তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা-সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) চারটি আবেদনের শুনানি শুরু হয়েছে। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চে প্রথম দিনের শুনানি হয়। পরবর্তী শুনানির জন্য আজ (বুধবার) ফের দিন ধার্য করেছেন আদালত। গতকাল আদালতে রিভিউ আবেদনে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, রুহুল কুদ্দস কাজল, কায়সার কামাল ও মোহাম্মদ শিশির মনির।
এর আগে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধন (তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা) বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল মঞ্জুর করে এ রায় দেওয়া হয়। আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছরের অক্টোবরে একটি আবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগে রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। অন্য চারজন হলেন তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছরের ২৩ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এ ছাড়া নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছর একটি আবেদন করেন।
১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়। এ সংশোধনের বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম সলিম উল্লাহসহ অন্যরা ১৯৯৮ সালে হাই কোর্টে রিট করেন।
গতকাল শুনানির পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নির্দেশ পালন করে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা-সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন। এই রায়ের ওপর ভিত্তি করে সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়েছিল, যা ইতোমধ্যে বাতিল ঘোষণা করেছেন হাই কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, অবসরে যাওয়ার পর কোনো বিচারপতির শপথের কার্যকারিতা থাকে না। শপথ না থাকলে কোনো বিচারপতি কোনো রায় দিতেও পারেন না, লিখতেও পারেন না। ১৬তম ঢাকা ল রিপোর্টে (ডিএলআর) আপিল বিভাগের রায়ে এ বিষয়ে বলা আছে। ফলে আইনের দৃষ্টিতে এ বি এম খায়রুল হকের দেওয়া ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করা রায়ের আইনি কোনো ভিত্তি নেই।
শুনানির পর রায় পরিবর্তন নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়টি ছিল কমিটেড ফ্রড আপন দ্য অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব জাজমেন্ট (বিচারিক ব্যবস্থার প্রতারণামূলক রায়)।
তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা। এটিকে বাতিল করে দেওয়া হলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন বাতিল হয়ে যায়। আর নির্বাচন বাতিল হয়ে গেলে গণতন্ত্রও বাতিল হয়ে যায়। পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ে হাই কোর্ট বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা হচ্ছে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। যে কারণে এ ব্যবস্থাকে বাতিল করা সংবিধানসম্মত হয়নি।
এই আইনজীবী বলেন, যে চারজন বিচারপতি (এ বি এম খায়রুল হকসহ) ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন সেই চারজনই পর্যায়ক্রমে প্রধান বিচারপতি হয়েছেন। যারা বাতিলের বিপক্ষে রায় দিয়েছিলেন তাদের কেউই প্রধান বিচারপতি হতে পারেননি। যদিও প্রধান বিচারপতি হওয়ার সব যোগ্যতা তাদের ছিল। অর্থাৎ যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছিলেন তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে।