১৪ এপ্রিল, ২০১৯ ১২:৪৬

পয়লা বৈশাখের খাওয়া-দাওয়া

সামিয়া তাসনিম

পয়লা বৈশাখের খাওয়া-দাওয়া

পয়লা বৈশাখ, বাঙালিদের জন্য একটি বড় উৎসব। এদিনকে ঘিরে নানা আয়োজন থাকে সবার। আর আমরা সবাই জানি, এ দিনটি মানেই গরমের শুরু। পরিবেশ যা হোক এদিনে আমাদের দেশের সব মানুষ চায় অতি আনন্দের সঙ্গে পালন করতে। আনন্দ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমাদের শারীরিক সুস্থতা। যদি এদিনে আমরা সুস্থ থাকতে পারি তাহলে আমাদের আনন্দ পরিপূর্ণ হবে।

সকাল থেকেই আমাদের নানা প্রোগ্রাম থাকে বিভিন্ন জায়গায়। সারা দিনই চলতে থাকে নানা অনুষ্ঠান। রোদের তাপে আমাদের শরীর থেকে অনেক ঘাম বের হয়ে যায়। এ সময় আমাদের প্রচুর পানি, ফলের রস, ডাবের পানি খেতে হবে। পর্যাপ্ত পানি বা পানি জাতীয় খাবার গ্রহণ না করলে আমাদের শরীরে পানি স্বল্পতা হতে পারে এবং ইলেকট্রোলাইটস ইমব্যালান্স হয়ে যেতে পারে। তাই এই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অনেকেই কিন্তু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত থাকেন যেমন, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস ইত্যাদি। তাই সব বয়স এবং সব ধরনের মানুষের জন্য খাবারের দিকটি ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

এদিনের একটি খুব জিনপ্রিয় খাবার হলো পান্তা-ইলিশ। সবাই কম বেশি এই খাবারটি খেয়ে থাকেন। অনেকেই জানেন না এই খাবারটি কতটুকু উপকারী। কোনো কিছু জেনে খেলেও তার আনন্দ আরও একটু বেড়ে যাবে, যদি সেটি আমাদের জন্য উপকারী হয়ে থাকে।

পান্তা-ভাতের পুষ্টি গুণাগুণ :
ভাতকে পানিতে প্রায় একদিন ডুবিয়ে রাখলেই তা পান্তায় পরিণত হয়। এটা মূলত ভাত সংরক্ষণের একটি পদ্ধতি। পান্তা বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। পয়লা বৈশাখের মেন্যু হিসেবে পান্তা ভাত খাওয়া হয় সকালের দিকে। এর সঙ্গে থাকে ইলিশ, আলু ভর্তা ইত্যাদি। পান্তা-ভাতের ক্যালরি মূল্য নির্ভর করে কি ধরনের চাল দিয়ে রান্না করা হয়েছে তার ওপর। চাল ভেদে এক কাপ ভাত থেকে ২০০- ২৪২ ক্যালরি পাওয়া যায়। পান্তা ভাতে আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়ামের পরিমাণ রান্না করা ভাতের তুলনায় বেশি থাকে। অন্যদিকে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এছাড়া ভিটামিন-বি ২ , ভিটামিন-বি ১২ অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে। পান্তা ভাত দেহে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করে দেহকে পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা করে। তীব্র গরমে সানস্ট্রোক বা হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা করে। পান্তা গ্যাস্টিক রোগীর জন্যও উপকারী। তবে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া বয়স্কদের জন্যও পান্তা মোটেই ভালো নয়। ভাতের চেয়ে পান্তায় পুষ্টি বেশি। নিচে দেওয়া হলো উপকারিতা-

১. পান্তা ভাত খেলে শরীর হালকা থাকে এবং কাজে বেশি শক্তি পাওয়া যায়।

২. মানব দেহের জন্য উপকারী বহু ব্যাকটেরিয়া পান্তা ভাতের মধ্যে বেড়ে যায়।

৩. পেটের পীড়া ভালো হয় এবং শরীরে তাপের ভারসাম্য বজায় রাখে।

৪. কোষ্ঠবদ্ধতা দূর হয় এবং শরীরে সজীবতা বিরাজ করে।

৫. রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে।

৬. অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সবল হয় এবং মেজাজ ভালো থাকে।

৭. অ্যালার্জি জনিত সমস্যা প্রশমিত হয় এবং ত্বক ভালো থাকে।

ইলিশ মাছের পুষ্টিগুণ :
ইলিশ আমাদের মাছের রাজা সেই সঙ্গে এটি পুষ্টিরও রাজা। কারণ এটি সমুদ্রে বা নদীতে থাকায় এর পুষ্টি গুণাগুণ আরও  একটু বেশি অন্যান্য মাছের তুলনায়। ইলিশ মাছে যেসব পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এটি আমাদের শরীরের অনেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো সংক্ষেপে দেওয়া হলো ত্বকের যত্নে:

সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করে ওমেগা ফ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। নিয়মিত মাছ খেলে একজিমা, সোরেসিসের হাত থেকে রক্ষা পায় ত্বক। ইলিশ মাছে থাকা প্রোটিন কোলাজেনের অন্যতম উপাদান। এই কোলাজেন ত্বক নমনীয় রাখতে সাহায্য করে।

ব্রেন : মস্তিষ্কের ৬০ শতাংশই তৈরি ফ্যাট দিয়ে। যার অধিকাংশই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। যারা নিয়মিত মাছ খান তাদের মধ্যে বয়সকালে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক কম দেখা যায়। এদিনের জন্য এই দুটি খাবার খুবই উপযোগী। রোদের তাপ এ যে সমস্যাগুলো হতে পারে তা এই খাবারের কারণে অনেকটা কমে যাবে। সেই সঙ্গে আমাদের ত্বকও রক্ষা পাবে। পয়লা বৈশাখের দিন প্রচুর পানি খাবেন, বেশি ভাজা-পোড়া খাবার খাবেন না। তাই পয়লা বৈশাখের দিন এসব বিষয়ে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।

লেখক: পুষ্টিবিদ, প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট, বনানী, ঢাকা।


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

সর্বশেষ খবর