ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর স্বাস্থ্য খাত ঢেলে সাজাতে বদলি ও পদায়নে জোর দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এ পদগুলোয় নিজেদের লোক বসাতে মুখোমুখি দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ও জামায়াতপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ)। প্রায় দুই সপ্তাহের এ অচলাবস্থা কাটাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগে নিজেদের মধ্যে সমঝোতায় এসেছে দুই সংগঠন।
ড্যাব ও এনডিএফ সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার সন্ধ্যায় সাংগঠনিক দ্বন্দ্ব নিরসনে বৈঠকে বসেছিলেন ড্যাব ও এনডিএফ নেতারা। এ বৈঠকে দুই সংগঠনের দাবি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসনসহ যে পদগুলোয় নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়ে ড্যাবের আপত্তি রয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে। কোন পদগুলোয় এনডিএফ তাদের সদস্যদের দেখতে চায় তা তারা জানিয়েছে। দুই সংগঠনের আগ্রহের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট কিছু পরিচালক পদে ড্যাব এবং লাইন ডিরেক্টরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব চেয়েছে এনডিএফ। এ আলোচনার ভিত্তিতে মীমাংসায় এসেছে চিকিৎসকদের দুই সংগঠন। এ ব্যাপারে এনডিএফের জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. মো. মাহমুদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ড্যাবের সঙ্গে আমাদের আগের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। মন্ত্রণালয়ের কিছু আদেশের পরিবর্তন চেয়ে তারা দাবি জানিয়েছিল। সেখানে এনডিএফও সাংগঠনিক জায়গা থেকে দাবি তুলে ধরেছে। এটা নিয়ে দুই সংগঠনের মধ্যে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তা নিরসনে আলোচনা হয়েছে। পরিচালকের যে পদে তাদের আপত্তি রয়েছে তা নিয়ে এবং এনডিএফের সদস্যদেরও পদায়নের ব্যাপারে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। যতটুকু শুনেছি, ড্যাব ইতোমধ্যে তাদের কর্মসূচি থেকে সরে এসেছে।’ ড্যাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শাখার সভাপতি ডা. ফারুক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কোনো দুর্নীতিবাজ, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর, যারা ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত করেছে, তাদের অধিদপ্তরে চাই না। এ বিষয়টি আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জানিয়েছি। মহাপরিচালক আমাদের জানিয়েছেন তাঁর সঙ্গে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের আলোচনা হয়েছে। যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ করেছি তিনি বিষয়গুলো দেখবেন। এ ছাড়া আন্দোলন করায় আমাদের কয়েকজন চিকিৎসককে শাস্তিমূলক যে বদলি করা হয়েছে তা প্রত্যাহারের বিষয়ও তিনি বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আমরা কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এনডিএফের সঙ্গে ড্যাবের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের বৈঠক হয়েছে বলে শুনেছি। সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা কর্মসূচি পরিচালনা করব।’ ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সদস্যরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। এখন স্বাস্থ্য বিভাগের বড় পদে আর স্বাচিপের কাউকে রাখা হচ্ছে না। এর পরই পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় ড্যাব ও এনডিএফের মধ্যে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এ বি এম আবু হানিফসহ অন্যদের নিয়োগ কেন্দ্র করে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন ড্যাব ও এনডিএফ সমর্থক চিকিৎসকরা। প্রায় দুই সপ্তাহ রাজধানীর মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মুখোমুখি অবস্থানে ছিলেন দুই সংগঠনের কর্মীরা। অবস্থান কর্মসূচি থেকে হাতাহাতি, সংঘর্ষও ঘটে। আহত হন এনডিএফের তিনজন চিকিৎসক। এ ঘটনায় দুই সংগঠনের দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে পড়ে। অচলাবস্থা তৈরি হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে অধ্যাপক রোবেদ আমিনকে বসানোর পর একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। চিকিৎসকদের একটি অংশ রোবেদ আমিনকে মেনে নেননি। এ নিয়ে আন্দোলনের কারণে রোবেদ আমিন মহাপরিচালকের পদে বসতে পারেননি।