গণ অভ্যুত্থান ছিল দেশের লড়াকু জনগণের ঐক্যবদ্ধ গণসংগ্রাম। বিশেষ কারও মালিকানা দাবি করা জনগণের প্রতি অবমাননার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজনৈতিক নেতারা। গতকাল সেগুনবাগিচায় রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত গণ অভ্যুত্থান সম্পর্কে ‘কথকতায়’ তারা এসব কথা বলেন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে আলাচনা সভায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লা কায়সার, জেএসডির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব কামালউদ্দিন পাটোয়ারী, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক বাছির জামাল, ৭১ টেলিভিশনের সিইও ও বার্তা বিভাগের প্রধান শফিক আহমেদ, বাংলাভিশনের বার্তা বিভাগের প্রধান সিকান্দার রেমান, চেঞ্জ টিভির প্রধান আমিরুল মোমেনিন মানিক, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক, জুলাই যোদ্ধা জামাল সিকদার, ফায়েজুর রহমান মনির প্রমুখ। আলাচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, দেশের মানুষকে বারবার কেন জীবন দিতে হবে! কারণ ইতিহাস থেকে রাজনীতিকরা শিক্ষা গ্রহণ করেন না। তিনি বলেন, কসমেটিক পরিবর্তন করে কোনো লাভ হবে না। মূল ভিত্তিতেই পরিবর্তন করতে হবে। তিনি বলেন, অন্তরের পরিবর্তনই আসল পরিবর্তন। নির্বাচন যত বিলম্বিত হবে দেশের বহুমাত্রিক ঝুঁকি তত বাড়তে থাকবে।
সভার সভাপতি বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেও তারা অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করতে পারেনি। গণ অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সরকারের যোজন দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে জুলাই সমঝোতা সনদ স্বাক্ষরের পর জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কারই আর টালবাহানা করার অবকাশ নেই। তিনি রাজনৈতিক বিরোধকে সহিংস রাজনৈতিক বৈরীতায় না নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। কেউই যাতে অনৈক্যের সুযোগ নিতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান।
জোনায়েদ সাকি বলেন, গণ অভ্যুত্থানের এক বছর পরও শহীদ ও আহতদের উপযুক্ত স্বীকৃতি ও পরিবারসমূহের প্রয়োজনীয় পুনর্বাসন হয়নি। জুলাই চার্টার ঘোষণার আগে সব অংশীদারদের মতামত নেওয়া প্রয়োজন।
মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, বছরের পর বছর ধরে কত রক্ত ঘামে গণ অভ্যুত্থানের জমিন তৈরি হয়েছে তা অনেকেরই অজানা। অতীতের অনেক কথিত মাস্টারমাইন্ডরা শেষে ভিলেনে পরিণত হয়েছে। এটা সবার মনে রাখা দরকার। রাজনৈতিক নেতারা বলেন, ‘শহীদদের প্রতি কেবল শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা দায়িত্ব শেষ করতে পারি না। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ যেমন জনযুদ্ধ ছিল, এবারের গণ অভ্যুত্থান ছিল দেশের লড়াকু জনগণের ঐক্যবদ্ধ গণসংগ্রাম। বিশেষ কারও মালিকানা দাবি করা জনগণের প্রতি অবমাননার শামিল।’ তারা বলেন, গত এক বছরে বৈষম্য, বেকারত্ব, দারিদ্র্য কমেনি বরং বেড়েছে। বিচার ও সংস্কারের ধারায় সরকারকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব সম্পন্ন করার আহ্বান জানান তিনি।