বিদেশে নেওয়ার কথা বলে কুমিল্লার এক মেয়েকে বিয়ে করেন ফ্রান্সপ্রবাসী জহির (৩৭)। মেয়ের নাম তানহা। বিয়ের এক মাস পর ফ্রান্সে চলে যান জহির। নিজ বোন জিপসির বাসায় রেখে যান তানহাকে। তাদের বাসা রাজধানীর মিরপুরের টোলারবাগে। প্রায় এক বছর শেষে দেশে ফিরে আসেন জহির। এ সময় তানহাকে ফ্রান্সে নিয়ে যাওয়ার জন্য তানহার পরিবারের কাছ থেকে নেন ৮ লাখ টাকাও। তার পর আবার ফ্রান্সে চলে যান জহির। যাওয়ার সময় এবারও তানহাকে রেখে যান বোন জিপসির বাসায়। কিন্তু তানহার বিদেশ যাওয়া আর হয়নি। নিপীড়িত-নির্যাতিত তানহাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কুমিল্লার লালমাই রাস্তার পাশে ফেলে রেখে চলে যায় জহিরের পরিবার। স্থানীয়রা তানহাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করান। পরে ভুক্তভোগী পরিবার জানতে পারে নির্যাতন-নিপীড়নের কথা। তখন স্বজনদের তানহা জানান, নির্যাতনের কথা বাড়িতে জানালে পরিবারসহ হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেওয়ায় ভয়ে সে চুপ ছিল। এমনকি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তানহাকে বোনের স্বামী আনোয়ার ধর্ষণ করেন বলেও অভিযোগ করেন তানহা। আদালতে করা মামলা সূত্রে জানা যায় এসব তথ্য। গত ৫ আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জহির, তার বোন জিপসি, জিপসির স্বামী আনোয়ার, জহিরের বড় ভাই জামাল ও জহিরের আরেক বড় বোনের স্বামী রাসেলের বিরুদ্ধে মামলা করে তানহার পরিবার। এরআগে জাহিরের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় আইনের আশ্রয় নিতে পারেনি বলে জানায় তানহার পরিবার। অভিযোগের বিষয়ে জানতে জহিরের দুলাভাই আনোয়ারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যে অভিযোগগুলো করা হয়েছে সেসব বিষয়ে সাক্ষাতে কথা বলতে হবে। মোবাইল ফোনে এনিয়ে কোনো কথা বলা যাবে না।
সারা দেশে একের পর এক এমন প্রতারণা ঘটছে বলে জানা গেছে। গত পাঁচ বছরে বিয়ে নিয়ে এমন প্রতারণার শতাধিক মামলার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই)। পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোস্তফা কামাল এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের সমাজে বিয়ে নিয়ে প্রতারণার ঘটনা এখন অহরহ ঘটছে। কাবিননামায় আগে ছেলেমেয়ের বৈবাহিক অবস্থা সুস্পষ্ট করা ছিল না। পিবিআই থেকে তা নিয়ে সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল, পরে কাবিননামার ছেলের অবস্থা এবং মেয়ের অবস্থার কলামে সংশোধন আনা হয়েছে বলে জেনেছি। সিআইডি সূত্র জানায়, ২০২০ সালের জুনে গোলাম মোস্তফা নামে একজনকে তারা আটক করেছিলেন। বিয়ের কথা বলে সবার কাছ থেকে ধাপে ধাপে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। গ্রেপ্তারের আগে তিনজন নারী রাজধানীর আলাদা তিনটি থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। পরে সিআইডিকে একই অভিযোগ জানান আরও ছয় নারী। এ ছাড়া ফোনে অভিযোগ করেন আরও তিনজন। গত বছরের ২৮ মার্চ যশোরে কলেজছাত্রীকে বিয়ের নামে প্রতারণা এবং শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের চেকিংম্যানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়। ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী নিজেই বাদী হয়ে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সদর আমলি আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে আদেশ দেন। অভিযুক্ত হৃদয় কুমার দাস জয় বাঘারপাড়া উপজেলার সাদীপুর গ্রামের দিলিপ কুমার দাসের ছেলে।