আর জি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে টানা আন্দোলন-বিক্ষোভে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘটনায় জড়িতদের সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে প্রতিবাদকারীরা রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগ দাবি করছেন। তবে মমতা এ বিক্ষোভের পেছনে বিজেপিসহ বিরোধীদের জড়িত থাকার কথা বলছেন। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, হুমকি এবং মামলা দায়েরের ঘটনাও ঘটে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি সরাসরি মাঠে নেমে পড়ায় আন্দোলন নতুন মাত্রা পেয়েছে। সবমিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকা নিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়েছেন মমতা ব্যানার্জি। সূত্র : ভারতীয় গণমাধ্যম।
প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, এরই মধ্যে মমতার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বিনীত জিন্দাল। ‘বাংলা জ্বললে দিল্লিও থেমে থাকবে না’ মন্তব্য করার জন্য তিনি এ মামলা করেছেন। বৃহস্পতিবার দিল্লির পুলিশ কমিশনারের কাছে দায়ের করা এ মামলায় বিনীত জিন্দাল লিখেছেন, ‘দলের ছাত্র পরিষদের সভায় মমতা বলেছেন, বাংলা জ্বললে আসাম, বিহার, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা ও দিল্লি জ্বলবে। এটি স্পষ্ট যে এই মন্তব্য প্ররোচনামূলক এবং রাষ্ট্রবিরোধী। বিভিন্ন অঞ্চলের একাধিক গ্রুপের মধ্যে হিংসা এবং ঘৃণা ছড়াতে পারে।’
এর আগে বুধবার কলকাতার মেয়ো রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের সভা ছিল। সেই সভা থেকে আরজি করের ঘটনায় দোষীর ফের ফাঁসির সাজা চান মমতা। এরপরই বিজেপিকে আক্রমণ করেন। বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ মনে করছেন এটা বাংলাদেশ। আমি ওদের ভালোবাসি। ওদের সংস্কৃতি আমাদের সংস্কৃতি এক। তবে এটা আলাদা রাষ্ট্র। ভারতবর্ষ একটা আলাদা রাষ্ট্র। বাংলায় যদি আগুন লাগান, কোনো রাজ্যই থেমে থাকবে না। বাংলায় আগুন লাগালে আসাম থেমে থাকবে না। উত্তরপূর্ব, উত্তর প্রদেশ থেমে থাকবে না। বিহার, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা ও দিল্লিও থেমে থাকবে না। আপনার (মোদি) চেয়ারটা আমরা টলমল করে দেব।’ মমতার এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে সরব হয়েছেন একাধিক বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দিদি, আপনার এত সাহস হলো কীভাবে যে আসামকে হুমকি দিচ্ছেন? আমাদের রক্তচক্ষু দেখাবেন না।’ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি, মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং এবং বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী বিজয় কুমার সিনহা মমতার মন্তব্যের বিরোধিতা করেন।
এদিকে মাঠের আন্দোলন সম্পর্কে জানা গেছে, আন্দোলনকারীরা বলেছেন, তাদের রাস্তা থেকে একচুলও সরে যাওয়ার প্রশ্ন নেই। সুবিচারের দাবিতে আন্দোলন জারি থাকবেই। আবার কাজেও ফেরা হবে।
প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, এই বক্তব্যের জের ধরে টানা কর্মবিরতি থেকে সরে গতকাল থেকে আর জি কর হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকরা চালু করেছেন টেলিমেডিসিন পরিষেবা। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হাসপাতালের জিএলটি বিল্ডিং থেকে চলে এই ভারচুয়াল পরিষেবা। তবে ডাক্তাররা রোগীদের যে প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন তাতে লেখা থেকেছে, ‘আর জি করের বিচার চাই/ অপরাধ চক্রের বিনাশ চাই’ ‘We Want Justice’।