শুক্রবার, ৯ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

স্কুল ছাড়ার ৬১ বছর পর বেতন পরিশোধ করলেন সোহরাব!

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

স্কুল ছাড়ার ৬১ বছর পর বেতন পরিশোধ করলেন সোহরাব!

সোহরাব আলী ১৯৬২ সালে ফুলহরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।

সেই সময় চার মাসের বেতন বাকি পড়েছিল। ৪ টাকা করে মাসিক বেতন না দিতে পেরে স্কুল ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তিনি। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় নেমে পড়েন কাজে। হাটে হাটে খোলা জায়গায় তেল-মসলার দোকান বসিয়ে জীবন কাটিয়েছেন।  জীবনের শেষ সময়ে এসে তার মনে পড়েছে- আজও তার স্কুলের বেতন বাকি রয়েছে, বিদ্যালয়টির কাছে এখনো তিনি রয়েছেন ঋণী। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার ছোটবেলার সেই বিদ্যালয়ে গিয়ে তিনি বেতন পরিশোধ করেছেন। বর্তমান বাজার মূল্য বেশি থাকায় একসঙ্গে ৩০০ টাকা জমা দিয়েছেন তিনি। তার ভাষায়, ‘এখনো তিনি সচ্ছল নন, তার পরও ঋণী থাকতে চান না।’ যে কারণে টাকা পরিশোধ করলেন। সোহরাব আলী ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মহম্মদপুর গ্রামের মৃত আবদুুল করিম বিশ্বাসের ছেলে। স্ত্রী, দুই মেয়ে আর এক ছেলে রয়েছে তার। সোহরাব আলী জানান, বাবাও দরিদ্র ছিলেন।

 কৃষিকাজ করে তাদের সংসার চলত। তিনি শিশু অবস্থায় পাশের গ্রাম বড়দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন। ওই স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে ১৯৬২ সালে বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ফুলহরি বাজারে অবস্থিত ফুলহরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। মাত্র ৬ মাস ক্লাস করেন। সোহরাব আলী জানান, বাবা দরিদ্র হওয়ায় ঠিকমতো পড়ার খরচ দিতে পারতেন না। বিদ্যালয়ে সেই সময়ে মাসিক চার টাকা বেতন দিতে হতো। তার চার মাস বেতন বাকি পড়ে যায়। এই অবস্থায় তিনি লজ্জায় পড়ে যান। তখন পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে কাজে নেমে পড়েন। প্রথম জীবনে বাবার সঙ্গে মাঠে কাজ করেছেন। পুলিশের চাকুরিতেও যোগদান করেন। এরপর বাড়ি এসে ব্যবসা শুরু করেন। সোহরাব আলী আরও জানান, ব্যবসা করা অবস্থায় ১৯৭১ সালে দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে ভারতে চলে যান। প্রথম দফায় তিনি রানাঘাট যান, এরপর করিমপুর, সর্বশেষ তিনি বেতাই ক্যাম্পে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ নেন। মাত্র কিছুদিন প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি নিজেই প্রশিক্ষক হয়ে যান। সোহরাব আলী জানান, দেশ স্বাধীন হলে তিনি বাড়ি ফিরে এসে আবারও ব্যবসা শুরু করেন। এভাবে ব্যবসা করে জীবন কাটিয়েছেন। তদবিরের অভাবে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নামটি আসেনি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সোহরাব আলী।

তিনি জানান, বয়স প্রায় শেষের দিকে। এই সময় তার হঠাৎ একদিন মনে হলো বিদ্যালয়ে তার বেতন বাকি রয়েছে। এখনো তিনি ঋণী রয়েছেন। এই ঋণী তিনি থাকতে চান না। তাই নিজ উদ্যোগে বিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে বেতন পরিশোধ করেছেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার বেতন রশিদ দিয়েছেন, যা তিনি যত্ন করে রেখে দিয়েছেন।

ফুলহরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লক্ষ্মণ প্রসাদ সাহা জানান, তাদের এই বিদ্যালয় ১৯২৯ সালে প্রতিষ্ঠিত। সোহরাব আলী ভর্তি হন ১৯৬২ সালে বলে জেনেছেন। যখন সোহরাব আলী বেতন দিতে আসেন তখন অফিসের কাজে তিনি বাইরে ছিলেন। তবে অন্য শিক্ষকরা তার এই ৬১ বছর পর বেতন পরিশোধ করতে আসায় খুব খুশি হয়েছেন। জমা রশিদ দিয়ে তার টাকাটা গ্রহণ করা হয়েছে। তার এই সততায় বিদ্যালয়ের সবাই মুগ্ধ।

সর্বশেষ খবর