শেখ হাসিনার পতন এবং পরবর্তী বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে একটি বিশেষ তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ হাসিনা আমলের অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগীর বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। তথ্যচিত্রে উঠে আসে কীভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার।
গত শুক্রবার প্রকাশিত ‘রিবিল্ডিং বাংলাদেশ ডেমোক্রেসি আফটার শেখ হাসিনা’ শিরোনামে একটি তথ্যচিত্রে ফুটে উঠেছে, ১৫ বছর পুলিশ, র?্যাবসহ নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করে কীভাবে খুন, গুম ও নির্যাতনের মাধ্যমে বিরোধী মত ও চিন্তাশক্তিকে দমন করা হয়েছিল। এ ছাড়া উঠে এসেছে কীভাবে ফ্যাসিবাদের ইতিহাস রচনা করেছিল শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকার।
তথ্যচিত্রে বলা হয়, ২০২৪ সালে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জেন জির বেশির ভাগের কাছে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে থাকলেও অনেক অভিভাবকের কাছে তিনি ছিলেন ট্র্যাজিক নায়িকা। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। এই সময়ে বিরোধী দলের অনেক নেতা-কর্মীকে হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনী বিনা বিচারে আটকে রাখে।
ভুক্তভোগী পরিবারের একজন হুম্মাম কাদের চৌধুরী। ২০১৫ সালে তাঁর বাবা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসি দেওয়া হয়। ফাঁসি কার্যকরের ৯ মাস পর হুম্মামকে হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনী অপহরণ করে একটি জানালাবিহীন কক্ষে আটকে রাখে। হুম্মাম জানিয়েছেন, তাঁকে আয়নাঘর নামের একটি কুখ্যাত গোপন কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল।
শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর জোরপূর্বক গুমের শিকার কয়েকজনকে হঠাৎ ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁদের একজন আবদুল্লাহিল আমান আযমী। দীর্ঘ আট বছর আয়নাঘরে আটকে রাখার পর গত বছরের ৭ আগস্ট তাঁকে একটি রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হয়। আলজাজিরাকে তিনি বলেন, ৬৯ হাজার ৭৯৪ ঘণ্টা আমি আটক ছিলাম। আমি রাতে কখনো ঘুমাতে পারতাম না। একটু শব্দ হলেই আমি ভয় পেতাম। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন ব্রিগেডিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও কোনো কারণ ছাড়াই ২০০৯ সালে জেনারেল আযমীকে বরখাস্ত করা হয়। এর সাত বছর পর তাঁকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই আয়নাঘরে আটকে রাখা হয়।
নিজ দেশে নির্যাতন-নিপীড়ন সত্ত্বেও শেখ হাসিনা বিশ্ব থেকে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেতে থাকেন। ভয়ে হাসিনার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেত না।
তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা এবং জনগণের প্রতি তাদের সহমর্মিতার চিত্র। সেনাবাহিনীর ভূমিকা বিশেষভাবে প্রশংসিত হয় আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান আলজাজিরাকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যেতে পারে না।
তথ্যচিত্রে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের কথা। অন্তর্বর্তী সরকারের ধারণা, গত সরকারের মন্ত্রী, ঘনিষ্ঠরা বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। সূত্র : আলজাজিরা