দীর্ঘদিন সন্তান না হওয়াকে ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যাত্ব বলে। নিজেরদের জীবনধারার কিছু পরিবর্তন ও সঠিক চিকিৎসা নিয়ে আসতে পারে ঘর আলো করে অনাগত সন্তান।
সন্তান না হওয়ার বিভিন্ন কারণগুলোর মধ্যে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস) অন্যতম। এতে নারীদের মাসিক নিয়মিত (অসহনীয় ব্যথাযুক্ত) বা অনিয়মিত থাকে, ওজন বেড়ে যায় অথবা শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের তারতম্যের কারণে লোমের আধিক্য বেড়ে যায়। শরীরে বেশি পরিমাণে পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরন থাকার ফলে ব্রণ, চুল পড়া, মুখের ও শরীরের চুল ইত্যাদি অনেক লক্ষণ দেখা দেয়।
পলিসিস্টিক ডিম্বাশয়ে যখন ১২ বা তার বেশি পেরিফেরিয়াল ফলিকুলার সিস্ট পাওয়া যায় তখন বন্ধ্যাত্ব, অনিয়মিত বা অস্বাভাবিক মাসিক, ওজন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া, ডায়বেটিসসহ অন্যান্য লক্ষণ এই প্রধান সমস্যার সাথে সম্পর্কিত। তাই প্রজননের জন্য যে ডিমটি বের হওয়ার কথা, সেই ডিম বের হতে পারেনা। এটির হার ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ এবং ভেজাল খাবার, মানসিক চাপের কারণে দিনদিন এই রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলছে।
সন্তান না হওয়ার আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে ইউটেরাস। যেখানে বাচ্চা থাকে বা বড় হয় সেটির দুই পাশে দুটি নল থাকে আমরা সেটিকে বলে ফেডোপেন টিউব। এই ফেডোপেন টিউব ওভারির কাছাকাছি গিয়ে শেষ হয়। ওভারি থেকে ডিম ফেডোপেন টিউবে আসে। সেখানে স্পার্ম গিয়ে ফার্টিলাইজেশন করে। অনেক সময় এই ফেডোপেন টিউব বন্ধ হয়ে যায় আর এটার প্রধান কারণ হলো ইনফেকশন। নারীদের ইনফেকশন বেশি হয় এবং অনেকেই ঠিকমতো এর চিকিৎসা করে না। সে কারণে টিউবটা বন্ধ হয়ে যায়। আর এর ফলে ডিম আসতে পারে না আবার স্পার্মও যেতে পারে না। ফলে বন্ধ্যাত্ব সমস্যা দেখা দেয়।
এছাড়াও, অনেক কারণ বন্ধ্যাত্ব ঝুঁকি বাড়ায়। বর্তমানে নারী ও পুরুষ উভয়ই স্বাবলম্বী না হয়ে বিয়ে করতে চান না। তাই সমাজের নিজের অবস্থান শক্ত করতে বিয়ে করতে একটু দেরি করে ফেলেন অনেক নারী। উভয়ের বয়স ৩৫ পেরিয়ে গেলে বন্ধ্যাত্ব ঝুঁকি বাড়ে। তাই বিয়ের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা করা উচিত।
অতিরিক্ত ওজন বন্ধ্যাত্বর অন্যতম কারণ। তাই রুটিন মেনে খাবার খাওয়া ও প্রতিদিন কম হলেও ৪০ মিনিট বা ৩৫০০ কদম হাঁটুন। অতিরিক্ত ওজন স্পার্মের সংখ্যা কমিয়ে নানাবিধ যৌন সমস্যা দেখা দেয়।
টিউমারের কারণেও স্পার্ম কাউন্ট কমে যায়। তাই জরায়ু টিউমারসহ শরীরের অন্য যেকোন জায়গায় যদি টিউমার দেখা দেয় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ধূমপান ও অ্যালকোহল স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অতিদ্রুত এই বদভ্যাস বর্জন করুন। এর ফলে নারী-পুরুষ উভয়ের যৌন হরমোন ক্ষরণের মাত্রা কমায় ও স্পার্ম কাউন্টও কমিয়ে দেয়। টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমানোর অন্যতম কারণ হচ্ছে অ্যালকোহল।
মানসিক অস্বস্তি, হতাশা ও চাপের কারণে এই সমস্যা হতে পারে। মানসিক অসুস্থতার কারণে স্পার্ম কাউন্ট কমে যায়। তাই হতাশা বা মানসিক চাপ থেকে বিরত থাকুন।
বন্ধ্যাত্বর সমস্যায় অনেক ধরনের চিকিৎসা রয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সুস্থ জীবনধারা মেনে চলতে হবে।
বিডি প্রতিদিন / অন্তরা কবির