বদলে যাচ্ছে কারাগার। দীর্ঘদিন ধরেই অনিয়ম এবং দুনীতির কালিমায় লেপ্টে থাকা কারা প্রশাসনে আসছে ইতিবাচক পরিবর্তন। জনবলসংকটে জর্জরিত কারা অধিদপ্তরে এবার বর্ধিত কাঠামো ও ধাপে ধাপে প্রায় দুই হাজার জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়, ২ জন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন), ৬ জন উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি), ১৩ জন অতিরিক্ত ডিআইজিসহ ১ হাজার ৮৯৯টি পদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পাঁচটি ধাপে এসব পদের নিয়োগ সম্পন্ন হবে। অন্যদিকে সিলেট মেট্রো কারাগার এবং কেরানীগঞ্জে বিশেষ কারাগারের পর শিগগিরই যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে আরও তিনটি বিশেষায়িত কারাগার।
কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কারা অধিদপ্তর তথা বন্দি ব্যবস্থাপনার জন্য এই জনবল খুবই দরকার ছিল। যদিও পাঁচটি ধাপে জনবল নিয়োগ শুরু হবে। জনবলসংকটের জন্য মাঝেমধ্যেই নানান সমস্যার সৃষ্টি হতো কারাগারগুলোতে। এখন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বন্দিদের ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হবে।
জানা গেছে, গত ১৮ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (কারা-১) তাহ্নিয়া রহমান চৌধুরী স্বাক্ষরিত চিঠিতে (স্মারক নং- ৫৮.০০.০০০০.৮৪.১৫.০০২.২৪.৪২৫) কারা অধিদপ্তরের বিভিন্ন ইউনিটের জন্য পাঁচ ধাপে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫২২টি, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৫৮০টি, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ৪০৩টি, ২০২৭-২৮ অর্থবছরে ১৩৫টি এবং ২০২৮-২৯ অর্থবছরে ২৫৯টি পদ বছর বছর সংরক্ষণের ভিত্তিতে অস্থায়ীভাবে সৃজন করা হবে। একই সঙ্গে তিনটি ধাপে ২০২৬-২৭ অর্থবছর থেকে ২০২৮-২৯ অর্থবছরের মধ্যে ৬৪টি পদ বিলুপ্তি করা হবে। অবশেষে চিঠিটি বাস্তবে রূপ পেতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দুইজন অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক পদে নিয়োগ দিয়েছে কারা প্রশাসন। তাদের একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল তানভীর হোসেনের অধীনে থাকছে অপারেশনস এবং অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবীরের অধীনে থাকছে বন্দি ব্যবস্থাপনা। কারা অধিদপ্তরের স্থায়ী লোকবলের মধ্যে মো. জাহাঙ্গীর কবীরই হচ্ছেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক হিসেবে নিয়োগ পেলেন। তবে আগের কাঠামোতে থাকা অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শকের অধীনে থাকাছে প্রশাসনিক বিষয়টি। তিনি কারা প্রশাসনের সার্বিক বিষয় দেখভাল করবেন। নতুন জনবল কাঠামো বাস্তবায়নের উদ্যোগকে একটি আশাব্যঞ্জক মোড় হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন পর কাঠামোগত এমন উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা বাড়বে। বিশেষ করে ওভারক্রাউডিং, নিরাপত্তাঝুঁকি এবং পুনর্বাসন কার্যক্রমে গতি আসবে বলে মনে করছেন তারা। নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং কারা অধিদপ্তরের সাবেক ডিআইজি প্রিজন মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রায় ১ হাজার ৯০০ জনবল, এটা তো অনেক বড় অর্জন বর্তমান কারা প্রশাসনের জন্য। তবে মনে রাখতে হবে নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যেন কোনোভাবেই অর্থের লেনদেন না হয়। নইলে তা হিতে বিপরীত হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারাগারে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি এবং অনিয়ম ঠেকাতে ‘প্রিজন সিকিউরিটি ইউনিট’-কে আরও গতিশীল করতে হবে। তারা নানা ছদ্মবেশে দেশের বিভিন্ন কারাগারে দায়িত্ব পালন করবে এবং সরাসরি আইজি প্রিজন্সকে অবহিত করবে। তাহলে কারাগারে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি ফিরে আসবে। আলোচনায় দুই বিশেষ কারাগার ভিআইপি বন্দিদের জন্য কেরানীগঞ্জে যাত্রা শুরু করা বিশেষ কারাগার এবং সিলেট মেট্রো কারাগার ইতোমধ্যে আলোচনায় এসেছে। এই দুই কারাগার নিয়ে দেশে কারাগারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭০টি। কেরানীগঞ্জের বিশেষ কারাগারে থাকা দেশের সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখতে বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক স্ক্যানারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি।
কয়েক ধাপে যাচাইয়ের পর নির্বাচন করা হয়েছে ওই কারাগারের সেবক। কারাগারে থাকা এসব বন্দি যাতে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারেন, সে বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে কারা কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে সিলেটে পরিত্যক্ত কারাগারকে মেট্রো কারাগার হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। ওই কারাগারে সিলেট মহানগরের থানাগুলোর হাজতিদের রাখা হচ্ছে। এতে করে চাপ কমে এসেছে সিলেট-২ কারাগারের বন্দির।