১ ডিসেম্বর, ২০২০ ২০:৪৯

পরিবেশ রক্ষায় তরুণদের আগ্রহ বাড়াচ্ছে ‘ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল ক্লিনআপ’

অনলাইন ডেস্ক

পরিবেশ রক্ষায় তরুণদের আগ্রহ বাড়াচ্ছে ‘ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল ক্লিনআপ’

অন্য আট-দশ জনের মতোই স্বভাব ছিলো সাদাতের। চিপস-বিস্কুট খাওয়ার পর মোড়ক ফেলতেন যেখানে-সেখানে। প্লাস্টিক বোতল নিয়েও মাথা ঘামানোর সময় ছিলো না। তৃষ্ণা মিটলেই ছুঁড়ে ফেলতেন রাস্তার ধারে। কিন্তু মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে সেই স্বভাব এখন সাদাতকে ছেড়ে পালিয়েছে। পানীয় শেষ হলে তিনি এখন ডাস্টবিন খোঁজেন। আশপাশে ডাস্টবিনের দেখা না মিললে প্যান্টের পকেটে ঢোকান চিপস-বিস্কুটের মোড়ক। জানতে চাইলে নিজের স্বভাব পরিবর্তনের রহস্য উন্মোচন করেন সাদাত আল নাঈম। 

বন্ধুদের কাছে গল্প শুনে বছর দুই আগে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে গিয়েছিলাম সেন্ট মার্টিনে। কেওক্রাডং এবং কোকা-কোলার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল ক্লিনআপ’ কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিলাম শত শত স্বেচ্ছাসেবীর সাথে। কেবল আগ্রহের বসে অংশগ্রহণ করলেও সেই অভিজ্ঞতা তার চোখ খুলে দেয়। সমুদ্র তীর পরিষ্কার করতে গিয়ে প্রথমবারের মতো সে টের পায়, নিতান্ত খাম-খেয়ালিপনার বসে প্রকৃতি ও জীব-জগতের কত বড় ক্ষতি করে চলেছে। সাদাত জানায়, সেদিনই সিদ্ধান্ত নিই, জীবনে আর কখনো যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশের ক্ষতি করবো না।

কেবল সাদাত নন, তার মতো অসংখ্য তরুণের অভ্যাস পরিবর্তনের পাশাপাশি প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় আগ্রহী করে তুলছে কোকা-কোলা বাংলাদেশের পার্টনারশিপে আয়োজিত কেওক্রাডং বাংলাদেশের ‘ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল ক্লিনআপ’ কার্যক্রম। বৈশ্বিক পর্যায়ে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে সমুদ্র তীর পরিষ্কার করার এই কার্যক্রম পরিচালিত হলেও বাংলাদেশে চলছে গত এক দশক ধরে। বিশ্বব্যাপী পার্টনারশিপের অংশ হিসেবে পরিবেশবাদী আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘ওশান কনজারভেন্সি’র এদেশীয় সমন্বয়ক প্রতিষ্ঠান কেওক্রাডং বাংলাদেশের সাথে পার্টনারশিপের ভিত্তিতে গত ৯ বছর ধরে এই কর্মসূচির আয়োজন হয়ে আসছে বাংলাদেশের একমাত্র কোরাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনসে। সেন্ট মার্টিনসের পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় এ বছরও টানা ১০ বারের মতো দ্বীপটিতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও গণসচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তুতি চলছে। 

সারাদেশের প্রায় ৪,০০০ স্বেচ্ছাসেবীর অংশগ্রহণে গত ৯ বছরে সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ থেকে সরানো অপচনশীল সামুদ্রিক আবর্জনার পরিমাণ ইতিমধ্যেই ১০ হাজার ৫শ’ কেজি ছাড়িয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে নিয়মিতভাবে এই পরিচ্ছন্নতা ও জনসচেতনতা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে আসা আরেক তরুণের নাম নাফিস মাঈনুদ্দীন। 

তিনি বলেন, শুরুতে নিছক কৌতুহল বসে অংশ নিলেও পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষার এই কার্যক্রম এখন আমার প্রাত্যহিক জীবনের অংশে পরিণত হয়েছে। আগের মতো এখন আর যেখানে-সেখানে আবর্জনা তো ফেলিই না, বরং আশপাশের কাউকে ফেলতে দেখলে ডেকে বোঝানোর চেষ্টা করি। পরিবেশের প্রতি এরকম ছোটখাটো দায়িত্ব পালন করতে পারলেও অন্তরে শান্তি অনুভব করি। 
      
কোস্টাল ক্লিনআপ কার্যক্রম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে পরিবেশ ও জীব জগতের প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে উঠেছেন আরেক তরুণ উদ্যোক্তা আবির আফজাল। সবুজে সাজিয়েছেন নিজের রেস্তোরাঁ, ভোক্তাদের খাওয়াচ্ছেন ‘অর্গানিক ফুড’। ভেজাল খাদ্য এড়াতে বাড়ির পাশে নিজেই গড়ে তুলেছেন খামার। সেই খামারেই নিজস্ব তত্ত্বাবধায়নে উৎপাদিত হয় মাছ-মাংস-ডিম-সবজি থেকে শুরু করে কাঁচা মরিচ পর্যন্ত।    

তিনি বলেন, বেশ ক’বছর আগে কোস্টাল ক্লিনআপ কার্যক্রমে প্রথম অংশগ্রহণের পর নিজের ভেতর থেকেই পরিবেশ ও মানুষের জন্য কিছু একটা করবো বলে ভাবছিলাম। এমন সময় মাথায় এলো অর্গানিক ফুডের আইডিয়া। খুব বড় আকারে খামার করার মতো জমি কিংবা মূলধন-কোনোটাই আমার নেই। তাই ভাবলাম ছোটোখাটো একটা খামারের পাশাপাশি নিজেই একটা রেস্তোরাঁ দিই। এতে অর্থ রোজগারের সাথে সাথে মানুষেরও কল্যাণ সাধিত হবে, প্রকৃতিও কীটনাশকের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিকের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে। 

বছর সাতেক আগে কোস্টাল ক্লিনআপ কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিলেন সেন্ট মার্টিনসের বাসিন্দা নুসরাত আরা রানী। তখনকার প্রাথমিকের শিক্ষার্থী রানী এখন পড়েন কক্সবাজারের একটি বেসরকারি কলেজে। দুরন্ত শৈশবের স্মৃতিচারণ করে রানী বলেন, ছোটবেলায় একসঙ্গে এতো মানুষকে ময়লা কুড়াতে দেখে আমারও ইচ্ছা হয়েছিলো। বন্ধুরা সবাই মিলে খেলাচ্ছলে সেদিন কাজটা করেছিলাম। তখন এই কাজের গুরুত্ব বুঝতে না পারলেও বড় হবার পর ধীরে ধীরে বুঝতে পারি। নিজ এলাকার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েছি। এখন নিজে সব সময় চেষ্টা করি পরিবেশের ক্ষতি না করতে, বন্ধু-বান্ধবদেরও একই কথা বলি।

পরিবেশ রক্ষায় তরুণদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে ‘ওশান কনজারভেন্সি’র বাংলাদেশি সমন্বয়ক মুনতাসির মামুন বলেন, তরুণরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তাই আগামীতে একটি সুস্থ-সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়তে হলে তাদেরকে আগে সচেতন করতে হবে। কোকা-কোলা বাংলাদেশের পার্টনারশিপে আয়োজিত আমাদের এই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবীদের বেশির ভাগই তরুণ। স্কুল পর্যায়ের বাচ্চাদেরকেও আমরা এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহ দিয়ে থাকি। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, ছোটবেলা থেকেই পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার বিষয়ে তাদেরকে শিক্ষা দেওয়াটা জরুরি। কারণ ছোটবেলার বেশিরভাগ শিক্ষাই মানুষ আজীবন মনে রাখে।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর