মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদের প্রশাসকদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কর্মী হিসেবে সরাসরি যুক্ত না থাকা সত্ত্বেও প্রশাসক ও তার সাত সহযোগীকে ভুয়া বেতনধারী দেখিয়ে স্বাস্থ্যবিমা সুবিধা গ্রহণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
নগদ থেকে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে পাঠানো নথিপত্রে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা হয়েও নগদের প্রশাসকের দায়িত্ব পাওয়া মো. মোতাছিম বিল্লাহ তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে বিমা সুবিধার আওতায় আনেন। নগদে তার মাসিক বেতন দেখানো হয়েছে ৯ লাখ টাকা। যদিও তিনি নগদ থেকে কোনো বেতন গ্রহণ করতেন না। তার সহযোগী হিসেবে যুক্ত আরও সাত সহযোগী প্রশাসকের প্রত্যেকের বেতন দেখানো হয়েছে ৫ লাখ টাকা করে। এদের মধ্যে মো. হাবিবুর রহমান জ্যেষ্ঠ সহযোগী প্রশাসক এবং আবু সাদাত মোহাম্মদ ইয়াসিন, মো. আয়ুব খান, আনোয়ার উল্লাহ, প্রবাল আহমেদ, খন্দকার শাহনুর সাব্বির এবং একেএম মনিরুজ্জামান সহযোগী প্রশাসক ছিলেন। এদের প্রত্যেকের বেতন দেখানো হয়েছে ৫ লাখ টাকা করে। অথচ তাঁদের কেউই নগদের নিয়মিত কর্মী ছিলেন না। স্বাস্থ্যবিমা সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে সহযোগী প্রশাসকদের স্ত্রী ও দুজন করে সন্তানকেও। এর মধ্যে শুধু মো. আয়ুব খানের একটি সন্তান রয়েছে। নথিপত্রে দেখা গেছে, গত ২১ এপ্রিল নগদের পরিচালনা পর্ষদের সভায় প্রশাসকদের জন্য স্বাস্থ্যবিমা সুবিধা অনুমোদন দেওয়া হয়। চলতি মে মাস থেকেই এ সুবিধা কার্যকর করা হয়, যা চলবে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। বিমা কভারেজে রয়েছে স্ত্রীর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের জন্য ১ লাখ টাকা, স্বাভাবিক প্রসবের জন্য ৬৫ হাজার টাকা এবং গর্ভপাতের (মিসক্যারেজ) জন্য ৫০ হাজার টাকার সুবিধা। এ ছাড়া গ্রুপ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পাশাপাশি জটিল রোগের চিকিৎসা, হাসপাতালে ভর্তি হয়ে অপারেশন ও দুটি সন্তানের চিকিৎসা। নগদের স্বাস্থ্যবিমা সেবা চুক্তি রয়েছে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সঙ্গে। এ বিষয়ে নগদের সাবেক প্রশাসক মোতাছিম বিল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নগদের পরিচালনা পর্ষদ আমাদের স্বাস্থ্যবীমা সুবিধা অনুমোদন দিয়েছে, তাই আমরা নিয়েছি। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান জানান, প্রশাসকদের এরই মধ্যে নগদ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তারা নগদ থেকে কোনো বেতন পেতেন না। স্বাস্থ্যবিমার বিষয়টি অনিয়মের পর্যায়ে পড়ে না। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ২১ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদারকে নগদের প্রশাসক হিসেবে এক বছরের জন্য নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া প্রশাসককে সহায়তার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও ছয় কর্মকর্তাকে নগদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি দিদারের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে বদিউজ্জামানের পদত্যাগের পর ২৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পরিচালক মো. মোতাছিম বিল্লাহকে নগদের নতুন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে আদেশ জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সহায়তার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয় আরও সাতজনকে। গত ১৫ মে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান নগদে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন হাই কোর্ট। ফলে নগদ পরিচালনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে প্রশাসক দল নগদে কাজ করছিল, তারা দায়িত্ব হারিয়েছেন। ফলে নগদের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক ও ডাক বিভাগ দুই প্রতিষ্ঠানই নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।