ছিলাম। এসে দেখি সব শেষ। কোনো বাড়িতেই অবৈধ লাইন ছিল না। সবকিছুই আমরা বৈধভাবে নিয়েছি। নিয়মিত বিলও পরিশোধ করে আসছি।’ বৃদ্ধা নুরজাহান বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই নেই। আগুনে সব পুড়ে গেছে।’ টেইলার্স মালিক রাহাত হোসেন বলেন, ‘দোকানের সব কাপড় পুড়ে গেছে। পাঁচটি মেশিন ছিল, খুঁজে পাচ্ছি না। ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে আমার।’ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বস্তির ঘরগুলো টিনের ও কাঠের তৈরি। ঘরগুলো ছিল দুই তলা ও তিন তলা। এ জন্য সহজেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পানির ব্যবস্থাও ছিল অনেক কম। এ ছাড়া ঢাকা শহরে যানজটের কারণে চলাফেরা করা খুবই কঠিন। এ কারণে আমাদের পৌঁছাতে কিছুটা দেরি হয়। এ ছাড়া পার্কিং ও সরু রাস্তাসহ বিভিন্ন কারণে আমাদের গাড়ি প্রবেশ করতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। এর পরও বিকল্প পানির উৎস খুঁজে ১১টি ইউনিটের ২ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।’

সর্বশেষ খবর