১৮ মে, ২০১৯ ১৩:৪৭

লোকসভার শেষ দফায় ভোট কাল

দীপক দেবনাথ, কলকাতা :

লোকসভার শেষ দফায় ভোট কাল

সংগৃহীত ছবি

ভারতে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে ইতিমধ্যেই ৪৮৩ টি কেন্দ্রে নির্বাচন শেষ হয়েছে। বাকী রয়েছে একটি মাত্র দফা। রাত পোহালেই সপ্তম তথা শেষ পর্বে দেশের আটটি রাজ্যের ৫৯ আসনে ভোটগ্রহণ হবে। আগামীকাল রবিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া শেষ দফার ভোটে মোট ভোটারের সংখ্যা ১০ কোটির কিছু বেশি। ভাগ্য নির্ধারণ হবে মোট ৯১৮ জন প্রার্থীর। 

এই তালিকায় কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির প্রার্থী তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার মন্ত্রিসভার একাধিক মন্ত্রীরা যেমন আছেন তেমনি রয়েছেন লোকসভার সাবেক স্পীকার তথা কংগ্রেস প্রার্থী মীরা কুমারের মতো প্রার্থীরাও। একাধারে উত্তরপ্রদেশ (১৩), পাঞ্জাব (১৩), পশ্চিমবঙ্গ (৯), বিহার (৮), মধ্য প্রদেশ (৮), হিমাচল প্রদেশ (৪), ঝাড়খন্ড (৩), চন্ডীগড় (১) টি আসনগুলো এ ভোট গ্রহণ হবে। বাকি থাকবে শুধুমাত্র ভেলোর লোকসভা কেন্দ্রটি। রুপি দিয়ে ভোটারদের প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ওঠায় রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপে সেখানে ভোট বাতিল হয়ে যায়।  

এই দফায় অন্যতম নজরকাড়া লোকসভা কেন্দ্র হল উত্তরপ্রদেশের ‘বারাণসী’। এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী হিসাবে লড়াই করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী অজয় রাই, সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টির জোট প্রার্থী হয়েছেন শালিনী যাদব। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদি গত ১৫ বছর পর কোন লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে থাকাকালীন অবস্থায় অটল বিহারী বাজপেয়ীই ২০০৪ সালে শেষবার লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু এরপর মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকলেও ওইসময় তিনি লোকসভা নির্বাচন লড়াই করেননি কারণ তিনি ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ। মোদির আগে ভারতের সাতজন প্রধানমন্ত্রী পুনরায় লোকসভা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। যার মধ্যে অন্যতম জওহরলাল নেহেরু, ইন্দিরা গান্ধী, চরণ সিং, রাজীব গান্ধী, চন্দ্রশেখর, নরসিমা রাও, অটল বিহারী বাজপেয়ী।  

বারাণসী ছাড়াও বিহারের পাটনা সাহিব কেন্দ্রেও এবার সকলের নজর থাকবে। এই কেন্দ্রে গতবারের জয়ী সাংসদ বিজেপির শত্রুঘ্ন সিনহা সম্প্রতি দল বদল করে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। এবার এই কেন্দ্রে তাকেই প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। আর বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ।

বিহারের সাসারাম কেন্দ্রে এবারও কংগ্রেসের প্রার্থী মীরা কুমার। ২০০৪ ও ২০০৯ সালে এই আসনটি থেকে পরপর দুইবার জিতলেও ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী চেড্ডি লাল পাসওয়ানের কাছে পরাজিত হন মীরা। আরা কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় শক্তি প্রতিমন্ত্রী রাজ কুমার সিং।

এছাড়াও উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী মনোজ সিনহা। রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের গড় বলে পরিচিত গোরখপুর কেন্দ্রে এবার বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন ভোজপুরী অভিনেতা রবি কিষাণ। মির্জাপুর কেন্দ্রে এনডিএ শরিক আপনা দল প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী অনুপ্রিয়া সিং প্যাটেল।

পাঞ্জাবের আনন্দপুর সাহিব কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী ও সাবেক মন্ত্রী মণিশ তিওয়ারি। হোশিয়ারপুর কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় ন্যায় বিচার ও ক্ষমতায়ন প্রতিমন্ত্রী বিজয় সমপলা। গুরুদাসপুর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী অভিনেতা সানি দেওল। ফিরোজপুর কেন্দ্রে পাঞ্জাবের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী ও শিরোমণি আকালি দল (এসএডি) প্রার্থী সুখবীর বাদল। ভাতিন্ডা কেন্দ্রে বাদলের স্ত্রী তথা ও কেন্দ্রের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী হরসিমরাত কউর বাদল। অমৃতসর কেন্দ্রে আরেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী (গৃহায়ণ প্রতিমন্ত্রী) হরদীপ পুরি। 

হিমাচল প্রদেশের হামিরপুর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী তথা ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট অনুরাগ সিং ঠাকুর। চন্ডীগড় কেন্দ্রে বর্তমান সাংসদ বিজেপি প্রার্থী অভিনেত্রী কিরণ খের, এই কেন্দ্রেই কংগ্রেসের প্রার্থী সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি.কে.বনসাল।    

পশ্চিমবঙ্গে যে নয়টি আসনে এধাপে ভোট নেওয়া হবে সেগুলি হল-কলকাতা দক্ষিণ ও কলকাতা উত্তর, যাদবপুর, দমদম, বারাসত, বসিরহাট, জয়নগর, মথুরাপুর, ডায়মন্ডহারবার। মোট ভোটার প্রায় ১.৫ কোটির কাছাকাছি। নয় কেন্দ্রে মোট প্রার্থী রয়েছে ১১১ জন। নজর থাকবে ডায়মন্ডহারবার, দমদম, দক্ষিণ কলকাতা ও যাদবপুর কেন্দ্রের দিকে। ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ভাতিজা অভিষেক ব্যনার্জি। দমদম কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী সাবেক কেন্দ্রীয় নগরায়ণ প্রতিমন্ত্রী সৌগত রায়, তার বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী সাবেক বিধায়ক সমীক ভট্টাচার্য। ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে এই কেন্দ্রে বিজেপি জয় পেলেও ২০০৪ সাল থেকে এটি তৃণমূলের দখলে। নজর থাকবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির একসময়ের কেন্দ্র ‘কলকাতা দক্ষিণ’এর দিকেও। এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী চন্দ্র কুমার বসু (স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর নাতনি), তৃণমূলের প্রার্থী মালা রায়। যাদবপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের নবাগত প্রার্থী অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী, বিজেপি প্রার্থী তৃণমূল থেকে আসা বর্তমান সাংসদ অনুপম হাজরা, সিপিআইএম প্রার্থী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বসিরহাট কেন্দ্রে তৃণমূলের আরেক অভিনেত্রী প্রার্থী নুসরত জাহান, তার বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু। গতবার এই নয়টি কেন্দ্রেই জয়ী হয়েছিল তৃণমূলের প্রার্থীরা। কিন্তু এবার একাধিক কেন্দ্রে তৃণমূলকে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির শক্ত লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে পারে। 
দেশজুড়েই শেষ দফার নির্বাচন ক্ষমতাসী দল বিজেপি ও বিরোধী-উভয়ের কাছেই খুব গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই ৫৯ টি আসনের মধ্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট পায় ৪০ টি আসন। এরমধ্যে বিজেপি একাই জয় পায় ৩৩ টি আসনে। তৃণমূল-৯ টি, আপ-৪টি, কংগ্রেস-৩টি, ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)-২টি, জনতা দল ইউনাইটেড-১টি আসনে জয় পায়।  

১৯ মে সপ্তম দফার মধ্যে দিয়েই শেষ হবে গত ৩৯ দিন ধরে চলা বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসবের।এ নির্বাচনে শেষ হাসিটা কে আসবে-তা জানা যাবে ২৩ মে। যদিও শেষ দফার নির্বাচন শেষ হওয়ার পরই বিভিন্ন জরিপ থেকে পরবর্তী সরকার কে গড়তে চলেছে-তার হয়তো একটা আগাম আভাস পাওয়া যেতে পারে।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর