আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হলে দৈনন্দিন খরচের বাইরে সরকারের অন্তত আরও ৩ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। নির্বাচনি প্রস্তুতি, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্যসহ বিপুল অর্থের প্রয়োজন হবে। নির্বাচনের জন্য পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এদিকে সরকারের রাজস্ব আদায়ের অবস্থা মোটেও ভালো নয়। সরকারের দৈনন্দিন ব্যয় করতেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকার আগের অর্থবছরের মতো চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরু থেকেই কৃচ্ছ্রসাধনের পথে হাঁটছে। জরুরি বাদে কোনোরকম কেনাকাটা করছে না। প্রকল্পের গাড়ি কেনাও বন্ধ। অবশ্য নির্বাচনের পর যে সরকার ক্ষমতায় আসবে সে সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের ব্যবহারের জন্য গাড়ি ক্রয়ের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রস্তুতিও নিয়ে রাখতে হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারকে। অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এজন্য নির্বাচনি তহবিলসহ সরকারের আয় যেন স্বাভাবিক থাকে এজন্য এনবিআরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে। কেননা এনবিআর সংস্কারকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া অচলাবস্থা এখনো কাটেনি। আন্দোলন থামলেও বদলি আর বাধ্যতামূলক অবসরের আতঙ্কে রয়েছেন এনবিআরের বেশির ভাগ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এ ছাড়া ব্যবসাবাণিজ্যসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির পরিস্থিতি খুবই একটা ভালো নয়। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে চরম অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। ফলে এর একটা বড় রকমের ধাক্কা লেগেছে রাজস্ব আদায়ের ওপর। এ ছাড়া এনবিআর ৩০ জুন-২০২৫ এ গত অর্থবছর ২০২৪-২৫ শেষ করেছে লাখ কোটি টাকার ঘাটতি নিয়ে। নতুন অর্থবছরের প্রথম মাসেও এনবিআরের রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি ভালো নয়। এদিকে ঘোষিত সময়ের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হলে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। আর এ সময়ের আগে জাতীয় সংসদ এবং অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে হলে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। এ অর্থের জোগান দিতে ব্যর্থ হলে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এজন্য চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ রাখলেই তো আর অর্থ পাওয়া যাবে না। কারণ এনবিআর আয় করতে না পারলে সরকারের চাহিদার জোগান দেওয়া সম্ভব হয় না। সেই এনবিআরের আয় পরিস্থিতিই ভালো নয়। এজন্য সরকারের দৈনন্দিন কাজ পরিচালনার পাশাপাশি অতিরিক্তি এই অর্থের জোগান দেওয়া অর্থ বিভাগের জন্য বেশ বড় চাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও।
অর্থ বিভাগ বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ কমিয়ে আনতে সরকার আয় বাড়িয়ে ব্যয় কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে চলতি বাজেটে। এতে স্থানীয় অর্থনীতিতে চাহিদা বাড়লে ব্যয়ের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যা মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও এক বছরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হলে দেশে সর্বস্তরেই টাকার প্রবাহ বাড়বে। সরকারি ব্যয়ও বাড়বে। এতে প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটাতে সরকারকে আরও বেশি আয়ও করতে হবে।
অন্যদিকে রাষ্ট্রব্যবস্থার চলমান সংস্কার কার্যক্রম ও জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি একই সঙ্গে চালিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ দুই কাজে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে অর্থ বিভাগের প্রতি পৃথক নির্দেশনা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান। রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার ও একটি গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করাকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করে বর্তমান সরকার। এ ছাড়া এর সঙ্গে আসছে জাতীয় নির্বাচনের জন্য আলাদা অর্থের চাহিদাও সরকারের রাজস্ব বিভাগের জন্য একটি অতিরিক্ত চাপ বলে মনে করা হচ্ছে। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ২৭৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যয় হয়েছিল সাড়ে ৩ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচনি ব্যয় যে কোনো সরকারের জন্যই একটা অতিরিক্ত চাপ। এজন্য বাজেটে সম্ভাব্য একটা বরাদ্দ রাখা হয়। এবারের পরিস্থিতি অন্য যে কোনোবারের তুলনায় ভিন্ন। ফলে এনবিআরের জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য তাড়া করা যেমন চ্যালেঞ্জ তেমন নির্বাচনি তহবিলের জোগান দেওয়া এক ধরনের অতিরিক্ত চাপ বলে তিনি মনে করেন।