মানুষকে মশার উপদ্রব থেকে বাঁচাতে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে ‘প্রজেক্ট মসব্লক’। দরিদ্রদের মাঝে জেব্রার গায়ের রং সাদা-কালো সদৃশ এক বিশেষ পর্দা বা কাপড় বিতরণের মাধ্যমে এ পাইলট প্রকল্প শুরু হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে বিশেষ করে দরিদ্ররা মশাবাহিত রোগ থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।
সম্প্রতি রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে দিনব্যাপী পাইলট প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বস্তিবাসীদের মধ্যে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এক বিশেষ ধরনের পর্দা বিতরণ করা হয়। আকাশ ডিজিটাল টিভি ও গ্রে অ্যাডভারটাইজিং বাংলাদেশ লিমিটেডের সহযোগিতায় শিগগিরই প্রকল্পের ফলাফল পাওয়ার পর এর কার্যকারিতা নিরূপণ করা সম্ভব হবে।
ডব্লিউএইচও-এর গবেষণা অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর ১০-৪০ কোটি মানুষ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়। যেসব দেশ ডেঙ্গুর সর্বাধিক সংক্রমণ তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। কোভিডের কারণে এ রোগ আরও প্রকোপ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে বস্তিবাসীদের জন্য সাম্প্রতিককালে এটি আরও ভয়ংকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সারা দেশে ২৮ হাজার ৪২৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। মারা গেছেন ১০৫ জন। চলতি বছরেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে অনেককে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর এসেছে।
মসব্লক অর্থাৎ জেব্রা প্রিন্টের এই পর্দা কীভাবে মশার হাত থেকে রক্ষা করবে-এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকল্পের এক কর্মকর্তা জানান, ‘সমস্ত প্রাণীদের মধ্যে একমাত্র জেব্রা এমন একটি প্রাণী, যার গায়ে মশা মাছি বসে না। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষকরা আবিষ্কার করেন যে, জেব্রার গায়ে সাদাকালো ডোরাকাটা দাগ মশার চোখে (কম্পাউন্ড আইস) অস্তিত্ব তৈরি করে। ফলে মশা জেব্রার গায়ে গিয়ে বসতে পারে না। বহু আদিবাসী ঠিক এ কারণে তাদের মুখে এবং গায়ে সাদা দাগ এঁকে রাখেন। আমরা হয়তো অনেকেই জিনিসটাকে সেভাবে খেয়াল করি না।
ওই কর্মকর্তা জানান, আমাদের ভাবনা ছিল, আমরা যদি জেব্রা প্রিন্টের পর্দা ঘরের জানালা এবং দরজায় লাগিয়ে দিতে পারি, তাহলে মশা ঘরেও ঢুকতে পারবে না। অভিনব এই পর্দা শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, সমগ্র বিশ্বের মশার সমস্যা দূর করতে সক্ষম বলে বিশ্বাস করেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
‘মসব্লক পর্দা’ তাদের জীবনে কী রকম প্রভাব ফেলতে পারে? এমন প্রশ্নে কড়াইল বস্তির সুহানা বলেন, আমাদের এখানে মশার খুব উৎপাত। মশার কামড়ে সারা গায়ে ঘায়ের মতো হয়ে যায়। ডেঙ্গু জ্বর হয়। ঘরে এই পর্দা লাগানোর পরে এখন অনেক ভালো আছি। মশার উপদ্রব অনেক কমেছে। বাচ্চারা শান্তিতে ঘরে পড়াশোনা-খেলাধুলা করতে পারে। আমরা নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই