দীর্ঘ শুনানির পর উভয় পক্ষের যুক্তি-তর্কের আলোকে রায় লেখার মধ্যেই বরখাস্তের নোটিস পেয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার ইমিগ্রেশন জজ শিরা লেভাইন। প্রথমে বিশ্বাস করতে চাননি। তবে চেম্বারের বাইরে তাকিয়ে দেখেন সহকর্মীরা তার সবকিছু গুছিয়ে দিচ্ছেন বিদায় জানানোর জন্য। কোনো ধরনের আগাম নোটিস ছাড়াই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আট মাসে ১৩৯ জজকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরেই ২৪ জনকে বরখাস্ত করা হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবৈধ অভিবাসী তাড়ানোর অভিযানে এখন পর্যন্ত ২০ লাখের মতো বিদেশিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের তথ্য জানিয়েছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানের ৭২টি ইমিগ্রেশন কোর্টের ৬ শতাধিক বিচারকের মধ্যে ১৩৯ জনকে কোনো ধরনের নোটিস ছাড়াই বরখাস্ত করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা তথা অ্যাসাইলামের আবেদন ঝুলে থাকার সংখ্যা বেড়ে ৩৮ লাখ হয়েছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের আওতায় ইমিগ্রেশন কোর্টের দেখভালের পুরো দায়িত্ব বিচার বিভাগের নয়, এটি নির্বাহী বিভাগের আওতায়। তাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের আলোকে যেসব বিচারক অ্যাসাইলামের আবেদন মঞ্জুরির ক্ষেত্রে উদারতা দেখাচ্ছেন কিংবা দাখিল করা ডকুমেন্ট ও আবেদনকারীর বক্তব্যের বিশ্লেষণের পর যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দিচ্ছেন, তারাই বরখাস্তের নোটিস পেয়েছেন বলে ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নিরা অভিযোগ করেছেন। এর ফলে বিচারকরা হতভম্ব হয়ে পড়েছেন। কেউই অ্যাসাইলামের আবেদন মঞ্জুরের সাহস দেখাচ্ছেন না। যা দৃশ্যমান হচ্ছে শুনানির তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে। সিএনএন এবং নিউইয়র্ক টাইমসের দীর্ঘ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের অনেক পদক্ষেপই ইমিগ্রেশন-ব্যবস্থাপনাকে ধ্বংস করার শামিল। দীর্ঘদিন নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করা বিচারপতিদের এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির নিষ্ঠুর ভিকটিম হতে হচ্ছে। জানা গেছে, ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকোর ইমিগ্রেশন কোর্টের জজ শিরা লেভাইন বরখাস্তের ইমেইল পেয়েছেন দিবসের তৃতীয় মামলাটির শুনানিকালে। সেটিও ছিল অ্যাসাইলামের আবেদন। এ মামলায় আবেদনকারীর অ্যাটর্নির মতামত শোনার সঙ্গে সঙ্গে কম্পিউটারে নোট নিচ্ছিলেন-এমনই সময়ে ইমেইল এলো বরখাস্তের। শিরা লেভাইন গণমাধ্যমে বলেন, আমি এটা কী দেখছি? শুনানিতে বিরতি দিলাম। বিচারকের চেয়ার থেকে উঠে পেছনে গিয়ে অবাক বিস্ময়ে ভাবলাম-এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এরপর এজলাসে বসে শিরা লেভাইন বাদী এবং বিবাদীপক্ষ তথা সরকারি অ্যাটর্নির কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন যে, মামলাটির শুনানি এখানেই সমাপ্তি করতে হচ্ছে। বিচারপতি লেভাইন তার অনুবাদকের মাধ্যমে আবেদনকারী বিদেশিকে অবহিত করেন যে তার পক্ষে মামলাটির শুনানি সমাপ্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।
এরপরই তিনি ব্যক্তিগত জরুরি কাগজপত্র নিয়ে আদালত ত্যাগ করেছেন। এটি সেপ্টেম্বরের ২৪টি বরখাস্তের আদেশের একটি। একই পরিস্থিতি উপস্থাপন করেছেন বরখাস্ত বিচারপতি অ্যাশলি টাবাড্ডোর। ট্রাম্পের প্রথম আমলের পুরো চার বছর অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনসহ ১৫ বছরের পুরোনো এ বিচারপতিকেও সম্প্রতি বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, ইমিগ্র্যান্টদের রক্ত-ঘামে গড়ে ওঠা আমেরিকায় ইমিগ্র্যান্টরা নাজুক পরিস্থিতিতে নিপতিত হচ্ছেন এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কী হতে পারে। এ বিচারপতিও বরখাস্তের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করেছেন শিরা লেভাইনের মতো। জানা গেছে, যেসব বিচারপতি অ্যাসাইলামের আবেদন মঞ্জুর করছেন তারাই বরখাস্তের শিকার হয়েছেন। সেসব শূন্য পদ পূরণ করা হচ্ছে ট্রাম্পের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে বাস্তবায়নে সহায়ক লোকজন দিয়ে। আর এভাবেই ইমিগ্রেশন কোর্টে ঝুলে থাকা আবেদনের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। যার খেসারত দিচ্ছেন নিজ দেশে নিরাপত্তাহীনতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বসতি গড়ার স্বপ্নে বিভোর বিদেশিরা।