বৃহস্পতিবার, ১১ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

গোলমরিচ চাষের অমিত সম্ভাবনা

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি

গোলমরিচ চাষের অমিত সম্ভাবনা

মৌলভীবাজারে পাহাড়টিলায় গোলমরিচ চাষের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। এখানকার আবহাওয়া ও মাটি মসলাজাত ফসল চাষের উপযোগী। কৃষিবিজ্ঞানীরা বলছেন, সিলেট ও মৌলভীবাজারে বাণিজ্যিকভাবে গোলমরিচ চাষ করলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি সম্ভব।

জানা যায়, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে খাবারে স্বাদ বাড়াতে রান্নায় একটি গুরুত্বর্র্পূণ উপকরণ হিসেবে গোলমরিচের ব্যবহার রয়েছে। দেশে এর চাহিদার প্রায় পুরোটাই পূরণ হচ্ছে আমদানির মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২১-২২ অর্থবছরের রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে ৩৬৩ মিলিয়ন ডলার মূল্যের মসলাজাত পণ্য আমদানি হয়েছে; যার একটি বড় অংশ ছিল গোলমরিচ। গোলমরিচ নিয়ে ২০২০ সাল থেকে গবেষণা করছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান ও চা উৎপাদন প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান এবং কৃষি বনায়ন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামিউল আহসান তালুকদার। তাঁরা গবেষণায় দেখতে পান, সিলেট ও মৌলভীবাজার অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকার অনেক বাড়িতে চার-পাঁচটি করে গোলমরিচ গাছ রয়েছে।

এসব গাছের কোনো পরিচর্যা নেই। বাড়ির সুপারি, কাঁঠাল, আম ও অন্যান্য গাছে প্রাকৃতিকভাবেই গোলমরিচ গাছ বেড়ে উঠছে। অযত্ন-অবহেলায় গাছে আশানুরূপ ফলন হচ্ছে না। বয়স্ক গাছ থেকে নতুন চারা উৎপাদনেরও উদ্যোগ নেই। ড. মো. মাসুদুর রহমান বলেন, সিলেট অঞ্চলে গোলমরিচ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এখানকার আবহাওয়া ও মাটি গোলমরিচ চাষের উপযোগী। প্রয়োজন যথাযথ উদ্যোগ আর সঠিক পরিচর্যার। গবেষকরা জানান, গোলমরিচ লতাজাতীয় একটি উদ্ভিদ। এরা পরাশ্রয়ী। বৈশাখের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আষাঢ়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত গোলমরিচের বীজ বা চারা রোপণ করতে হয়। রোপণের তিন বছর পর উৎপাদন শুরু হয়। সাত-আট বছর হলে গাছ পুরো উৎপাদনে চলে আসে। প্রতিটি গাছ থেকে ৫-৬ কেজি কাঁচা গোলমরিচ পাওয়া যায়। কাঁচা গোলমরিচ থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ শুকনো গোলমরিচ হয়। বর্তমানে বাজারে ২ কেজি গোলমরিচের দাম ৮০০ টাকা। সে হিসেবে একটি গাছ থেকে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকার গোলমরিচ পাওয়া যায়। একটি চারার দাম মাত্র ২০ টাকা। যে কোনো গাছের গোড়ায় লাগিয়ে দিলেই হয়। এটি কম খরচে অধিক লাভজনক ফসল। গবেষকরা জানান, সিলেট অঞ্চলে প্রচুর সুপারিবাগান রয়েছে। বিশেষ করে খাসিয়া পুঞ্জিগুলোয় সুপারি গাছে পান চাষ হয়। তবে পুঞ্জিতে বেশির ভাগ সুপারি গাছই অন্য কোনো কাজে লাগানো হয় না। ওইসব সুপারি গাছে গোলমরিচের চাষ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। দেশে ১৬৭টি চা বাগানের ১৩৫টিই বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে। প্রতি বাগানে বিপুলসংখ্যক ছায়াবৃক্ষ রয়েছে। এসব ছায়াবৃক্ষেও ভালো জাতের গোলমরিচ চাষ সম্ভব। বাংলাদেশ মসলা গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. জুলফিকার হায়দার প্রধান বলেন, সিলেটের জৈন্তাপুরে ফার্মে গোলমরিচ নিয়ে কাজ হচ্ছে। তবে সূত্র জানান, দীর্ঘ ৩৩ বছরেও এ গবেষণা কেন্দ্র থেকে গোলমরিচের আর কোনো নতুন জাত উদ্ভাবন সম্ভব হয়নি। তবে মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গোলমরিচ চাষের কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি। কোনো প্রদর্শনী প্লট আমরা দিইনি। আমরা কোনো বাগান করতে পারিনি। ২০১৭-১৮ সালে কিছু চারা বিতরণ করা হয়েছিল। অনেকটিই নষ্ট হয়ে গেছে।’ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, জৈন্তাপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শাহ লুৎফুর রহমান বলেন, ‘আমরা গোলমরিচের নতুন জাত উদ্ভাবনে গবেষণা করছি। এখন আমরা এর চাষ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ জানান, বছরে ৫-৭ হাজার টন গোলমরিচ আমদানি হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর