চলতি মাসেই আসছে আবারও যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি। গত মার্চে ২৪তম নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে ১৯৬ কর্মকর্তাকে যুগ্মসচিব পদোন্নতি দেয় সরকার। যারা বাদ পড়েছিল তাদের নিয়ে আবার রিভিউ পরে পুনরায় এ মাসেই পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যেই একাধিক বৈঠক করেছে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এই পদোন্নতিতে এক প্রভাবশালী উপদেষ্টার বিতর্কিত পিএসকে পদোন্নতির জোড় চেষ্টার গুঞ্জন রয়েছে প্রশাসনের সর্বস্তরে। এমনকি ওই এক কর্মকর্তার জন্যই পুরো পক্রিয়া রিভিও করতে বলা হয়েছে বলেও বলেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারাই।
প্রশাসনের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে আলোচনা চলছে, কবে আবার রিভিউ হবে ২৪ ব্যাচের পদোন্নতির বিষয়ে। গত মার্চে নিয়মিত ব্যাচের ১৮৩ জনের মতো কর্মকর্তা নানা কারণে পদোন্নতি থেকে বাদ পড়েন। তাদের অনেকেই আগের স্বৈরাচার সরকারের ডিসি ছিলেন বা গুরুত্ব্পূর্ণ জায়গায় ছিলেন। অনেকেই নানা আর্থিক অনিয়মের কারণেও বাদ পড়েছেন। তবে পুরো প্রক্রিয়াটিই রিভিউ করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটি। রিভিউ উদ্যোগ নিলেও আলোচনায় আসেন এক উপদেষ্টার পিএস এর নাম। যিনি আগের স্বৈরাচার সরকারের ডিসিও ছিলেন। ডিসি থাকার পরও কীভাবে বর্তমান উপদেষ্টা তাকে পিএস করেছেন প্রশাসনে অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে তা নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে। এমনকি তার পদোন্নতি নিশ্চিত করতেই পুরো প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে খবর ছড়িয়েছে প্রশাসনে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে দুজন উপদেষ্টা নিজ মন্ত্রণালয়সহ ৩৫ জনের পদোন্নতি নিশ্চিত করতে সুপারিশ পাঠিয়েছে জনপ্রশাসনে। তাদের রেখে অন্যদের পদোন্নতিতে যোগ করা যেতে পারে এমন নির্দেশনাও আছে বলে জানা গেছে। দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পদোন্নতির আগে এমন চিঠি সুপারিশ আগেও ছিল। তবে এসব সিদ্ধান্ত এসএসবি নেবে। এ সংক্রান্ত সরকারের উপদেষ্টা কমিটি আছে তারা নেবে।
জানা গেছে যে কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে তোড়জোড় চলছে তিনি আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান। পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের পিএস। গত মার্চে নিয়মিত প্রক্রিয়ায় ২৪তম ব্যাচের পদোন্নতিতে বাদ পড়েন।
এই কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ সরকারের এক মুখ্য সচিবের পিএস এবং ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই সময় মন্ত্রিসভা বৈঠকে তার বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠলে ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের দুই মাস আগে এই কর্মকর্তাকে ডিসি পদ থেকে প্রত্যাহার করে সরকার। সেই প্রত্যাহারকে তিনি বঞ্চনা হিসেবে উল্লেখ করে উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন সিনিয়র কর্মকর্তাদের ভুল বুঝিয়ে নিজেকে আওয়ামীবিরোধী কর্মকর্তা হিসেবে প্রমাণ করে সুবিধা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। একই ব্যাচের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আর্থিক অনিয়মের ডিসি থেকে তুলে আনা কর্মকর্তাদের যদি এভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয় তাহলে ভালোদের সবাইকে চাকরি থেকে বিদায় করে দিলেই হয়। এদিকে গত ২৬ আগস্ট জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটি পুনর্গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যারা চিহ্নিত দলবাজ, অন্যায়ভাবে সুযোগসুবিধা নিয়েছেন তাদের সবসময়ই পদোন্নতিতে বাদ পড়া উচিত। তবে যারা ভালো, নিরীহ, পেশাদার তাদের বাদ দেওয়া অন্যায়।