বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে, দোকানে, বাসে, রাস্তাঘাটে যতো রকমের পোস্টার ও লিফলেট চোখে পড়ে তার মধ্যে সেক্স সমস্যা, সেক্সের চিকিৎসার ঔষধ ও চিকিৎসার নাম সম্বলিত পোস্টারই বেশি। আর এই সুযোগে বিভিন্ন আপত্তিকর ও উত্তেজক লেখা পড়ে উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে প্রবল কৌতুহল তৈরি হয়। যার ফলে অনেকে নিজের যৌন ক্ষমতা যাচাই করতে প্রবল আগ্রহের সাথে বিভিন্ন হোটলে, বান্ধবীর সাথে অথবা পাড়ায় গিয়ে পরীক্ষা করে তখনই বিপত্তি বাঁধে। নানা ধরনের টেনশন, বিভিন্ন ধরনের নেগেটিভ চিন্তা, লিঙ্গের সাইজ নিয়ে, ক্ষমতা নিয়ে, শক্তি নিয়ে, বিয়ে নিয়ে, বাচ্চা হওয়া নিয়ে, বউ থাকবে কিনা, বউয়ের সামনে লজ্জা পেতে হবে কিনা...সোজাকথা অনেক ছেলে বলেই ফেলে আমি বিয়ে করতে পারবো কি না?
কারণ:
- রোগীদের ধারণা বয়ঃসন্ধিকালে হস্তমৈথন করায় শরীর থেকে সমস্ত শক্তি বের হযে যায়, কর্মক্ষমতা কমে যায়, শরীর ভেঙ্গে যায়।
- বিভিন্ন ধরনের পর্নোগ্রাফি
- যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট
- নেশা দ্রব্য যেমন: ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন, মদ ইত্যাদি
- সেক্স সম্পর্কে অজ্ঞতা
- বন্ধুদের কাছ থেকে সেক্স সংক্রান্ত ভুল তথ্য জানা
- হাটে-বাজারে মাইকিং করে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান
- শিক্ষা কারিকুলামে কোন সেক্স এডুকেশন না থাকা
- কিছু অবসেস্ট ধরনের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়
- নিজের পুরুষত্ব যাচাই করতে পাড়ায় গিয়ে ভয়ের কারণে প্রথম প্রথম সমস্যা দেখা, আগেই বীর্যপাত হয়, আর তখনই ভাবতে থাকে আমি বোধহয় ব্যর্থ পুরুষ ।
লক্ষণ:
- রোগীদের অভিযোগ থাকে প্রস্রাব দিয়ে ক্যালসিয়াম যায়, ধাতু যায়, শরীর ক্ষয় হয়ে যায়।
- কেউ কেউ হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যায়, ফিট হয়ে যায়, বার বার মুর্ছা যায়। পরে ইতিহাস নিয়ে জানা যায় যে, তার মাথায় সব সময় লিঙ্গ নিয়ে বিভিন্ন চিন্তা কাজ করছে।
- আবার কারো মধ্যে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন: পেট ব্যথা, মাথা ব্যথা, তলপেটে ব্যথা, প্রস্রাবে জ্বালা-পোড়া ইত্যাদি থাকে
- এই সেক্স সমস্যা নিয়ে ফকির কবিরাজ এই ডাক্তার ঐ ডাক্তার দেখায়ে ঘুরে বেড়ায়ে সর্বসান্ত হয়েছে।
- সেক্সের সমস্যার কারণে অনেকে অবসেশনের মতো হয়ে যায়।
- এই ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে তারা ভাবতে থাকেন, আমি তো ব্যর্থ, আমার দ্বারা কিছু হবে না।
- কেউ কেউ যৌন সংক্রামক রোগ নিয়ে আসে
- লিঙ্গ ছোট-বড়, আগা চিকন গোড়া মোটা, এই রকম হাজারো উদ্ভট চিন্তা মাথায় আসতে থাকে।
- নাইট প্রেসার নিয়ে থাকে হরেক রকম নেগেটিভ চিন্তা। বীর্য যাতে নষ্ট না হয় এই ভয়ে বাবা-মা ছেলেকে বিয়ে করিয়ে দেন।
- অনেকে চুপচাপ থাকে, থম মেরে বসে থাকে কোন কথা বলে না, কাজ করে না, ঘুম হয় না সব কিছুতেই নেগেটিভ চিন্তা; ভবিষ্যত নিয়ে, সংসার নিয়ে, ধীরে ধীরে বিষণ্নতার দিকে ধাবিত হয় এবং আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি হয়।
যদি কোন যুবকের সেক্স নিয়ে, বিয়ে নিয়ে মানসিক অস্থিরতা থাকে তাহলে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে চিকিৎসা নিয়ে বিয়ে করা উচিত।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ, ধানমণ্ডি
বিডি-প্রতিদিন/ ০৯ অক্টোবর, ২০১৬/ আফরোজ