হত্যাচেষ্টা ও চাঁদা দাবির মামলায় আসামিকে জামিন না দেওয়ায় বিচারককে আওয়ামী লীগের দালাল বলে গালিগালাজ ও হেনস্তার অভিযোগ ওঠায় চার বিএনপিপন্থি আইনজীবীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
ওই ৪ আইনজীবী হলেন-ফোরামের ঢাকা বার ইউনিটের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম, ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল খালেক মিলন, ফোরামের ঢাকা বার ইউনিটের প্রাথমিক সদস্য অ্যাডভোকেট মো. জাবেদ ও অ্যাডভোকেট এস এম ইলিয়াস হাওলাদার। গতকাল সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক মো. জিয়াউর রহমান স্বাক্ষরিত এ নোটিস পাঠানো হয়। নোটিসে বলা হয়, ১৭ মে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলার শুনানিকে কেন্দ্র করে তাদের ‘অপেশাদারিমূলক’ আচরণ ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে, যা দলীয় ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন করেছে। এহেন অযাচিত এবং অপেশাদারমূলক আচরণের জন্য তাদের বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে সভাপতি ও মহাসচিব বরাবর লিখিতভাবে আগামী তিন দিনের মধ্যে কারণ ব্যাখ্যা করার জন্য বলা হলো। জানা গেছে, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় হানিফ মেম্বার নামে এক আসামি ১২ মে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। গত বৃহস্পতিবার তার জামিন চেয়ে আবেদন করেন আইনজীবী। তবে নিবেদন মতে শনিবার শুনানি করার জন্য রাখতে বলেন আইনজীবীরা। শনিবার শুনানিতে আসামিকে জামিন না দেওয়ায় বিচারককে আওয়ামী লীগের দালাল বলে তকমা ও গালিগালাজ করেন কয়েকজন আইনজীবী। এ বিষয়ে বিচারকের সঙ্গে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের একটি কথোপকথনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে সিনিয়র আইনজীবী খোরশেদ আলম বিচারককে বলছেন, ঘটনার তারিখ, সময়, ঘটনাস্থল সেইম। দুটি মামলা, এটা হয় না কি?’ এরপর তিনি এজলাস ত্যাগ করেন। তবে কয়েকজন আইনজীবী আদালতে ছিলেন। এ সময় আবদুল খালেক মিলন নামে এক আইনজীবী উচ্চৈঃস্বরে বলেন, ‘আমরা যে আজকে কথা বলি, যদি ৫ আগস্ট সরকার ফল্ট না করত আমরা গুম হতাম, খুন হতাম। আমরা সিএমএম কোর্টে রাজনীতি করেছি। ৮০ বছরের একজন লোক স্যারেন্ডার করেছে।’ এ সময় আরেক আইনজীবী বলেন, ‘আমরা শুনানি করে চলে গেছি। উনি (বিচারক) জিআরও (আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা)-কে বলেন-আপনি ভয় পেয়েছেন। আমরা কি এখানে ভয়ের কিছু করেছি?’ আবদুল খালেক মিলন বলেন, ‘শোনেন স্যার, বলতে তো এখন খারাপ শোনা যায়, আমাদের কারণে আজ এই চেয়ারে বসা আপনি। নইলে আপনি এখানে থাকতে পারতেন না। আমরা যে কষ্ট করছি গত ১৭ বছর। ৪ আগস্টের ঘটনা সিসিটিভি ফুটেজে দেখেন। অন্যায় কোনো আবদার করিনি। ৫ আগস্টের পর আজ পর্যন্ত কোনো কোর্টে তদবির করিনি। সবাই বলছে, আমি বলছি না। আমি যাই না।’তখন আইনজীবীরা বলেন, ‘আমরা পুনরায় জামিনের একটা আবেদন করি। আপনি কালকে শুনানির জন্য রাখেন।’ বিচারক বলেন, ‘আপনারা স্পেশাল পুটআপ নিয়ে সিজেএম স্যারের কাছে যান।’ এরপরও আইনজীবী বলেন, ‘আপনি কালকে একটা ডেট রাখেন। তাহলে আমরা বাঁচতে পারি। না হলে আমরাও বাঁচতে পারি না। কাল শুনানির জন্য রাখেন। বাদীকে নিয়ে আসব।’ এ সময় শোনা যায়, যান যান। তখন এক আইনজীবী ধমকের সুরে বলেন, চুপ। তারা বিচারককে বলেন, এ আওয়ামী লীগের দালাল। পরে বিচারককে গালিগালাজ করেন।