রবিবার, ২১ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

পর্যটন জোনে টর্চার সেল!

কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারে পর্যটন জোনে কলাতলী ও সুগন্ধা পয়েন্টে আবাসিক হোটেল-মোটেল এলাকায় টর্চার সেলের সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। সেখান থেকে অপহরণের শিকার নারীসহ পাঁচজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। র‌্যাব বলছে, ওই টর্চার সেল পরিচালনাকারী চক্রের প্রধান হলেন পুলিশের বরখাস্ত হওয়া এক এসআই।

শুক্রবার রাতভর অভিযান চালিয়ে এ চক্রের প্রধান বরখাস্ত এসআই এস এম ইকবাল পারভেজসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। আটক ইকবাল পারভেজ চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জের মাইতুল সরকারবাড়ির মৃত এরশাদ আলমের ছেলে। ২০২১ সালে ইয়াবাসহ র‌্যাবের হাতে আটকের পর তাকে পুলিশের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রয়েছে। আটক অন্য দুজন হলেন- কক্সবাজার পৌরসভার নতুন বাহারছড়া এলাকার মো. ইউনুসের ছেলে এম টি মুন্না ও একই এলাকার মৃত আবদুল করিমের ছেলে মো. ইউসুফ। এর মধ্যে এম টি মুন্না সম্পর্কে ইকবাল পারভেজের শ্যালক। টর্চার সেল থেকে উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে ঢাকার দুজন ও রোহিঙ্গা দম্পতি রয়েছেন। র‌্যাব-১৫ সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী জানান, কক্সবাজারকেন্দ্রিক ভয়ংকর ওই অপহরণকারী সিন্ডিকেটের অবস্থান শনাক্তের পর শুক্রবার রাতে কলাতলী ও সুগন্ধা এলাকায় তাদের সুরক্ষিত গোপন আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। সেখানে উদ্ধার হওয়া ঢাকার মো. শাহজাহান কবির ও মঞ্জুর আলম কক্সবাজারে বেড়াতে এসে ১৬ মে নিখোঁজ হন। পরে একটি মোবাইল নম্বর থেকে কল করে তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। আংশিক মুক্তিপণ পরিশোধ করা হলেও মুক্তি মেলেনি শাহজাহান ও মঞ্জুরের। কক্সবাজার জেলার উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা অপহৃত দম্পতির গল্প আরও করুণ। দাবি করা মোটা অঙ্কের টাকা না পেয়ে স্বামীর হাত-মুখ বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণ করতে থাকেন চক্রের সদস্য। স্বামীর ওপর চলতে থাকে মধ্যযুগীয় নির্যাতন। স্বজনরা  বিকাশে ২ লক্ষাধিক টাকা মুক্তিপণ দিলেও তাদের ছাড়া হয়নি। স্বজনরা বিষয়টি র‌্যাবকে অবহিত করলে গোয়েন্দা উপাত্ত ব্যবহার করে কাজ শুরু হয়। সন্ধান মেলে দুটি ভয়ংকর টর্চার সেলের। যার একটি কলাতলী এবং অন্যটি সুগন্ধা পয়েন্টে। আস্তানা দুটির নাম-ঠিকানা প্রকাশ না করলেও আবাসিক হোটেল, মোটেল গেস্ট হাউস বলে নিশ্চিত করেছে র‌্যাব। র‌্যাব বলছে, চক্রের সদস্যরা কক্সবাজার আসা মানুষদের টার্গেট করে অপহরণ ও তাদের স্বজনদের কাছে ফোন করে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করতেন। আটককৃতদের দিনের পর দিন আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করা হতো। অপহরণের শিকার নারীদের যৌনদাসী হিসেবেও ব্যবহার করা হতো। এ ঘটনায় অপহরণের শিকার শাহজাহান কবিরের বোন আমেনা বেগম বাদী হয়ে ১৯ মে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন। এর আগে ২০২২ সালে আগস্ট মাসে কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনে একটি ‘টর্চার সেলের’ সন্ধান পেয়েছিল ট্যুরিস্ট পুলিশ।  সেখানে আটকে রাখা পর্যটকসহ চারজনকে উদ্ধার ও ১১ জনকে আটকও করা হয়েছিল।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর