পুলিশ পরিচয়ে একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভয়ংকর হয়ে উঠেছে মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে। এক্সপ্রেসওয়ের পাশে শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবায় এমন ঘটনা ঘটে দিনদুপুরে। সেখানে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে বাস থেকে যাত্রী নামিয়ে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে গত দুই মাসে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর ৯ নভেম্বর জসিম মোল্লাকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ সময় তার দুই সহযোগী জাহিদুল কাজী ও ইয়াসিনকেও গ্রেফতার করা হয়। জসিম মোল্লা পুলিশের সদস্য না হয়েও নিজেকে পরিচয় দিতেন এসআই। পুলিশের পোশাক পরে এসআই পরিচয়ে বড় বড় ব্যবসায়ীকে বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেল করে হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের টাকা। শুধু তা-ই নয়, তার একটি গ্রুপ রয়েছে, যারা ঢাকা, নরসিংদী, শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের ছদ্মবেশে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে স্বর্ণালংকার, টাকা ও অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ ডাকাতি করত। গ্রেফতারের পর মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে গত বছর পুলিশ পরিচয়ে একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনায় জসিমের গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা পায় র্যাব। র্যাব জানায়, এক্সপ্রেসওয়েতে পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনায় গত বছর ১৩ জুলাই ও ২ নভেম্বর পৃথক মামলা করেন দুজন ভুক্তভোগী। র্যাব-১০ এর সিও অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন এ প্রতিবেদককে জানান, ওই দুই ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। এরপর জসিমকে গ্রেফতারের পর তাদের জানানো হয় এবং তারা নিশ্চিত করেন যে জসিমই ছিনতাইয়ের সময় পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাদের থামিয়েছিলেন এবং মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। জসিমের পুরো গ্রুপটিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এদিকে জাজিরার নাওডোবা এলাকার একাধিক বাসিন্দা বলেছেন, তাদের ধারণা জসিমের গ্রুপের কিছু সদস্য জাজিরার সেনেরচর এলাকায় থাকেন। আর তারাই ডিবি পরিচয়ে তাদের এলাকায় ছিনতাই করে আসছেন। নগদ টাকা নিয়ে যারা শরীয়তপুর থেকে ঢাকায় আসছেন তাদের বিষয়ে আগে থেকেই তথ্য পায় ছিনতাই চক্রটি। ৫ মে এবং এরও আগে একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে দিনদুপুরে। তবে যারা ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন তারা হুন্ডি ও ডলার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকায় পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ কিংবা মামলা করেননি। গত বছর ৩০ অক্টোবর কেরানীগঞ্জের কদমতলীতে ছিনতাইয়ের শিকার হন নবুবর রহমান। তিনি এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় ২ নভেম্বর মামলা করেন। নবুবর রহমান জানিয়েছেন, তিনি এবং তার বন্ধু ইয়াছিন ৩০ অক্টোবর রাতে মোটরসাইকেলে করে কেরানীগঞ্জের মনু বেপারীর ঢালে পল্লী বিদ্যুতের সামনে পৌঁছালে পেছন দিক থেকে অজ্ঞাত দুজন এফজেড মোটরসাইকেলে এসে তাদের থামতে বলেন। পিস্তল বের করে পুলিশ পরিচয় দিয়ে তারা তাদের বলেন, ‘কোন দল করস।’ এরপর তার মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চান তারা। কাগজ হাতে নেই বলে তিনি জানান। এরপর ওই দুজন তার নতুন মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যান। এর আগে গত বছর ১০ জুলাই দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন শিপন শেখ নামে এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় তিনি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় ১৩ জুলাই মামলা করেন। শিপন শেখ জানিয়েছেন, মোটরসাইকেল নিয়ে তারা তিন ভাই ওইদিন রাত সাড়ে ১১টায় কেরানীগঞ্জের সারিঘাটে বেড়াতে যান। চায়না রেলওয়ে ব্রিজের নিচ দিয়ে তেঘরিয়া রোড হয়ে বাসায় ফেরার পথে দুজন লোক পুলিশ পরিচয়ে তাদের সিগন্যাল দিয়ে থামান। তাদের কোমরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পোশাক, পিস্তল, হ্যান্ডকাফ, টিপলাঠি ও হাতুড়ি দেখা যায়। তারা তার মোটরসাইকেলের কাগজ দেখতে চান। তিনি তার ছোট ভাই শুভকে কাগজ আনতে বাসায় পাঠিয়ে দেন। এরপর ওই দুজন তাদের মোটরসাইকেল ও তার আরেক ছোট ভাই হৃদয়ের ব্যবহৃত ২৪ হাজার টাকা মূল্যের মোবাইল ফোন নিয়ে নেন এবং তাদের থানায় যেতে বলেন। তারা অজ্ঞাত ওই দুজনের সঙ্গে যেতে চাইলে তারা তাদের সিএনজিতে করে যেতে বলেন। এরপর ওই দুজন থানার দিকে না গিয়ে রাজেন্দ্রপুরের দিকে ঘুরে পালিয়ে যান। চলতি বছর ৮ মে রাত সাড়ে ১০টায় মোটরসাইকেলে চলন্ত অবস্থায় আরাফাত ইসলাম নামে এক গণমাধ্যমকর্মীকে রাজধানীর ধোলাইপাড় থেকে পোস্তগোলাগামী এক্সপ্রেসওয়ে সড়কে ফুটওভার ব্রিজে নিচে ফেলে দেয় পাঁচ-ছয়জন ছিনতাইকারী। এতে আরাফাত ও তার বন্ধু হান্নান গুরুতর আহত হন। এরপর ছিনতাইকারীরা আরাফাতের মানিব্যাগে থাকা নগদ ১৭ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। তার মোটরসাইকেলটি নিয়ে পালানোর সময় আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে এলে তারা তা ফেলে পশ্চিম পাশের দেয়াল টপকে চলে যায়।
এ ঘটনায় আরাফাত শ্যামপুর থানায় অভিযোগ দিলেও তা মামলা হিসেবে নেয়নি পুলিশ। এর আগে ৩ মে একই স্থানে ছিনতাইয়ের শিকার হন রহমত শেখ নামে এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় তিনি ১৩ মে শ্যামপুর থানায় মামলা করেন। জানা গেছে, পুলিশ এখনো ওই ছিনতাই চক্রটিকে শনাক্ত করতে পারেনি।