‘গত বছর ৫ আগস্ট বিকালে আশুলিয়া থানার মেইন গেটের বাম দিকের রাস্তায় একটি ভ্যানের ওপর লাশের স্তূপ দেখতে পাই। ওসি স্যারের নির্দেশে নীল রঙের ব্যানার দিয়ে লাশগুলো ঢেকে দিই। পরে শুনেছি পুলিশের গাড়িতে তুলে লাশগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’ আশুলিয়া থানার সামনে পুলিশ ভ্যানে ছয় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন কনস্টেবল মো. রাশেদুল ইসলাম।
গতকাল বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২ এ প্রসিকিউশনের ১২তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন তিনি। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন। এ মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আজকের দিন রেখেছেন ট্রাইব্যুনাল। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহমদ, সাইমুম রেজা, তারেক আবদুল্লাহ, এবিএম সুলতান মাহমুদ প্রমুখ।
আশুলিয়ার ঘটনায় করা মামলায় জবানবন্দিতে ৪৬ বছর বয়সি পুলিশ কনস্টেবল রাশেদুল ইসলাম বলেন, গত বছর ৫ আগস্ট ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানায় ড্রাইভার কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলাম। ওই দিন আমার ডিউটি ছিল না। থানা ভবনের ৪র্থ তলায় ছিলাম। বিকাল ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার দিকে থানা ভবনের জানালা দিয়ে দেখি- নিচে হৈচৈ এবং গুলির শব্দ।
তিনি বলেন, সেখানে থাকা নিরাপদ না মনে করে নিচে নেমে আসি। থানার মেইন গেটের বাম দিকে রাস্তায় ভ্যানের ওপর লাশের স্তূপ দেখতে পাই। আশুলিয়া থানার সাবেক ওসি সায়েদ স্যার বলেন, রাশেদ আপনার হাত খালি আছে, লাশগুলো ঢেকে দেন। পাশে থাকা নীল রঙের ব্যানার দিয়ে লাশগুলো ঢেকে দিই। ওই সময় ওসি সায়েদ স্যারের সঙ্গে ছিল ওসি (তদন্ত) মাসুদুর রহমান, ওসি (অপারেশন) নির্মল কুমার দাস, এএসআই বিশ্বজিৎ, কনস্টেবল মুকুল চোকদার, ডিবি ইন্সপেক্টর আরাফাত।
জবানবন্দিতে এ পুলিশ সদস্য আরও বলেন, পরে শুনতে পাই ভ্যানভর্তি লাশগুলো পুলিশের গাড়িতে তুলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা এই কাজ করেছে তারা অমানবিক কাজ করেছে।
আশুলিয়ার ঘটনায় করা এ মামলায় স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে আটজনই পলাতক। গ্রেপ্তার আট আসামিকে গতকাল ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তারা হলেন- ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল ও কনস্টেবল মুকুল।