আধুনিক সময়ে এসে স্বামী-স্ত্রী দুজনের আয়েই সংসার চলে। শহরের কর্মজীবী নারীই শুধু নয়, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের নারীরাও এখন সংসারের দায়িত্ব সামলে বাড়তি উপার্জনের মাধ্যমে অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে ভূমিকা রাখছেন। কৃষিকাজের পাশাপাশি গ্রামীণ নারীরা বিদেশের শ্রমবাজার, পোশাক খাত, অকৃষি খাত ও উদ্যোক্তা হিসেবে নিজ যোগ্যতার প্রমাণ রেখে যাচ্ছেন। নারী উদ্যোক্তাদের নেতৃত্বে গ্রামীণ নিম্ন মধ্যবিত্ত সমাজের অর্থনৈতিক কাঠামোয় লেগেছে বড় পরিবর্তনের ছোঁয়া। গ্রামীণ অর্থনীতিতেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই নারীরা। তথ্য বলছে, গ্রামীণ অর্থনীতিতে পুরুষের চেয়ে নারীর অবদান বেশি। নারীর অবদান যেখানে ৫৩ শতাংশ এর বিপরীতে পুরুষের ৪৭ শতাংশ। পরিসংখ্যান বলছে, গত এক দশকে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ বাড়তি শ্রম শক্তির মধ্যে ৫০ লাখই নারী শ্রমিক। আর দেশের অর্থনীতিতে ২৫ শতাংশ অবদান নারীর। ১ কোটি ৮৬ লাখ ৪৬ হাজার নারী কৃষি, শিল্প ও সেবাসহ নানা কাজ করছেন। এ অবস্থায় আজ দেশে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব গ্রামীণ নারী দিবস’। নানাবিধ কাজের মধ্যে গ্রামীণ নারীরা হাতের বিভিন্ন কাজ যেমন-নকশিকাঁথা, বাঁশ ও বেতের কাজ ছাড়াও নানা হস্তশিল্প, হাঁস-মুরগির খামার, গাভী পালন, পাখি ও কবুতরের খামার, কৃষিকাজের মাধ্যমে সংসারে আর্থিক সহায়তা করছেন। আবার কোনো কোনো সংসারে আর্থিক আয়ে নারীই প্রধান ভূমিকা রাখছেন। গ্রামীণ কর্মক্ষম নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কৃষিকাজে নিয়োজিত। কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, দেশে মোট কর্মক্ষম নারীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কৃষিকাজে নিয়োজিত। নারী শ্রমশক্তির ৭১ দশমিক ৫ শতাংশ কৃষিকাজে নিয়োজিত। আবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অগ্রাধিকার ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্পের ৬০ শতাংশই নারী। এ প্রকল্প সফল করতে গ্রামীণ নারীরা প্রায় প্রতিটি বাড়ির উঠানে হাঁস-মুরগি, কবুতর পালনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। গবাদিপশু পালন এবং দুধ ও ডিম উৎপাদনে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। সরকারও গ্রামীণ নারীদের খামার স্থাপনে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে আসছে। নারীরা কৃষিকাজে জড়িত কাজের ২১টি ধাপের মধ্যে ১৭টি ধাপেই কাজ করে থাকেন। ফসলের প্রাক-বপন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ফসল উত্তোলন, বীজ সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং বিপণনের সঙ্গে ৬৮ শতাংশ নারী সম্পৃক্ত। গত এক যুগে বাংলাদেশে কৃষির নারীকরণ হয়েছে। বর্তমানে কৃষি খাতে নিয়োজিত আছেন ৯০ লাখের ওপর নারী। গত এক দশকে কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণও বেড়েছে ১০৮ শতাংশ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী বিগত বছরগুলোতে শ্রমবাজারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলোর একটি হচ্ছে শ্রমবাজারে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীর অংশগ্রহণ। গ্রামীণ নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের হার শহরের নারীর তুলনায় বেশি। আর পোশাক খাতের পরই প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশি নারী শ্রমিকেরা দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। পোশাক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের ৫৮ শতাংশই নারী, যাদের উল্লেখযোগ্য অংশ ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা থেকে আসেন। গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তাদের বড় একটি অংশ এখন দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখছেন। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও বাড়ছে নারী উদ্যোক্তা। এতে আত্মকর্মসংস্থানের সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও। কিন্তু বাস্তবে প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নারীর অবদান স্বীকার করলে এই হার দাঁড়ায় ৪০ শতাংশের বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রামীণ নারীদের জন্য বাজার ব্যবস্থা গড়ে না উঠায় তারা উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি হতে পারছে না। আবার মধ্যসত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে নারীরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্যও পান না। বাজারে সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলেই অর্থনীতির চালিকাশক্তিতে বাড়বে নারীর অংশগ্রহণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মাহবুবুল মোকাদ্দেম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গ্রামীণ নারীরা শহুরে নারীদের তুলনায় অধিক উৎপাদনশীল। শহুরে নারীরা বড়জোর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ান, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন কিন্তু গ্রামীণ নারীরা সবসময় পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। কৃষি উৎপাদনে তারা বরাবরই ভূমিকা রাখছেন। সাম্প্রতিক সময়ে পোশাক কারখানার মাধ্যমে শিল্প খাতেও গ্রামীণ নারীরা অবদান রাখছেন। কিন্তু কৃষি খাতে পণ্য উৎপাদনে গ্রামীণ নারী যে ভূমিকা রাখতেন তা এতকাল ধরে হিসাবে ধরা হতো না। সরকার এই নারীদের অবদান নীতিগতভাবে স্বীকার করলেও পরিসংখ্যান ব্যুরো এই সংখ্যা এখনো প্রকাশ করেনি। বিশ্ব গ্রামীণ নারী দিবসে আমি প্রস্তাব করছি যে, গ্রামীণ নারীরা পারিবারিক পর্যায়ে যেসব উৎপাদনশীল কাজ করে তার একটা অ্যাকাউন্টিং করা এবং প্রতি বছর এই সংখ্যা ঘোষণা করা। আয়ের বিনিময়ে শ্রমে গ্রামীণ নারীদের অংশগ্রহণের মাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে। এতে করে এসব নারীর স্বনির্ভরতা তৈরি হয় এবং ঘরবন্দি অবস্থা থেকে বের হয়ে আসে। আমি একে স্বাগত জানাই।
শিরোনাম
- আমার ছেলের খুনীর ফাঁসি যেন দেখে যেতে পারি: আবু সাঈদের বাবা
- দিল্লি বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৫, গ্রেফতার আরও এক কাশ্মীরি
- মালয়েশিয়ায় শর্টপিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন সাইবারজায়া ইউনিভার্সিটি
- আফ্রিকার ছয় দেশে আছে রুশ সেনার উপস্থিতি: রাষ্ট্রীয় টিভি
- ‘খালেদা জিয়াকে দেশের সেরা জয় উপহার দিতে চাই’
- উইঘুর যোদ্ধাদের চীনের কাছে হস্তান্তর করবে সিরিয়া
- ‘একটি দল ক্ষমতায় যেতে প্রলাপ বকছে’
- সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় পাশে থাকবে চীন
- বগুড়ায় কোলগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে জরাজীর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান
- শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে যা বলল ভারত
- মোংলায় জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ বিষয়ক সমন্বয় সভা
- আকাশ প্রতিরক্ষা ও যুদ্ধবিমান চুক্তি চূড়ান্ত করতে ফ্রান্সে জেলেনস্কি
- অস্ট্রেলিয়ায় বিএনপির জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উদযাপন
- ভারতের চা, মশলা, আমসহ কয়েকটি পণ্যে শুল্ক প্রত্যাহার করলেন ট্রাম্প
- নওগাঁর মান্দায় ধানের শীষে ডা. টিপুর নির্বাচনী পথসভা
- পাঙ্গাস পোনা শিকারের দায়ে জেলের কারাদণ্ড
- পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি মিলন কারাগারে
- রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
- নির্বাচনের আগেই হাসিনাকে দেশে এনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দাবি সারজিসের
- কলাপাড়ায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ৫ জন হাসপাতালে
আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস আজ
গ্রামীণ নারীর হাতে অর্থনীতির চাকা
আছেন কৃষি, পোশাক ও শিল্প খাতসহ শ্রমবাজার ও উদ্যোক্তা হিসেবে
জিন্নাতুন নূর
প্রিন্ট ভার্সন
এই বিভাগের আরও খবর