একটা শিশুকে বুকের উষ্ণ ভালবাসায় বড় করে তুলতে কত রাত যে মাকে নির্ঘুম কাটাতে হয় তার ইয়ত্তা নেই। শত কষ্টের মধ্যেও মা সন্তানকে বুকে আগলে রাখে। মধ্যরাতে সন্তানের কান্নার শব্দ কানে আসতেই ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে। অনেক সময় বাবা বিরক্ত হলেও মা হয় না। মা-ই বুঝতে পারে শিশুর কান্নার কারণ। তবে অনেক সময় শিশুর কান্না সহজে থামতেই চায় না। অনেক শিশু আবার একটু বেশিই কাঁদে। শিশুরা কাঁদবেই। এতে কোন অস্বাভাবিকতা নেই। কিন্তু সে কান্না যদি থামতে না চায়, তবে তা আসলেই বাবা-মায়ের জন্য চিন্তার বিষয়। শিশু লালন-পালনের ক্ষেত্রে আপনার কোন ভুল হচ্ছে কি না কিংবা শিশু আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে কি না, এসব প্রশ্ন তখন ভাবিয়ে তোলে আপনাকে। ভয়ের কিছু নেই। শিশুর কান্না থামাতে অত দুশ্চিন্তা মাথায় নেবেন না। আপনি নিজেই পারবেন তা সামলে নিতে। কিছু কৌশল অবলম্বন করার চেষ্টা করুন:
কারণ বোঝার চেষ্টা করুন:
সাধারণত ক্ষুধা পেলে, ঘুমানোর প্রয়োজন পড়লে, ন্যাপি বদলানোর সময় হলে কিংবা নিদেনপক্ষে বার্প করার সময় হলে বাচ্চারা কান্না করে। অনেক ক্ষেত্রে আরেকটু বেশি মনযোগ পেতে চাইলেও শিশুরা কাঁদে। এক্ষেত্রে শিশুর প্রয়োজনটি বোঝার চেষ্টা করুন। কারণ কান্নাই শিশুর দৃষ্টি আকর্ষণ করার একমাত্র হাতিয়ার। শিশুর চাহিদা মিটে গেলেই সে কান্না থামিয়ে দেয়।
নিজে শান্ত হোন:
শিশুর সব চাহিদা মেটানোর পরও যদি কান্না না থামে, তবে তাকে শান্ত করার জন্য আপনার নিজেকে আগে শান্ত হতে হবে। কারণ আপনি অধৈর্য্য কিংবা অশান্ত হয়ে গেলে কান্নাতো থামবেই না, বরং তা আরও খারাপের দিকে চলে যাবে। ভুলেও যেন রেগে যাবেন না। শিশুর মনযোগ ঘোরাতে সৃজনশীল কিছু করার চেষ্টা করুন, কিন্তু তাকে ঝাঁকি দেবেন না। শিশুর ঘাড়ের হাড় এমনিতেই খুব নরম হয়। রেগে গিয়ে তাকে ঝাঁকি দিতে গেলে হীতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। প্রয়োজনে আপনার নিজের জন্যেও কাউন্সেলিং নিতে পারেন। আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরেই কিন্তু আপনার শিশুর ভবিষ্যত নির্ভর করছে। কাজেই নিজের যত্ন নেয়ার মানে কিন্তু শিশুরও যত্ন নেওয়া।
শিশুকে গান শোনান:
শিশুকে কোলে নিয়ে আদর করে তার কানের কাছে গুণগুণ করে গান গাইতে থাকুন কিংবা মৃদু স্বরে তাকে প্রবোধ দিন।
ম্যাসাজ করুন:
ধীরে ধীরে শিশুর সারা শরীরে ম্যাসাজ করুন। এটি তাকে শান্ত হতে সাহায্য করবে। কারণ এতে করে সে ভালোবাসা ও নিরাপত্তা অনুভব করে।
বাইরে নিয়ে যান:
বাড়িতে গুমোট বোধ করলে শিশুকে একটু বাইরে থেকে ঘুরিয়ে আনুন। শান্ত হয়ে যাবে।
কিছুটা কাঁদতে দিন:
শিশুদের কাঁদতে হয়ই মাঝে মাঝে। অজানা অনেক কারণেই শিশুরা অস্বস্তি বোধ করে। কাজেই তাকে কাঁদতে দিন খানিকক্ষণ, তাহলে অস্বস্তি দূর হয়ে যাবে আর কান্নাও থেমে যাবে।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন:
অনেক সময় অজানা নানা রোগ-ব্যাধি শিশুর কান্নার কারণ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে সকল চাহিদা পূরণ করলেও শিশুর কান্না থামতে চায় না। আপনার যদি মনে হয় পরিস্থিতি আপনার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে, তাহলে দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। তিনিই আপনাকে সঠিক উপায় বাতলে দেবেন।
বিডি-প্রতিদিন/১৫ জুন ২০১৫/ এস আহমেদ