সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা
আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস

আইনি জটিলতায় হয় না মামলা

পরিবেশ আদালতে সরাসরি মামলা করতে পারেন না সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মোবাইল কোর্টে লঘুদন্ডে পার, হাই কোর্টে ১৩৫৪ রিট বিচারাধীন

আরাফাত মুন্না

রাজধানী ঢাকার আদালতপাড়ায় পুরাতন জজ কোর্ট ভবনের দ্বিতীয় তলার ৩১ নম্বর কক্ষে ঢাকা অঞ্চলের পরিবেশ আদালত। যুগ্ম জেলা জজ পদমর্যাদার একজন বিচারকের এই আদালতে ২ হাজারের বেশি মামলা বিচারাধীন থাকলেও পরিবেশ বিষয়ে মামলা মাত্র ১১৩টি। বাকি সব মামলাই এনআই অ্যাক্ট ও মাদকসহ অন্যান্য ফৌজদারি আইনে দায়ের করা। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনের পঞ্চম তলায় দেশের একমাত্র পরিবেশ আপিল আদালত। এখানেও পরিবেশের মামলা মাত্র নয়টি। পরিবেশ আপিল আদালত হলেও সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা না থাকায় জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারক এই আদালতেই করেন অন্য মামলার বিচার।

জানা গেছে, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সরাসরি মামলা করার সুযোগ নেই পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে।  কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে অনুমোদনের জন্য পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে অভিযোগকারীকে আবেদন করতে হয়। অনেক সময় অভিযোগ পেয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেই অভিযোগ নিষ্পত্তি করে পরিবেশ অধিদফতর। ফলে বড় অপরাধ করেও অনেক সময় মোবাইল কোর্টের লঘুদন্ডের কারণে পার পেয়ে যান অপরাধীরা। অন্যদিকে, উচ্চ আদালত থেকে দেওয়া রায় ও আদেশ বাস্তবায়নেও অনীহা দেখা গেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর।

আইনজ্ঞরা জানান, পরিবেশ আদালতে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে নানা আইনি জটিলতা রয়েছে। ভুক্তভোগী সরাসরি মামলা করতে পারেন না। আইনের সব শর্ত পূরণ করে কোনো বিচারপ্রার্থী এখানে আসতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। এ আদালতে জনগণের সরাসরি মামলা করার সুযোগ দিয়ে আইন সংশোধন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, পরিবেশ আদালতে সাধারণ মানুষ অথবা পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো সরাসরি মামলা করতে পারে না। কেউ মামলা করতে চাইলে প্রথমে অধিদফতরের কাছে অভিযোগ জানাতে হয়। প্রতিকার না পেলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আদালতে মামলা করতে পারেন।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ৭ ধারায় বলা হয়েছে, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আইনের ব্যত্যয় করছেন, তাহলে ক্ষতি নির্ধারণ করে তা পরিশোধের নির্দেশ দিতে পারবেন। ক্ষতিপূরণ না দিলে মহাপরিচালক আদালতে ক্ষতিপূরণ মামলা করতে পারবেন। এ নির্দেশ অমান্য করলে ফৌজদারি মামলা করা যাবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবেশ আদালতে মামলা কম হওয়ার অন্যতম কারণ সরাসরি মামলার সুযোগ না থাকা। বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন এ জন্য আইন সংশোধনের দাবি করেছে।

সুপ্রিম কোর্টের তথ্যানুযায়ী, দুটি পরিবেশ আদালত ও একটি পরিবেশ আপিল আদালতে বর্তমানে মাত্র ৩৬৫টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে ঢাকার পরিবেশ আদালতে ১১৩ ও চট্টগ্রামের পরিবেশ আদালতে ২৪৩টি মামলা বিচারাধীন। এ ছাড়া ঢাকায় একমাত্র পরিবেশ আপিল আদালতে বিচারাধীন মামলা মাত্র ৯টি। অন্যদিকে উচ্চ আদালতে পরিবেশ সংক্রান্ত ১ হাজার ৩৫৪টি রিট বিচারাধীন।

সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, পরিবেশ আদালত ছাড়াও স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পরিবেশ বিষয়ে মামলার বিচার করে থাকেন। পরিবেশ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী দেশের ৮ বিভাগীয় স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বর্তমানে ৬৬৯টি মামলা বিচারাধীন। জানতে চাইলে পরিবেশ আপিল আদালতের বিশেষ পিপি এ এফ এম রেজাউল করিম হিরণ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আইনে সরাসরি পরিবেশ আদালতে মামলা করার বিধান নেই। কেউ মামলা করতে হলে প্রথমে পরিবেশ অধিদফতরে অভিযোগ দাখিল করতে হবে। এসব কারণেই এ আদালতে মামলা কম হচ্ছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রতিদিন পরিবেশ দূষণ করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হচ্ছে না। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে পরিবেশ অধিদফতর মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করেন, তবে তা পর্যাপ্ত নয়।

পরিবেশ রক্ষায় ১০০টিরও বেশি রিট করা আইনজীবী হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) সভাপতি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পরিবেশ রক্ষায় আইন থাকলেও তা কার্যকরে যে হাতিয়ারগুলো রয়েছে, তা দুর্বল। আইনে প্রশাসনকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তারা সেই ব্যবস্থাগুলো নিচ্ছেন না। ফলে আমাদের হাই কোর্টে রিট করতে হচ্ছে। হাই কোর্টে আদেশগুলোও আবার সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয় না। এসব আদেশ বাস্তবায়নে এক প্রকার অনীহা দেখা যায়। বহু কষ্টে আদেশ আংশিক বাস্তবায়ন করা যায়। পরিবেশ আদালতের বিষয়ে তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে মামলা করার আগে পরিবেশ অধিদফতরে অভিযোগ দেওয়ার যে বিধান আইনে রয়েছে, এটা আসলে জটিলতা বাড়িয়েছে। পরিবেশ অধিদফতর মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে যে দন্ড দেয়, তাকে অপরাধের বৈধতা দেওয়ার শামিল বলেও মনে করেন তিনি।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস আজ : প্রতি বছর সারা বিশ্বে ৫ জুন ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ পালিত হয়। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এ উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করবে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘প্লাস্টিক দূষণ সমাধানে শামিল হই সকলে’। দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশে আজ ৫ জুন থেকে শুরু হচ্ছে জাতীয় পরিবেশ ও বৃক্ষমেলা ২০২৩। উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এ তথ্য জানান। মন্ত্রী জানান, পরিবেশ মেলা চলবে ৫ জুন থেকে ১১ জুন পর্যন্ত এবং বৃক্ষমেলা চলবে ৫ থেকে ২৬ জুন এবং ১ জুলাই থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন মেলা চলবে সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতর ও বন অধিদফতরের পক্ষ থেকেও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর