আজ ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস। নাগরিকদের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার না করে বরং সাইকেল, হাঁটা বা গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহিত করতে গাড়িমুক্ত দিবসের সূচনা হয়। বাংলাদেশে সরকারি উদ্যোগে দিবসটি পালন শুরু হয় ২০১৬ সালে। আজ দেশে পালিত হবে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস। এ বছর প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘সমাজ, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ সুরক্ষায় ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার সীমিত করি’।
দিবসটি উপলক্ষে গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। মানববন্ধনে বক্তারা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার সীমিত করার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, উন্নত দেশগুলোতে সবার গাড়ি থাকলেও তারা অফিসে যাতায়াতে গণপরিবহন বা মেট্রোরেল ব্যবহার করে। কেবল পারিবারিক কাজে তারা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করে। বাংলাদেশেও এই সংস্কৃতি গড়ে তুললে রাজধানীতে যানজট কমবে।
মানববন্ধন থেকে একগুচ্ছ সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এসবের মধ্যে রয়েছে-প্রশস্ত ও নিরাপদ ফুটপাত তৈরি, যাতায়াতে হাঁটা, সাইকেল ব্যবহার ও গণপরিবহনকে প্রাধান্য দেওয়া, এলাকাভিত্তিক ব্যক্তিগত গাড়ি প্রবেশে নিয়ন্ত্রণ আরোপ, অবৈধ পার্কিং বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা, পৃথক সাইকেল লেন ও শেয়ারিং ব্যবস্থা চালু, শিক্ষার্থীদের সাইকেল ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া, সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, ট্রাফিক নিয়ম সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ইত্যাদি। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ-এর পরিচালক গাউস পিয়ারী, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না, রায়েরবাজার উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাহাজ্জুত হোসেন, ধানমন্ডি কচিকণ্ঠ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এইচ এম নুরুল হোসেন প্রমুখ। পরে দিবসটি উপলক্ষে আগারগাঁও মেট্রোরেল পয়েন্টে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে আজ ডিটিসিএ, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট ও বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস আয়োজক সংস্থাসমূহ এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
উল্লেখ্য, জ্বালানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও যানজট নিরসনের উপায় হিসেবে ১৯৬২ সাল থেকে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন শহরে সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে শুধু পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। তারা এ ধারা অব্যাহত রেখেছে। এরপর ইউরোপে এ ধারণার প্রসার ঘটতে শুরু করে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আরও ব্যাপকতা লাভ করে ৭০ দশকে জ্বালানিসংকটের সময়। ১৯৭৪ সালে সুইজারল্যান্ডে গাড়িমুক্ত দিবস পালন করা হয়। নব্বইয়ের দশকে এই উদ্যোগের আরও প্রসার ঘটে। যেমন বিশ্বব্যাপী ‘কার ফ্রি সিটি নেটওয়ার্ক’ গড়ে ওঠে। এরপর ১৯৯৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সে জাতীয়ভাবে ৩৪টি শহরে গাড়িমুক্ত দিবস পালিত হয়। পরের বছর ফ্রান্স ও ইতালির ৯০টি শহরে দিবসটি পালনে ব্যাপক সাড়া পড়ে। ২০০১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্বের ৩৩টি দেশের প্রায় ১ হাজার শহরে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালন করা হয়। এখন প্রতি বছর প্রায় ৪ হাজার শহরে দিবসটি পালিত হয়ে থাকে।