১৫ আগস্ট, ২০২২ ১৯:০৩

'ইতিহাসে ১৫ আগস্ট জাতির ললাটে বিশ্বাসঘাতকের কলঙ্ককালিমা লেপন করেছে'

নিজস্ব প্রতিবেদক

'ইতিহাসে ১৫ আগস্ট জাতির ললাটে বিশ্বাসঘাতকের কলঙ্ককালিমা লেপন করেছে'

মোস্তাফা জব্বার (ফাইল ছবি)

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ১৫ আগস্টের হৃদয়বিদারক ঘটনা বাঙালি জাতির ললাটে ইতিহাসে বিশ্বাসঘাতকের জাতির কলঙ্ককালিমা লেপন করেছে। বঙ্গবন্ধু নিজের জীবনের সব সাধ-আহলাদকে বিসর্জন দিয়ে, বৈরী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং কারাগারে অধিকাংশ জীবন কাটিয়ে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন একটি জাতি; সেই জাতিরই কিছু কুলাঙ্গারের হাতে সপরিবারে নিহত হওয়ার নজির বড়ই বেদনাদায়ক ও নির্মম! 

তিনি বলেন, অকৃতজ্ঞই নয়, এ কৃতঘ্নতা। বিদেশে থাকার কারণে সৌভাগ্যক্রমে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশকে মৌলবাদী পাকিস্তানপন্থী তাঁবেদার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। আর অপরদিকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার উদ্দেশ্য ছিল ১৯৭৫ সালে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যা করে তাদের সেই অপূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা। ১৫ আগস্ট, ২১ আগস্ট, তেশরা নভেম্বরের রক্তের প্রবাহ মাস্টার দা সূর্যসেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, তিতুমীর আর হাজী শরিয়ত উল্লাহর রক্ত প্রবাহ এক হয়ে মিশে আছে। 

আজ ঢাকায় জিপিও মিলনায়তনে জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের  ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিটিআরসির'র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফয়জুল আজিম এবং বিটিসিএল'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. রফিকুল মতিন বক্তব্যে রাখেন। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা ল্যাফট্যানেন্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের দৃঢ়তার বিভিন্ন ঘটনাবলী তুলে ধরেন। 

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধের ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়েও বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি কাঠামো দাঁড় করিয়েছেন, প্রাথমিক ও কারিগরি শিক্ষার উপর জোর দিয়েছিলেন, পরমাণু শক্তি কমিশন গঠন, টিএন্ডটি বোর্ড স্থাপন করেছেন, উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র স্থাপন করেছেন। কুদরত-ই-খোদা শিক্ষা কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষার আমূল পরিবর্তনের সূচনা করে ছিলেন। দেশের প্রায় প্রতিটি সেক্টরকে যুগের চাহিদা মেটানোর উপযোগী করে গড়ে তোলার উদ্যোগ তিনি গ্রহণ করেন। বস্তুতপক্ষে একবিংশ শতাব্দির আজকের জীবনযাপন এবং ৪১ সালে যেখানে বাংলাদেশ পৌঁছাবে তার বীজবপন করে গেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাড়ে আঠারো বছরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ বেয়ে তা অংকুরিত করে বৃক্ষে রূপান্তরিত করেছেন। 

মোস্তাফা জব্বার বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা তুলে ধরে বলেন, ইয়াহিয়া খানের লিগ্যাল ফ্রেম ওয়ার্কের অধীনে অভ্যন্তরীণ বিরোধীতা সত্ত্বেও সত্তরের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছিল বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্তের ফসল। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধকে বিচ্ছিন্ন আন্দোলন বলার সুযোগ ছিল না। সত্তরের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নিরঙ্কুশ বিজয়ে পুরো দেশের সকল জনতা এক হবার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাঙালির এই যুদ্ধে ব্যাপক সমর্থন লাভ করে।  

ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব বঙ্গবন্ধুকে জানতে নতুন প্রজন্মের জন্য বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীসহ বঙ্গবন্ধুকে অধ্যয়ন করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, তার মতো একজন মহান নেতার জন্ম হয়েছিল বলেই আজ আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। তিনি বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন এবং তার দৃঢ় নেতৃত্বের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধুর কাছে আমাদের ঋণের শেষ নেই। 

বিটিআরসি‘র চেয়ারম্যান, ১৯৪৭ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাত তুলে ধরে বলেন, আমরা ভাগ্যবান জাতি কারণ আমরা বঙ্গবন্ধুর মতো একজন নেতা পেয়েছি।

মুখ্য আলোচক বীর মুক্তিযোদ্ধা ল্যাফট্যানেন্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুর বন্দী অবস্থায় এবং সেখান থেকে মুক্তি লাভের নেপথ্যের বিভ্ন্নি হৃদয়স্পর্শী ঘটনাবলীসহ বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি জীবনের অজানা বর্ণাঢ্য বিভিন্ন ঘটনাবলী তুলে ধরেন। 

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে সত্যিই এ দেশের মানুষ অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছিল। যার যা ছিল তারা তাই দিয়ে যুদ্ধে সাহায্য করেছে। তিনি দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেন, একজন বিধবা তার একমাত্র শিশু সন্তানকে মুক্তিযুদ্ধ যোগ দেওয়ার জন্য তার হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলেন, ‘বাবা আমি গরীব মানুষ, আমার দেওয়ার মতো কিছু নেই। আমার এই সন্তানটিকে তোমাদের সাথে যুদ্ধে নিয়ে নাও- আমার এই সম্পদটিকে তোমার হাতে তুলে দিলাম’। মায়ের এই আকুতি বঙ্গবন্ধুর প্রতি মানুষের ভালোবাসার এটি একটি ছোট্ট দৃষ্টান্তমাত্র। 

এর আগে সকালে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে  ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও এর অধীন সংস্থাসমূহের পক্ষ থেকে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে মন্ত্রী জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকায় বেসিস সদর দপ্তরে বেসিস আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। 

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর