ইতালির ভেনিস শহরের সিলভানো নামের এক নৃত্যশিল্পীর বয়স তখন ৫৩। কিন্তু হঠাৎ করেই ক'দিন ধরে কিছুতে তার ঘুম আসছিল না। সারারাত নির্ঘুম কাটানোর পর দিনের বেলায়ও চোখে একবিন্দু ঘুম নেই। তীব্র ইনসোমনিয়ায় অস্থির হয়ে শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন তিনি। চার মাস পর তিনি কোমা’য় চলে যান এবং অবশেষে ওই ইনসোমনিয়াতেই তার মৃত্যু হয়।
সিলভানোর মৃত্যুতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের নতুন এক রহস্য উদঘাটিত হয়। রহস্যময়, ভূতুড়ে এক প্রচণ্ড বিরল দুরারোগ্য ব্যাধি যাকে বলে ‘ফ্যাটাল ফ্যামিলিয়াল ইনসোমনিয়া' (এফএফআই)। সিলভানোই ছিলেন এই রোগের প্রথম ডকুমেন্টেড কেস। পরবর্তীতে গবেষণায় বেরিয়ে আসে অনেক গা শিউরে ওঠা তথ্য।
ধারণা করা হয়, এফএফআই’র উৎপত্তি কোনো এক ইতালিয় পরিবারে ১৭৬৫ সালের দিকে। এই ২৫০ বছরে সারা পৃথিবীতে মাত্র ৪০টি পরিবারের ১০০ জনকে চিহ্নিত করা গেছে এ রোগের শিকার হিসেবে।
এফএফআই কী?
এটি একটি অটোসোমাল ডোমিন্যান্ট জেনেটিক ডিজিস। অর্থাৎ পিতা-মাতার যে কারো যদি একটি মারণঘাতী জিনের কপি থাকে তাতেই সন্তান-সন্ততিতে রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ। আমাদের মস্তিষ্কে অনেক প্রিয়ন প্রোটিন আছে।
এসব প্রোটিনকে এনকোডকারী কোনো জিনে যদি মিউটেশন ঘটে, তাহলে স্নায়ু ধ্বংসকারী টক্সিক প্রোটিন তৈরি হয়।
শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে ফাঁকি দিয়ে এরা মস্তিষ্কে চেইন বিক্রিয়ার মতো ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে মস্তিষ্কের থ্যালামাস অংশে (যা ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে) এসব সংক্রামক প্রিয়ন প্রোটিন বেশি জমা হয়। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক ঘুম থেকে বঞ্চিত হয়, এমনকি জেগেও থাকতে পারে না।
এফএফআই’র লক্ষণ প্রকাশের প্রথম দিকে কেবল ইনসোমনিয়াই থাকে। এরপর কয়েক মাসের ব্যবধানে একে একে ভর করে হ্যালুসিনেশন, কনফিউশন, ওজন হ্রাস, স্মৃতিশক্তি লোপ ও অবশেষে মৃত্যু।
শেষের দিনগুলিতে রোগী হাঁটতে বা কথা বলতে পর্যন্ত পারে না এবং কোমাতে পৌঁছায়। এফএফআই’র লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে ১৮-৬০ বছরের মধ্যে যে কোনো সময়। তবে ৪০-এর পরেই বেশিরভাগ রোগীর উপসর্গ দেখা যায়। উপসর্গ প্রকাশের কয়েক মাস থেকে বছর দেড়েকের মধ্যেই রোগীর মৃত্যু ঘটে।
সবচেয়ে ভয়ের কথা হচ্ছে- এ রোগের এখনো কোনো সঠিক প্রতিকার আবিষ্কৃত হয়নি। স্লিপিং পিল অথবা বারবিচুরেট জাতীয় ওষুধে রোগের আরো অবনতি ঘটতে দেখা গেছে। বিভিন্ন দেশে এ নিয়ে এখনো চলছে নিরন্তর গবেষণা।
বিডি-প্রতিদিন/০৯ এপ্রিল ২০১৫/ এস আহমেদ