হঠাৎ শঙ্কা তৈরি হয়েছে সম্ভাবনার সার্বিয়ার শ্রমবাজার ঘিরে। সার্বিয়ার ভিসা সার্ভার বিকল হওয়ার পর তৈরি হয়েছে সংকট। সার্ভার অকেজোর সুযোগ নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রতারক চক্র। ক্লোন সার্ভার তৈরি করে ভুয়া ভিসার অ্যাপ্রুভাল দেওয়া হচ্ছে অহরহ। ফলে বিপাকে পড়ছেন ভিসাপ্রত্যাশীরা।
নয়াদিল্লিতে থাকা সার্বিয়ার দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানান, নয়াদিল্লি থেকে ইস্যু হয়ে থাকে বাংলাদেশিসহ এ অঞ্চলের কয়েকটি দেশের নাগরিকদের জন্য সার্বিয়ার ভিসা। দূতাবাসের ভিসার আবেদনের ধারণক্ষমতা ছিল প্রতিদিন ৩০টি। কিন্তু বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভুটান ও আফগানিস্তান থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজারের বেশি আবেদন জমা হচ্ছে। হঠাৎ করেই এত বেশি সংখ্যক আবেদনের ফলে অকেজো হয়ে পড়ে সার্ভার। ফলে কোনো ভিসার আবেদনই প্রসেস করা সম্ভব হচ্ছে না।
বাংলাদেশ থেকে সার্বিয়ার কর্মী-ভিসার জন্য আবেদন করতে প্রায় এক মাস ধরে নয়াদিল্লিতে অবস্থান করা ঢাকার সাজিদুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সার্ভার বিকল হওয়ার পরও দূতাবাসের সার্ভারের মতো প্রায় একই ধরনের একটি সাভার তৈরি করেছে প্রতারকচক্র। দূতাবাসের এই ক্লোন সার্ভার থেকে ভিসা আবেদন অ্যাপ্রুভ দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। ফলে বিপাকে পড়ছেন সাধারণ ভিসা আবেদনকারীরা।
জনশক্তি রপ্তানিকারকরা জানান, সংকটে পড়ছেন রপ্তানিকারকরাও। বাংলাদেশিদের আবেদন নিয়ে দিনের পর দিন আবেদন করলেও যখন অ্যাপ্রুভাল পাওয়া যাচ্ছিল না তখন ভিনদেশের এই প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে বাংলাদেশের একাধিক এজেন্সি। ফলে অন্যান্য এজেন্সিও পড়ে যায় চাপে। সার্বিয়ার দূতাবাস থেকে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নিলে শঙ্কায় পড়বে শ্রমবাজার। এ জন্য বাংলাদেশের দায়িত্বশীলদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। জানা যায়, অর্থনৈতিকভাবে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ সার্বিয়ায় চলছে কর্মী সংকট। দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে গণপরিবহন, নির্মাণ, ফ্যাক্টরি, হোটেল-রেস্তোরাঁর মতো কর্মীনির্ভর খাত ঝিমিয়ে পড়েছে। ফলে কার্যক্রম চালু রাখতে কর্মী খুঁজছে দেশটির নিয়োগকর্তারা। পাশাপাশি বিশাল কর্মযজ্ঞের ইউরো-এক্সপো আয়োজন করতে যাচ্ছে সার্বিয়া। এ জন্য প্রয়োজন বিশাল সংখ্যক নির্মাণকর্মী। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে বড় আকারে বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি। এত দিনের জটিল অভিবাসন নীতি অনেকাংশেই সহজ করে এনেছে তারা। বাংলাদেশের জন্যও তৈরি হয়েছে সুযোগ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করেছে সার্বিয়ার কোম্পানিগুলো।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মধ্যপ্রাচ্যনির্ভর শ্রমবাজারের সংকট কাটাতে নতুন শ্রমবাজারে কর্মী পাঠানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। ইউরোপের কয়েকটি দেশে মৌসুমি কর্মী পাঠানোর পাশাপাশি নিয়মিত শ্রমবাজার খোঁজার চেষ্টা চলছে। এ ক্ষেত্রে সার্বিয়া হতে পারে বাংলাদেশের একটি বড় শ্রমবাজার। দুই বছর ধরে দেশটিতে কর্মী পাঠানোর জন্য চেষ্টা চলছিল। এখন সফলতা আসতে শুরু করেছে।