শনিবার, ২০ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

দুর্ভোগ চরমে আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

দুর্ভোগ চরমে আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে

নানা সমস্যায় জর্জরিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন। প্রতিদিন এ চেকপোস্ট দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের হাজারের বেশি যাত্রী পারাপার হচ্ছেন। ইমিগ্রেশনে নাজেহাল অবস্থার কারণে যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এ বন্দর দিয়ে যাত্রীসংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু বাড়ছে না সেবার মান। একদিকে ইমিগ্রেশন ভবন অন্যদিকে কাস্টমস ভবন দুই দিকে দুবার গিয়ে সারতে হয় ইমিগ্রেশনের কাজ। এ ছাড়া এখানে যাত্রীদের পরিষেবায় ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। এক তলাবিশিষ্ট তিন রুমের ভবনটির দুটি ছোট রুম ও একটি মাঝারি রুম। একটিতে ইমিগ্রেশন ইনচার্জ বসেন আরেকটি ব্যারাক। মাঝারি কক্ষটিতে চলে অফিসের কার্যক্রম। পুরাতন ভবনটির বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছে। গাদাগাদি করে চলে কার্যক্রম। যাত্রীরা নিজেদের মালপত্র বারান্দায় রেখে অপেক্ষায় থাকেন। টিনের ছাউনিতে ২০-২৫ জনের বসার চেয়ার থাকলেও টেবিল । কেউ বারান্দার মেঝেতে বসেন, কেউ বিদ্যুতের জেনারেটরের ওপরে কাগজ রেখে ফরম পূরণ করেন। জেলা পুলিশ সুপার মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সারতে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা, তা অপ্রতুল। নতুন ইমিগ্রেশন ভবনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে দুই দেশের সেবার মান বাড়বে। জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, এখানে পর্যাপ্ত সুবিধার কমতি রয়েছে। নতুন একটি ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণের কাজ চলছিল, তা  বিএসএফের বাধায় বন্ধ রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কথা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পেলে আমরা ভবনটির কাজ আবার শুরু করতে পারব। এ ছাড়া নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখানে একটি আধুনিক স্থলবন্দর নির্মাণের উদ্যাগে নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ৩.৫৭ একর জায়গা অধিগ্রহণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। এক/দেড় মাসের মধ্যে অধিগ্রহণ শেষ হবে। তখন স্থলবন্দর, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসসহ বন্দর সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রম আরও বেগবান হবে। সরেজমিন দেখা গেছে, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বিশ্রামের জন্য জায়গা পাচ্ছেন না। কক্ষটিতে এসির ব্যবস্থা থাকলেও যাত্রীর ভিড় থাকায় দীর্ঘ লাইন হচ্ছে। ফলে এসি চালানো সম্ভব হচ্ছে না। চলমান তীব্র গরমে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক ফ্যানের ব্যবস্থা না থাকায় গরমের মাঝে শত কষ্ট সহ্য করে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করছেন যাত্রীরা। কাস্টমসের কাজ সারতে পাড়ি দিতে হচ্ছে অন্তত আড়াই শ গজ দূরবর্তী অন্য আরেকটি ভবনে। মূলত এক ভবন ও এক ছাতার নিচে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের কাজ সারতে না পারায় তাদের দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। ভারত থেকে আগত লক্ষ্মী রানি দাস বলেন, স্বামী ও সন্তান নিয়ে আগরতলা স্থলবন্দর দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে বাংলাদেশে এসেছি। আগরতলা ইমিগ্রেশনে সুষ্ঠু ও স্বাচ্ছন্দ্যভাবে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে এলেও আখাউড়া স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশনে এসে রীতিমতো অবাক হলাম। নেই বসার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করতে গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়ালেও ছোট কক্ষটিতে নেই কোনো ফ্যানের ব্যবস্থা। হঠাৎ ১২ বছরের বয়সের ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে সেবা শুশ্রƒষা করার জন্য স্থান না পেয়ে ইমিগ্রেশন ভবনের এক কোনায় বসে তার সেবা যতœ করি। মুক্তি খান নামে এক যাত্রী বলেন, স্থায়ী ভবন তৈরি করে এক ছাতার নিচে সব পরিষেবা পাওয়া গেলে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের নাগরিকের পাশাপাশি বিদেশিদের আসা-যাওয়া আরও বেড়ে যাবে। যাত্রীদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে। ১৯৯৪ সালে চালু হয় আখাউড়া স্থলবন্দরের কার্যক্রম। সুবিধাজনক ভৌগোলিক অবস্থান হওয়ায় এ বন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট থেকে অনেকেই যাতায়াতে আখাউড়া ইমিগ্রেশন ব্যবহার করছেন। কাস্টমস সূত্র জানায়, এ ইমিগ্রেশন ব্যবহার করে প্রতিদিন অত্যন্ত ১ হাজার যাত্রী দুই দেশে যাতায়াত করছেন। এর মধ্যে পাঁচ শতাধিক যাত্রী ভারতে বহির্গমন করছেন। যা থেকে প্রতি মাসে ৭৫ লাখ টাকা সরকারের আয় হয়ে থাকে। বিগত ছয় মাসে ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। এদিকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আখাউড়া চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে আধুনিক ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হলেও ২০১৭ ও ২০১৯ সালে সীমান্ত আইনের অজুহাতে বিএসএফ নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়।

সর্বশেষ খবর