৬ অক্টোবর, ২০২২ ০৯:৫৮

শুভ্রতায় সারা দিন

সুন্দর থাকার নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। যে কোনো বয়সেই মানুষ সুন্দর থাকতে পারে। এ জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নিয়মমাফিক জীবনযাপন। তবে সেগুলো হলো- পুষ্টিসম্পন্ন খাবার গ্রহণ, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম এবং রূপচর্চা। এই তিন বিষয় মেনে চললে নিজেকে সুন্দর রাখা সম্ভব। এ জন্য ছোট ছোট কিছু দিকে খেয়াল, আর সামান্য যত্নেই হয়ে ওঠা যাবে অনন্যা।

শুভ্রতায় সারা দিন

* মডেল : রিয়া বর্মণ * ছবি : সাজ্জাদ সাজু

শরতের দুই মাসের আবার দুই রকম মেজাজ। কখনো ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি, কখনো অসহনীয় গরম নিয়ে আসে ভাদ্র। কোথাও কোথাও এ মাস ‘তালপাকা ভাদ্র’ নামে পরিচিত। আবার এ ভাদ্রতেও ঝরে অবিশ্রান্ত বর্ষণ। তবে আশ্বিনে রাত তাড়াতাড়ি আসে। শীতল হতে থাকে আবহাওয়া। এক কথায়- স্বচ্ছ, নির্মল, মায়াবী এক ঋতুর নাম শরৎ। এমন দিনে কাজের প্রয়োজনে আমাদের ঘরের বাইরে যেতে হয়। আর এ সময়ে নিজের দিকে একটু খেয়াল না রাখলে ঘাম আর অস্বস্তিতে খুব সহজেই নিস্তেজ হয়ে পড়তে পারেন। তাই সবার আগে খেয়াল রাখতে হবে কিছু বিষয়ের প্রতি। যে কাজগুলো করলে আপনি সারা দিন সতেজ ও ফুরফুরে অনুভব করবেন-

শরৎ বেলায় শুভ্রতার ছোঁয়া থাকুক দিনের শুরু থেকেই। তাই সকালে বের হওয়ার আগে প্রথমেই গোসল সেরে নিন। এতে আপনি যেমন নিজেকে পাবেন ফুরফুরে মেজাজে তেমনি কাজের শুরুতেই দিনটা হবে প্রাণচঞ্চল। গোসলের পানিতে একফোঁটা গোলাপজল মিশিয়ে নিতে পারেন; এটি আপনাকে প্রশান্তি দেবে।

আর হ্যাঁ, বলা হয় দিনের শুরুর খাবার- সারা দিনের জোগাড়। তাই সকালবেলায় অবশ্যই নাস্তা করে ঘর থেকে বেরোবেন। তবে সকালের নাশতায় ভারী তেল-চর্বি খাবার না রেখে হাল্কা পানীয় যেমন- কমলার জুস কিংবা মিল্ক সেক রাখতে পারেন। এটি আপনাকে একদিকে যেমন মুখরোচক খাবার দিচ্ছে, তেমনি আপনার শরীরকে দিচ্ছে সারা দিনের অ্যানার্জি। এ সময়ের খাবার হবে জলীয় ও হালকা মসলাযুক্ত। অতিরিক্ত তেল-মসলা দেওয়া তরকারি হজমে গ-গোল ও এসিডিটির সৃষ্টি করে। পেট পরিষ্কার না থাকলে তার প্রভাব পড়ে ত্বকে। ফুসকুড়ি, ব্রণ, র‌্যাশ দূরে রাখতে ঝোল তরকারি, সবজি, ডাল ও পর্যাপ্ত পরিমাণ সালাদ খান। ফল, সবজি ও সালাদ শরীরে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে; পেট পরিষ্কার রাখে এবং কর্মক্ষম রাখে শরীর। এ ছাড়া সারা বছর শরীর ও ত্বক সুস্থ রাখতে পানির বিকল্প নেই। গরমে ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়। সারা দিনে ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করুন। সম্ভব হলে বেশি পানি খেতে ভালো না লাগলে ডাবের পানি, চিনি ছাড়া ফলের রস, ছানার পানি, টকদইয়ের ঘোল খেতে পারেন।

ভাদ্র-আশ্বিন এই দুই মাস মিলিয়ে শরৎকাল। তবে আশ্বিনের তুলনায় ভাদ্রে গরমের মাত্রা একটু বেশি হলেও রাতের দিকে তাপমাত্রা কমতে থাকে। শরতে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির খেলায় আমাদের পোশাকও হতে হবে বৈচিত্র্যময়। এ সময় সুতি, ভয়েল, অ্যান্ডি কটনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কোটা ও ধুতি কাপড়ও রয়েছে তালিকায়। সুতি, লিনেন আর তাঁতে বোনা ফেব্রিকে অনায়াসেই আরাম খুঁজে পাবেন এই সময়ে। মসৃণ ফেব্রিক এ সময়ে শরীরে দেবে স্বস্তি। এই ঋতুতে বেশির ভাগ মেয়েরা বেছে নেয় শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ। যেটাই বেছে নেন না কেন, তা যেন আরামদায়ক ও হালকা রঙের হয়। এ সময় সাদা রঙের কাপড় হাল্কা গরমে বেশি পরতে পারেন; তবে কালো রঙের কাপড় না পরাই ভালো। এ সময় বেঁধে রাখা চুল ছেড়ে রাখার চেয়ে ভালো। এতে আপনার গরম তুলনামূলকভাবে কম লাগবে। এ গরমে কোথাও যেতে খোঁপা কিংবা পলিটেইল খুব সহজেই মানিয়ে যাবে।

এ ঋতুতে ত্বক ঘেমে যাওয়ার সমস্যা কম-বেশি সবার ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। এ ছাড়া ত্বকে র‌্যাশ, চামড়া ওঠা কিংবা লালচে ভাব এ সময়ে প্রায়ই চোখে পড়ে। তাই ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে সানক্রিম ব্যবহার করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে ত্বকের ওপর নির্ভর করে সানক্রিমের মাঝেও পার্থক্য আছে। সেনসিটিভ, ওয়েলি কিংবা রুক্ষ ত্বকসহ সব ত্বকের জন্য এক ধরনের সানক্রিম ব্যবহার করা উচিত না। এতে ত্বকে সঠিকভাবে সানক্রিম কাজ করে না। তাই ত্বক বুঝে ব্যবহার করতে হবে। অনেকেই গরমে ঘামের জন্য সানক্রিম ব্যবহার করতে চান না। বরং এ সময় আরও বেশি সানক্রিম ব্যবহার করা প্রয়োজন। অন্যদিকে সানক্রিম ব্যবহার না করলে ত্বকে কালো দাগ আর তা থেকে ব্রণের মতোও সমস্যা তৈরি হয়ে থাকে। অন্যদিকে সানক্রিমের পাশাপাশি ফেসিয়ালও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ত্বকের যত্নে। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে দিনে দুইবার ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে যাতে লোমকূপে ময়লা না জমতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে ন্যাচারাল ফেসিয়াল সবচেয়ে ভালো ত্বকের যত্নে। পাশাপাশি শরৎ বেলায় চুলের যত্নে তেলের বিকল্প নেই। প্রতিবার শ্যাম্পু করার আগে পাঁচ মিনিট ওয়েল ম্যাসাজ করে নিতে হবে। এতে চুলে পুষ্টি মেলে। চাইলে আপনি কন্ডিশনার করে নিতে পারেন। তবে তা যেন চুলের গোড়ায় না পৌঁছে, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।

নিত্যদিনের টিপস...

* বাইরে বের হওয়ার আগে নরম সুতি কাপড়ে বরফের টুকরা জড়িয়ে নিন। হাল্কাভাবে মুখে ঘষুন। মুখের ত্বক বেশ স্পর্শকাতর হয়। তাই ত্বকে সরাসরি বরফ না ঘষাই ভালো। এরপর সানস্ক্রিন লাগান। সানস্ক্রিনের ওপর ব্রাশ দিয়ে কমপ্যাক্ট বা লুজপাউডার লাগান। দীর্ঘ সময় সতেজ থাকবে ত্বক।

* নিমপাতা সিদ্ধ করে পানি বোতলে ভরে ফ্রিজে রাখুন। গোসল শেষে দুই মগ পানিতে এক গ্লাস নিমপাতা সিদ্ধ পানি মিশিয়ে গায়ে ঢালুন। ঘামের দুর্গন্ধ অনেক কম হবে। আর যে কোনো ত্বকের সমস্যা দূরে থাকবে।

* আইস বক্সে ডাবের পানি দিয়ে বরফ বানিয়ে রাখুন। বাইরে থেকে ফিরে প্রথমে মুখ ফেসওয়াশ দিয়ে ধুয়ে নিন। ডাবের আইস কাপড়ে জড়িয়ে মুখে ও হাতের খোলা অংশে ঘষুন। রোদে পোড়া দাগ হবে না।

* সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে বাঁচতে কমপক্ষে এসপিএফ ৪০ সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। ঘামরোধক সানস্ক্রিন ব্যবহার করাও জরুরি, কারণ এতে ত্বক সতেজ থাকবে ও চিটচিটে হবে না। সূর্যালোকে দুই ঘণ্টার বেশি সময় থাকলে আবারও সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। পানিতে নামলে পানিরোধক সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে এবং তা বাইরে যাওয়ার আধাঘণ্টা আগেই মেখে নিতে হবে। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ঠোঁট শুষ্ক ও পানিশূন্য করে ফেলে। লিপ বাম ব্যবহার ঠোঁটকে সূর্য থেকে রক্ষা করে।

এমন দিনে কেমন মেকআপ

এমন দিনে কোনো প্রকার আয়োজন ব্যতীত ত্বকে মেকআপ ব্যবহার না করা ভালো। এতে করে ত্বক ‘শ্বাস’ নিতে পারে। প্রয়োজন হলে ৪ ঘণ্টা পরপর মেকআপ তুলে ত্বকে ভালোভাবে ক্রিম লাগান। এরপর এভাবেই অন্তত ৩০ মিনিট রাখলে ভালো। এরপর দরকার হলে আবার হালকাভাবে মেকআপ লাগাতে পারেন।

 লেখা : ফেরদৌস আরা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর