রবিবার, ২৬ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভোটের হার নিয়ে উদ্বেগ

উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা রাজনৈতিক দলের ও নেতাদের, ইসির নয় - আহসান হাবিব খান

গোলাম রাব্বানী

ভোটের হার নিয়ে উদ্বেগ

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন নির্বাচন কমিশন। উপস্থিতি বাড়াতে মাঠপর্যায়ে প্রচার-প্রচারণা আরও জোরদার করতে নির্দেশনা দিয়েছে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। নির্বাচন কমিশনের মাসিক সমন্বয় সভায় এ নির্দেশনা দিয়েছেন ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম। বৈঠকে সারা দেশের মাঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিগত তিনটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের যে হার ছিল, ষষ্ঠ নির্বাচনের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে এসে দেখা গেল, এটিই সবচেয়ে কম ভোটের হার। ৮ মে প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৩৬.১০। দ্বিতীয় ধাপে ছিল ৩৭.৫৭ শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপে ভোটের হার প্রথম

ধাপের চেয়ে বেড়েছিল।

ইসি সূত্র বলছে, ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে গড়ে ৪১ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে ৬১ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে তৃতীয় উপজেলা নির্বাচনে ৬৭.৬৯ শতাংশ ভোট পড়ে। দেশের ৪৯৫টি উপজেলায় চার ধাপে ভোট হচ্ছে। ২৯ মে তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় এবং ৫ জুন চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট হওয়ার কথা আছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, স্থানীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের বাইরে তেমন কেউ প্রার্থী হচ্ছেন না। ফলে মানুষ ভোট নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। সব দলের অংশগ্রহণে ভোট না হওয়ায় ভোটাররা কেন্দ্রে আসার উৎসাহ হারাচ্ছেন।

ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা রাজনৈতিক দলের/নেতাদের, ইসির নয়। ভোটার শিখন (এডুকেশন) এবং ভোটের দিন নির্বিঘ্নে, নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে এসে স্বাধীনভাবে যাতে ভোট দিতে পারে, এ জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং নিরাপত্তা দেওয়া ইসির দায়িত্ব। আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত দুটি বিভাগে মাইকিং করে ভোটারদের আশ্বস্ত করতে প্রচারের নির্দেশনা দিয়েছি। আহসান হাবিব খান বলেন, সব প্রার্থীই আমার কাছে সমান। যে কোনো মূল্যে প্রভাবমুক্ত, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা হবে। কোনো প্রার্থী আচরণবিধি ভঙ্গ বা নির্বাচনি অপরাধ করলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রার্থিতা বাতিলসহ কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যদিও এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটের হার কম হওয়ার পেছনে অন্তত পাঁচটি কারণ দেখছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তার মতে, বৈরী আবহাওয়া, একটি বড় দলের ভোটে না আসা, প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, শহর এলাকায় শ্রমিকদের অনুপস্থিতি এবং হাওরে ধান কাটার ব্যস্ততার কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে।

ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার বিষয়ে সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, হাওরাঞ্চলে ধান কাটার মৌসুম হওয়ায় ভোটের হার কম হয়েছে। সিইসির বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে ইসি আলমগীরও বলেন, বিশেষ করে হাওর ও দ্বীপাঞ্চলে ধান কাটার কাজ চলছে। আকস্মিক বৃষ্টি হওয়ায় ওই সব এলাকায় ধান কাটা নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অধিকাংশ এলাকায় ভোটের দিন সকালে ঝড়বৃষ্টি থাকায় ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে। স্থানীয় নির্বাচনে ক্রমান্বয়ে ভোটের হার কমে যাওয়ার বিষয়ে গবেষকরাই ভালো বলতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। তার মতে, প্রধান দুটি দলের একটি (বিএনপি) নির্বাচনে আসেনি। তাদের সমর্থকরা অংশগ্রহণ করেছে। রাজনৈতিকভাবে সমর্থন না পাওয়ায় তাদের লোকজন ভোট দিতে আসেনি। শহর এলাকায় ছুটি থাকলে শ্রমিকরা বাড়ি চলে যায়। গাজীপুরে ভোট কম পড়েছে শুধু ধান কাটা বা বৃষ্টির কারণে নয়, আরও একাধিক কারণ রয়েছে। এর বাইরে কোনো কারণ থাকলে তা গবেষকরা বলতে পারেন।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে গড়ে ভোট পড়েছে ৩৭.৫৭ শতাংশ। ফলাফল বিশ্লেষণে এ তথ্য মিলেছে। এ ধাপে সব চেয়ে ভোটের হার বেশি পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলায়। এ উপজেলায় ভোট পড়েছে ৭৪. ৯৫ শতাংশ। সব থেকে কম ভোট পড়েছে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায়। এ উপজেলায় ভোটের হার ১৭.৯৮ শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপে ভোটের হার প্রথম ধাপের চেয়ে বেড়েছে; গত ৮ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৩৬.১০। গত ২১ মে দেশের ১৫৬ উপজেলায় ব্যালট পেপার ও ইভিএমে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট হয়।

দ্বিতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে সাতটি উপজেলায় একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এর মধ্যে দুই উপজেলায় তিনটি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম জানান, ১৫৬টি উপজেলায় নির্বাচন হলেও তিনটিতে চেয়ারম্যান পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী বিজয়ী হওয়ায় ওই তিনটির ফলাফল ইসি থেকে সমন্বয় করা হয়নি। দ্বিতীয় ধাপে ১৫৩টি উপজেলার চেয়ারম্যান পদের ফলাফল সমন্বয় করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ব্যালটে অনুষ্ঠিত ১২৯টি উপজেলায় গড়ে ভোট পড়েছে ৩৮.৪৭ শতাংশ। আর ইভিএমে অনুষ্ঠিত ২৩টি উপজেলায় গড়ে ভোট পড়েছে ৩২.১৭ শতাংশ। ইসির জনসংযোগ পরিচালক জানান, ১৫৩টি উপজেলায় ৩ কোটি ৩৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬২০ ভোটারের মধ্যে ১ কোটি ২৫ লাখ ৮৩ হাজার ৯৪৭ জন তাদের ভোটাধিকর প্রয়োগ করেছেন।

ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ১৩৯ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোট পড়েছে গড়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে ১৫ উপজেলায়। কোনো উপজেলায় মাত্র ২০০ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন প্রার্থী। ২৫ শতাংশের কম ভোট পড়েছে ১৩ উপজেলায়। ৬০ শতাংশের ওপরে ভোট পড়েছে ৮ উপজেলায়। এ ছাড়া তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি ৬৩ উপজেলায়। এসব  উপজেলায় বিজয়ী ও নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান ১০ হাজারের বেশি। অন্যদিকে ৩১টি উপজেলায় ভোটের ব্যবধান তিন হাজারের কম। ১৫ উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে বেশি। এসব উপজেলায় ভোটের ব্যবধান ১ হাজার ভোটের কম। প্রথম ধাপে সবচেয়ে বেশি ভোটের ব্যবধান হয়েছে ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলায়। প্রথম ধাপের ফলাফল বিশ্লেষণে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। নির্বাচনে ৩৬.১০ শতাংশ ভোট পড়েছে। ইভিএমে ভোটের হার ৩১.৩১ শতাংশ, ব্যালটে ৩৭.২২ শতাংশ। সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে সোনাতলা, মীরসরাই ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলায়। সেখানে ভোট পড়েছে ১৭ শতাংশ। সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলায়। সেখানে ভোট পড়েছে ৭৩ দশমিক এক শতাংশ।

তৃতীয় ধাপে মাঠে থাকবে ৪১৩ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট : উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন ও অন্যান্য অপরাধ রোধ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসন ক্যাডারের ৪১৩ কর্মকর্তাকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আগামী ২৯ মে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সর্বশেষ খবর