বাঁশ কাটতে গিয়ে চোখে কঞ্চির আঘাত পেয়েছেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের বাসিন্দা মোজাম্মেল হক (৫২)। স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসকরা ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ভোরে মির্জাপুর থেকে রওনা হয়ে সকাল ৯টায় হাসপাতালের সামনে এসেছেন মোজাম্মেল ও তার ছেলে মাহমুদুল হাসান। মাহমুদুল বলেন, প্রায় দেড় ঘণ্টা হলো বাবাকে নিয়ে হাসপাতালের গেটের বাইরের ফুটপাতে বসে আছি। হাসপাতাল খুলবে কি না কেউ বলতে পারছে না। ঢাকা শহর সেভাবে চিনি না, আর বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য আমাদের নেই। বাবার চোখ ফুলে গেছে, রক্ত জমে আছে, তীব্র ব্যথায় শরীরে জ্বর এসেছে। এরকম অসুস্থ মানুষকে নিয়ে বর্ষার মধ্যে এসে রাস্তায় বসে আছি।
ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জুলাই আন্দোলনে আহতদের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মচারীদের সংঘর্ষের জেরে গতকালও বন্ধ ছিল চিকিৎসাসেবা। টানা চার দিন ধরে চক্ষু চিকিৎসায় দেশের প্রধান হাসপাতালটি বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। জরুরি সেবা বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই এসে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তারা কেউ আসেননি। শতাধিক রোগী হাসপাতালের ফটকে অপেক্ষা করছেন। তাদের সবাই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চিকিৎসা করাতে এসেছেন। চিকিৎসাসেবা কখন চালু হবে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী আর স্বজনরা। প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ জন রোগীকে হাসপাতালের প্রধান ফটকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা জানান, বর্তমানে জুলাই গণ অভ্যুত্থানে আহত হয়ে চিকিৎসা নেওয়া রোগী আছেন ৬০-৭০ জন। আর কিছু সাধারণ রোগী এখনো হাসপাতালে আছেন। চিকিৎসা মাঝপথে থাকায় তারা কোথাও যেতে পারছেন না। তারা সংখ্যায় প্রায় ৩০ জন। মারামারি-সংঘর্ষের পর থেকে হাসপাতালটিতে নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে আনসার ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সেখানে থাকা আনসার ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবারের পর থেকে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তবে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তারা আসছেন না।
হাসপাতালের কর্মচারীরা গত বুধবার সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করলে সকাল ১০টার পর তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান সেখানে চিকিৎসাধীন জুলাই আন্দোলনে আহতরা। একপর্যায়ে সেদিন আহতদের সঙ্গে যোগ দেন বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা। এ ঘটনায় চিকিৎসক, কর্মচারীদের অনেকে আহত হয়েছেন বলে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক চিকিৎসক জানে আলম জানিয়েছিলেন। দুপুরের দিকে সেনা সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। তবে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে বিকালের দিকে। চিকিৎসক, কর্মচারীদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে নিরাপত্তার দাবিতে সেদিন থেকেই হাসপাতালে আসা বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসক, কর্মচারীরা।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন স্বাক্ষরিত এ বিবৃতিতে বলা হয়, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসকসহ অন্য সেবাদানকারীরা গত ২৮ মে হাসপাতালের অভ্যন্তরে আক্রান্ত হওয়ায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এর ফলে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে শুধু জুলাই যোদ্ধারা হাসপাতালে অবস্থান করছেন। সমস্যা সমাধানে হাসপাতালে প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসাসেবার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত হলে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পুনরায় চালুর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।