দেশের বিভিন্ন নদনদীর পানি বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের সব কটি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির পূর্বাভাস দিয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদনদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা নদী ও দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই। আগামী এক থেকে দুই দিনের মধ্যে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। ঢাকা ও রংপুর বিভাগে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি এবং সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি ভারতের মেঘালয়, অরুণাচল, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায়ও ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে, যার প্রভাব বাংলাদেশে পড়ছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, তিস্তার পানি আগামী এক দিনে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। ধরলা ও দুধকুমারের পানি সতর্কসীমা ছুঁতে পারে। এর ফলে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা ও বন্যার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। গাইবান্ধার কিছু এলাকাও সাময়িক প্লাবিত হতে পারে। অন্যদিকে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারিগোয়াইন, সোমেশ্বরী, জিঞ্জিরাম, কংস, লুবাছড়া ও ঝালুখালী নদনদীর পানি বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে সিলেট, সুনামগঞ্জ, শেরপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ জেলার নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়তে পারে। সিলেটের মনু, ধলাই ও খোয়াই নদনদীর পানি বাড়বে, যদিও এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতেও পানি বাড়ার পূর্বাভাস রয়েছে। রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলের মহানন্দা, করতোয়া, ঘাঘট, আপার আত্রাই ও পুনর্ভবা নদনদীর পানি বাড়তে পারে। চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, মুহুরী, গোমতী ও নোয়াখালী খালের পানি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আমাদের লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তিস্তার ব্যারাজ পয়েন্টে পানি কমলেও ভাটিতে লালমনিরহাটের চর উপজেলার অন্তত ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এরা পড়েছে চরম বিপাকে। গতকাল সকাল ৯টায় তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানির পরিমাণ ছিল ৫২ দশমিক ৬ মিটার, যা বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচে। এর আগে রবিবার সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে উঠে যায়। পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সব জলকপাট খোলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। সূত্র জানান, ভারতের উজানে ভারী বর্ষণের ফলে নদনদীতে পানির প্রবাহ হঠাৎ বেড়ে যায়। রাতে পানি বাড়ায় লালমনিরহাটের তীরবর্তী চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে আমন ধান, সবজির মাঠ ও পুকুর।
এদিকে জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার বেশ কিছু নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পাউবো লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ‘রবিবার তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বর্তমানে পানি বিপৎসীমার নিচে নামলেও নিম্নাঞ্চলে সতর্কতা জারি রয়েছে। দুই-তিন দিন এ পরিস্থিতি স্থায়ী থাকতে পারে। তবে পানি আর বাড়বে কি না এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’ রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি এখন বিপৎসীমার কাছাকাছি। তাই খুলে দেওয়া হয়েছে কাপ্তাই কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৬টি স্পিলওয়ে। বিউবো সূত্রে জানা গেছে, টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের কারণে কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে রুলকার্ভ অনুযায়ী পানি রয়েছে ১০৭ ফুট এমএসএল, যা একেবারে বিপৎসীমার কাছাকাছি।